বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
যক্ষ্মার জীবাণু আবিষ্কার ছিল একটি যুগান্তকারী সাফল্য। তার ভিত্তিতেই একে একে আবিষ্কার হয়েছে টিকা, ইঞ্জেকশন এবং খাবার ওষুধ। কম সময়ের এবং অত্যন্ত কার্যকরী ‘ডটস’ চিকিৎসা পদ্ধতিও এসেছে। টিবির মধ্যে ভয়ঙ্কর হল মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (এমডিআর)। মানে কোনও কোনও টিবি রোগীর ক্ষেত্রে একাধিক ওষুধ কাজই করে না। ফলে তাদের সারিয়ে তোলা যায় না। এখনকার ওষুধ এই ধরনের জটিল টিবিকে পরাস্ত করতে পারছে। তা সত্ত্বেও ১৮৮২-২০১৭ পর্যন্ত হিসাবটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই সময়ের ভিতরে সারা পৃথিবীতে ২০ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ টিবি। টিবির জীবাণু আবিষ্কারের দিনটি ছিল ২৪ মার্চ। দিনটিকে মহিমান্বিত করে রাখার উদ্দেশ্যে ‘বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস’ পালন করা হয়। কয়েক দশক যাবৎ ভারতেও যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লাগাতার যুদ্ধ জারি আছে। তারপরেও কিন্তু আমাদের অস্বস্তি রয়ে গিয়েছে। বুধবার নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানান, ভারতের ৩৫ শতাংশ মানুষের শরীরে টিবির জীবাণু রয়েছে। তার মধ্যে ১০ শতাংশ শেষমেশ এই রোগের শিকার হয়ে পড়ে! পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি অগ্রণী রাজ্যেও চিহ্নিত টিবি রোগীর সংখ্যা লক্ষাধিক!
তার মধ্যেও সুখের কথা জানিয়েছে ‘ইন্ডিয়া টিবি রিপোর্ট ২০১৯’: ২০১৭ সালের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি রোগীর নাম ২০১৮-তে হাসপাতালে নথিভুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সচেতনা বেড়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। ২০১০-এর সাপেক্ষে ২০১৮-য় টিবিতে মৃত্যুর হার ৮২ শতাংশ কমেছে। এই সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারতকে ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত করার অঙ্গীকার করেছে সরকার। যেখানে ২০৩০ সালের ভিতর বিশ্বকে যক্ষ্মামুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে সেখানে সরকারের এই দৃঢ় দৃপ্ত ঘোষণায় দেশবাসী নিঃসন্দেহে খুশি। তবে, মনে রাখতে হবে এই ব্যাপারে দেশবাসীর সহযোগিতাও সমান কাম্য। রোগটি লুকোলেই সর্বনাশ! রোগলক্ষণ বুঝতে পারা মাত্রই উপযুক্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া কর্তব্য। নির্দিষ্ট টেস্ট এবং পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়া দরকার। এই ওষুধ খাওয়ায় কোনোরকম ছেদ পড়া ঠিক নয়। যতদিনের কোর্স ঠিক ততদিন এবং কোনোরকম গাফিলতি ছাড়াই খাওয়া দরকার। অন্যথায় রোগটি সারতে দেরি হয় কিংবা চাপা পড়ে যায়। তার থেকে অন্যরা সংক্রামিত হতে পারে। টিবি রোগীকে নিয়ে অনাবশ্যক ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। চিকিৎসা শুরু হয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট রোগীর থেকে সংক্রমণের কোনও ভয় থাকে না। সুতরাং সবধরনের সচেতনতাই জরুরি। সরকারি তথ্য বলছে, ২৫ শতাংশ মানুষ বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নেয়। কেন্দ্র তাদেরও চিকিৎসা খরচ বহনের কথা ঘোষণা করেছে। যাবতীয় ওষুধ তো দেবেই, ওইসঙ্গে উপযুক্ত পথ্য গ্রহণের জন্য তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে দেবে ৫০০ টাকা। দেখতে হবে—সরকারের এই ঘোষণা যেন কেবল কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ না-থাকে; এনিয়ে কোনও রাজনীতিও না-হয় কোথাও। ঘোষণা অনুযায়ী কর্মসূচিটি এগলে ভারত সত্যিই এক বিরাট বিপদ থেকে মুক্ত হবে। এই জয় যে-কোনও যুদ্ধজয়ের থেকেও মহৎ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে।