পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
যে কোনও রাজ্য বা দেশের আর্থিক উন্নতির অন্যতম প্রধান এবং প্রাথমিক শর্ত, শিল্পের বিকাশ। সিঙ্গুরে টাটাদের গাড়ি কারখানা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির সময় থেকে প্রয়াত শিল্পমন্ত্রী নিরুপন সেন বলতেন, শুধু কৃষির উন্নতি করে কোনও রাজ্য বা দেশ এগতে পারে না। তার জন্য শিল্প গড়তে হবে। তাঁর এই ভাবনার সঙ্গে সকলে একমত হলেও বিরোধ বেধেছিল শিল্পের জন্য উর্বর কৃষি জমি নেওয়ায়। আজ যিনি মুখ্যমন্ত্রী, তিনিই তখন ছিলেন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেত্রী। জোর করে চাষিদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনিই ছিলেন সামনের সারিতে। সেই কারণে সিঙ্গুর থেকে পিছু হটতে হয়েছিল টাটাদের। তার জন্য তাঁর গায়ে শিল্প বিরোধী তকমা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টার খামতি ছিল না। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এরাজ্যে শিল্প আনার বা শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটানোর কাজটা আক্ষরিক অর্থেই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তাঁর শাসনকালের মেয়াদ আট বছর উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে রাজ্যের কোথাও জমি নেওয়ার জন্য জোর খাটানোর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু, শিল্পস্থাপনে জমি যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তার জন্য তৈরি করেছেন ল্যান্ড ব্যাঙ্ক। শীতকাল তো দূরের কথা, ভরা গ্রীষ্মেও লোডশেডিংয়ের দেখা মেলে কালেভাদ্রে। শ্রমিকদের পাওনাগণ্ডা নিয়ে মালিকপক্ষকে চড় থাপ্পড় খেতে হয় না, সমস্যা মেটে আলোচনার টেবিলেই। তাঁর দলের কোনও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বেয়াদপি করেননি, এমনটা নয়। কিন্তু নজরে এলেই ধমকে সিধে করার নজিরও আছে। তাই বাংলাকে বদলে দেওয়ার দাবি মুখ্যমন্ত্রী করতেই পারেন।
প্রয়াত জ্যোতি বসুও শিল্পের কথা বলতেন। শিল্পপতিদের আনার নামে তিনি কার্যত রুটিন করে বিদেশে যেতেন। শিল্পপতি ধরে আনার জন্য তাঁর ঘন ঘন বিদেশযাত্রা একটা সময় রসিকতার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল। বাম জমানায় এরাজ্যে শিল্প বলতে যা হয়েছিল, তার বেশিরভাগই স্পঞ্জ আয়রন বা ফেরো আয়রন জাতীয় কারখানা। ইউরোপের দেশগুলি দূষণ সৃষ্টিকারী স্পঞ্জ আয়রন জাতীয় কারখানা নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় তার কিছু উচ্ছিষ্ট আমরা পেয়েছিলাম। এই সব কারখানায় যত না কর্মসংস্থান হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি দূষণ সৃষ্টি হয়েছে।
একথা ঠিক, শিল্পপতিরা শিল্প গড়েন মুনাফার কথা মাথায় রেখে। তাঁদের বেশিরভাগই সর্বাধিক সরকারি সুযোগ পেতে চান। তারপর যদি সেখানে মুনাফার সুযোগ থাকে, তবেই বিনিয়োগ। তা না হলে নয়। তাই পরিকাঠামো, সুযোগ এবং পরিবেশই নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীঘায় ‘বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভে’ দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের সামনে বাংলার সেই বদলে যাওয়ার ছবিটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। শিল্পপতিরা তাঁদের অভিজ্ঞতার আলোয় সেই দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখে ৬ হাজার কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাবের সবটাই কার্যকরী হবে, এমনটা আশা করা যায় না। কিন্তু, কিছুটা বাস্তবায়িত হলেও রাজ্যের মঙ্গল। কারণ সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে জিডিপি ক্রমশই নিম্নমুখী। পাল্লা দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী বেকারত্ব। সেক্ষেত্রে এরাজ্যে নতুন বিনিয়োগ হলে মঙ্গল রাজ্য তথা রাজ্যবাসীর।