দেবীপক্ষ চলছে। পুজোও এসে গেল। বাঙালির মহাপুজোর মহোৎসব শুরু হচ্ছে রাজ্যজুড়ে। মনে প্রাণে উৎসবে আবেগে উচ্ছ্বাসে মানুষ এই সময় গা ভাসাতে চাইলেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই আম জনতা। একদিকে পুজোর মুখে লাগাতার বৃষ্টি যেমন দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বিশেষত আনাজপাতির অগ্নিমূল্য মানুষকে চিন্তায় ফেলছে। বৃষ্টির কারণে সব্জি পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। সেক্ষেত্রে দাম যে আরও বাড়বে না তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। অন্যান্য জিনিসের দামবৃদ্ধির কথা বাদ দিলেও শুধুমাত্র পেঁয়াজের দামের ঝাঁজে চোখে জল আসার জোগাড়। মূলবৃদ্ধি বাগে আনতে সরকার যে ব্যর্থ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কারণেই এবার জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পথে হাঁটল তারা। সেইসঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে পেঁয়াজ মজুদের ঊর্ধ্বসীমা। বাজারে পেঁয়াজের জোগান বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু শুধুমাত্র পেঁয়াজ দিয়ে তো আর সাধারণ মানুষের দিনগুজরান হয় না। মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারের পদক্ষেপটাই আসল কথা। সেক্ষেত্রে সরকার কী ভূমিকা নেয়, সেটাই দেখার। কারণ, যেভাবে প্রায় সবকিছুরই দাম বেড়ে চলেছে তাতে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়ছেন প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকরা। অবসরগ্রহণের পর তাঁরা যেটুকু অর্থ পেয়েছেন তা ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে রেখে সেই টাকার সুদে সংসার চালানোটা সত্যিই মুশকিল। কারণ, সেই সুদের টাকার অঙ্কেও কোপ বসছে বার বার। অন্যদিকে, মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখা যে যথেষ্ট ঝুঁকির সেটা না-বোঝার কথা নয়। যখন এমন একটা পরিস্থিতি চলছে তখন পুজোর মুখে প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে উদ্যোগী হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ২০১৬ সালের পর থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য বাড়তি একটা লক্ষ্মীলাভের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাড়বে তাঁদের ন্যূনতম পেনশনও। এই মাগ্গিগণ্ডার বাজারে তাঁদের জন্য পেনশন বৃদ্ধিটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। তাই, এটা সুখবরই বটে।
পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে বামফ্রন্ট সরকার রাজ্য সরকারি কর্মীদের সর্বোচ্চ গ্র্যাচুইটির পরিমাণ আড়াই লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ লক্ষ টাকা করেছিল। এবার মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্তদের (১ জানুয়ারি ২০১৬-র পর থেকে) গ্র্যাচুইটিও ওই ৬ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ লক্ষ টাকার করার প্রস্তাব আছে। বিপুল আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের ন্যূনতম পেনশনও বাড়িয়ে সাড়ে ৮ হাজার টাকা করার কথা হচ্ছে। এখন তাঁদের ন্যূনতম পেনশন রয়েছে ৩৩০০ টাকা। ফলে, সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তির প্রতীক্ষায় রয়েছেন কয়েক লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মী। এই বিষয়টিতে যাতে কোনোরকম ধোঁয়াশা না-থাকে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। ওই কর্মীরা পুজোর মুখে এ ব্যাপারে হয়তো সুখবরটি পাবেন।
অবসরপ্রাপ্তদের জীবনধারণের জন্য পেনশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই ক্ষেত্রে রাজ্য কর্মীরা কেন্দ্রীয় অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের তুলনায় বঞ্চিত
হচ্ছিলেন বলে অভিযোগটি ছিলই। মা-মাটি-মানুষের সরকার যে অবসরপ্রাপ্তদের দুঃখকষ্টের কথা ভেবে তাঁদের স্বার্থরক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে চায় পেনশনবৃদ্ধির প্রসঙ্গটি তারই নজিরস্বরূপ। মোদি সরকার সপ্তম
বেতন কমিশন কার্যকর করার পর কেন্দ্রীয় কর্মীদের ন্যূনতম পেনশন হয়েছে
৯ হাজার টাকা। রাজ্য কর্মীদের বর্ধিত পেনশন সংক্রান্ত সুপারিশটি কার্যকর হলে তাঁদের ন্যূনতম পেনশন হবে ৮৫০০ টাকা। অর্থাৎ ব্যবধান থাকবে মাত্র ৫০০ টাকার। ঋণভারে জর্জরিত এই বাংলা। তবু মুখ্যমন্ত্রী যে তাঁর সীমিত সাধ্যের মধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জীবনধারণের সমস্যার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চান তা তাঁর কর্মপদ্ধতিতেই প্রমাণিত হয়েছে। তবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রস্তাবটি কার্যকর করা দরকার। কারণ, দুর্মূল্যের
বাজারে অবসরপ্রাপ্তরা আদৌ স্বস্তিতে নেই। তাঁদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। প্রস্তাবটি কার্যকর হলে আশা করা যায়, পুজোর আগেই তাঁদের মুখে হাসি ফুটবে।