বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
কুলভূষণ একজন প্রাক্তন নৌসেনা অফিসার। অবসরপরবর্তী জীবনে তিনি ব্যবসা বাণিজ্যে মনোনিবেশ করেন। ব্যবসা সূত্রে ইরানে থাকতেন। ২০১৬ সালে একটি জঙ্গি সংগঠন তাঁকে ইরানের সারবাজ শহর থেকে অপহরণ করে পাকিস্তানে নিয়ে যায় বলে দিল্লি জানিয়েছিল। তারাই তাঁকে পাক সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। দুইয়ে দুইয়ে চার করা পাকিস্তান প্রশাসনের কাছে কোনও ব্যাপার নয়। ওইবছর ৩ মার্চ পাক সরকার কুলভূষণকে গ্রেপ্তার দেখায়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়ে অপবাদ দেওয়া হয় যে কুলভূষণ হলেন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর গুপ্তচর। তিনি করাচিতে এবং বালুচিস্তানে ভারতের হয়ে গুপ্তচরবৃদ্ধি করেন। তিন বছর যাবৎ তিনি পাকিস্তানে বন্দি। পাকিস্তান-বিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার দায় চাপিয়ে সে-দেশের সেনা আদালত কুলভূষণকে ফাঁসির সাজা শুনিয়ে দিয়েছে। এই অন্যায় শাস্তির হাত থেকে একজন ভারতীয় নাগরিককে বাঁচানোর জন্য ভারত শেষ পর্যন্ত লড়ে যাচ্ছে। বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আদালতে টেনে নিয়ে গিয়ে নিখুঁতভাবে মোকাবিলা করে যাচ্ছে ভারত সরকার। আর সেইজন্যই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বুধবার। আন্তর্জাতিক আদালত পাকিস্তান সেনা আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে বলেছে, রায়টি পাকিস্তানকে খতিয়ে দেখে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। ওইসঙ্গে ভারতের পুরনো দাবি মেনে কুলভূষণ প্রশ্নে ‘কনস্যুলার অ্যাকসেস’ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক আদালত। উল্লেখ করার মতো বিষয় এই যে, মোট ১৫ জন বিচারপতির মধ্যে ১৪ জন ভারতের বক্তব্য সমর্থন করেছেন। সারা পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে চীনও ভারতের পক্ষ নিয়েছে! পাকিস্তানের পক্ষে সে-দেশের একজন অস্থায়ী বিচারপতি ছাড়া কেউই ছিলেন না। অন্যদিকে, ২৩টি গুরুতর মামলায় বুধবারই গ্রেপ্তার হয়েছে হাফিজ সইদ। সময়টা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর আসন্ন। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পাকিস্তানের ভূমিকা যে জঘন্য, সেকথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আমাদের এই প্রতিবেশীকে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই পাকিস্তানকে সুপথে আনা সম্ভব হয়নি। তার জন্য অর্থনৈতিক অবরোধের হলুদসংকেতও ঝোলানো হয়েছে তাদের সামনে। এই পরিস্থিতিতে চীনও আর পাকিস্তানকে বাঁচাতে পারবে বলে মনে হয় না। অতএব ‘সুবোধ বালক’ ইমেজ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে দাঁড়ানো ছাড়া ইমরান খানের উপায় নেই।
তাই হাফিজের গ্রেপ্তারের খবরটি আনন্দের হলেও এখনই উল্লসিত হওয়ার মতো নয়। কারণ আমাদের পশ্চিম সীমান্তের দেশটির নাম পাকিস্তান। কথার খেলাপে, আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনে তুলনাহীন। ভারত যাবতীয় অকাট্য প্রমাণ পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া সত্ত্বেও গত এক দশকে তারা হাফিজের বিরুদ্ধে সামান্যতম ব্যবস্থাও নেয়নি। হাফিজকে অতীতেও দু’বার ধরে ছেড়ে দিয়েছে ‘উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে’। আর কুলভূষণ প্রসঙ্গে ভারত সরকারকে আরও সতর্ক হতে হবে এই কারণে যে আমরা কিন্তু সরবজিত সিংকে বাঁচাতে পারিনি। লাহোরের লাখপত জেলে তাঁকে পিটিয়ে মেরে দিয়েছিল এই পাকিস্তান!