বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
আমাদের আকাঙ্ক্ষা প্রার্থনা আকুল আহ্বানে মৃন্ময়ী মূর্তি চিন্ময়ী হয়ে ওঠেন। তিনি আবার মৃন্ময়ী হয়ে যান। মাটির পৃথিবীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আনন্দ উপভোগ করেন দেবী স্বয়ং। আমরা জানি, তাঁকে চাওয়ার, তাঁকে পাওয়ার অপার আনন্দ আবহমানকালের করে রাখতেই এই নিয়ম তাঁর। পূজা উৎসব সাঙ্গ হলে শোভাযাত্রা সহকারে মাটির প্রতিমা নিরঞ্জনই নিয়ম। কিন্তু, নদীতে পুকুরে এই বিসর্জন দেওয়া নিয়েই আমাদের ভ্রু কুঁচকে গিয়েছে। কারণ, নির্বিচারে মাটির প্রতিমা বিসর্জনে জলদূষণের আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছে। প্রতিমায় পরিবেশ-বান্ধব রং ব্যবহারের নির্দেশ সকলে মানে না। প্রতিমায় ব্যবহৃত রঙে থাকে সিসা। এছাড়া থাকে ফুলমালা, শোলার অলঙ্কার প্রভৃতি। ধাতব অস্ত্রশস্ত্র অবশ্য খুলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। গঙ্গার মতো বড় নদীগুলিতে, যেখানে নিয়মিত জোয়ার-ভাটা খেলে সেখানে পরীক্ষায় দূষণের মাত্রা খুব বেশি হয়তো ধরা পড়ে না। তবুও শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, সিসার দূষণ কোনোভাবেই উবে যাওয়া সম্ভব নয়। জলের কোনও-না-কোনও স্তরে তা থেকেই যায়। এছাড়া মূর্তিতে ব্যবহৃত মাটি নদীর পলি বৃদ্ধি করে। কলকাতা পুরসভা অবশ্য গঙ্গায় বিসর্জিত প্রতিমার কাঠামো দ্রুত জল থেকে তুলে ফেলার ব্যবস্থা করে। পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠকের মাধ্যমেও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ কয়েক বছর আগে থেকেই নেওয়া হয়েছে।
তবুও উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার। তারা চায়, গঙ্গাসহ কোনও নদীতেই যেন প্রতিমা ভাসান দেওয়া না-হয়। ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা-র পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গসহ ১১টি রাজ্যকে চিঠি দিয়ে এই ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এমনকী নদীর পাড়েও প্রতিমা রেখে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা। এই নির্দেশ অমান্যকারীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথাও তারা বলেছে। এই নির্দেশ শুধু দুর্গোৎসব উপলক্ষে দেওয়া হয়নি—প্রযোজ্য গণেশ, বিশ্বকর্মা, কালী, ছট, সরস্বতী প্রভৃতি পুজোর ক্ষেত্রেও। এই নির্দেশ কোথায় কতটা মানা হল তার বিস্তারিত রিপোর্টও দাবি করা হয়েছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর জারি হওয়া এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে স্বভাবতই সংশ্লিষ্ট মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বিসর্জন কোথায় দেওয়া হবে?
নদীসহ জলদূষণের বিপদ কোন মাত্রায় পৌঁছেছে তার ব্যাখ্যা আজ নিষ্প্রয়োজন। আমরা সকলে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। একসময় বেশিরভাগ নদী সমৃদ্ধ জলপথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তার মধ্যে গঙ্গার নাম সর্বাগ্রগণ্য। গঙ্গা বস্তুত ভারতের প্রাণ। সেই নদী আমাদের সম্মিলিত পাপে দেশের বৃহত্তম ড্রেনে পরিণত হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। অনেক নদী মাঠ ময়দানের চেহারা নিয়েছে। আবার কোনও কোনও নদী সর্বার্থে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। এর ফলে আমাদের সমস্যা বেড়েছে নানাবিধ। নিকাশি সমস্যা মাত্রাছাড়া হয়েছে। বেড়েছে বন্যার প্রকোপ। সেচের জলের সমস্যা বেড়েছে। কৃষিপ্রধান দেশের সামনে এর চেয়ে বড় বিপদ কী হতে পারে? মাটির নীচের জলভাণ্ডারে টান পড়েছে। পানীয় জলের সঙ্কট দেশজুড়ে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। দূষিত জল থেকে বাড়ছে চর্মরোগসহ নানান অসুখ বিসুখ। তাই শুধু আইন আর সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রতীক্ষায় থাকার দিন শেষ। এই ব্যাপারে সরকারি তরফে গাফিলতি থাকল কি না সে প্রশ্নও অবান্তর। আমাদের সজাগ সতর্ক থাকতে হবে নিজেদের স্বার্থে। কে না জানে ‘জলের অপর নাম জীবন’! আর যাই হোক জীবনের সঙ্গে প্রতারণা করা চলে না। জীবনকে সুন্দর করাতেই উৎসবের সার্থকতা। তাই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব উদযাপনের সমাপ্তি মধুর করে তুলতে আমরা সতর্ক সচেতন হতে যেন এতটুকুও কুণ্ঠা না-রাখি।