বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয় বছরের শাসনকালেও অগ্রাধিকারের তালিকায় কৃষি। আমরা জানি, সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কৃষক আন্দোলনের ভিতর থেকেই এই সরকারের বীজ সংগৃহীত হয়েছিল। অতএব এটা প্রত্যাশিতই ছিল। মধুচন্দ্রিমা পর্ব কেটে যাওয়ার পর দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার উপলব্ধি করেছে, কৃষকের জন্য অনেককিছু করা প্রয়োজন। এই সময়কালে অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েত ভোট সেরকমই সংকেত রেখে গিয়েছে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভার ভোটে কৃষিপ্রধান এলাকায় তৃণমূলের অপ্রত্যাশিত বিপর্যয় এবং বিজেপির অভাবনীয় সাফল্যের নেপথ্যে যে এই রসায়ন, তা অন্যায় অনুমান নয়। কিছু একটা গোলমেলে ব্যাপারটা যে হতে যাচ্ছে তা আঁচ করেই হয়তো রাজ্য সরকার লোকসভার ভোটের মাস কয়েক আগে কৃষককল্যাণে একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কৃষকবন্ধু’। এই কর্মসূচি মারফত খরিফ এবং বোরো-রবি চাষের জন্য আড়াই হাজার টাকা হিসেবে দু’দফায় মোট পাঁচ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের কথা। গত ৩১ ডিসেম্বর এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়। ৩০ জানুয়ারি রামপুরহাটে পাঁচজন কৃষকের হাতে চেক তুলে দিয়ে কর্মসূচিটির আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্লক কৃষি দপ্তরগুলিতে কৃষকদের আবেদনপত্র গ্রহণের মাধ্যমে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যজুড়ে কর্মসূচিটি রূপায়ণের নির্দেশ দেওয়া হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে জমির প্রমাণপত্র দাবি করা হয়। লোকসভা ভোটের আগে যে-হারে আবেদনপত্র জমা পড়ার কথা ছিল তা পড়েনি। গত ১০ মার্চ লোকসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির ফলে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হয়। কৃষকবন্ধু কর্মসূচিটিকে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখার জন্য রাজ্যের তরফে নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি। ফলে, ২৬ মে পর্যন্ত এই কর্মসূচির চেক বিলি বন্ধ রাখতে হয়। জুনের গোড়া থেকে ফের চেক বিলি শুরু হয়েছে। সরকারের নির্দেশ, এই কাজ চলতি জুলাইয়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে।
এই নির্দেশ কার্যকর করতে নেমেই সরকার দেখছে প্রধান অন্তরায় জমির কাগজপত্রের সমস্যা। রাজ্যে কৃষকের সংখ্যা ৭৩ লক্ষ। তাঁরা সকলেই এই কর্মসূচি মারফত আর্থিক অনুদান পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু তাঁদের বেশিরভাগেরই হাতে এই টাকা তুলে দেওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ১১ জুলাই অবধি সরকারি হিসেবে দেখা যাচ্ছে, আবেদনপত্র জমা পড়েছে ৩৫ লক্ষেরও কম! অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি কৃষক আবেদন করতে পারেননি। ব্লকে ব্লকে ক্যাম্পের আয়োজন করার পরেও এই দুর্দশা! কিন্তু কেন? তাঁদের নামে জমির কাগজপত্র ঠিক নেই। কেনা জমি কিংবা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি—উভয় ক্ষেত্রেই মিউটেশন বা নামপত্তন পাল্টানো হয়নি অথবা সেটা করার সামনে কোনও আইনি জটিলতা রয়ে গিয়েছে। স্বভাবতই জমির টাইটেলও চেঞ্জ করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৬ লক্ষ কৃষককে চেক দেওয়া হয়েছে। আরও ৪ লক্ষাধিক চেক তৈরি হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ অখুশি কৃষকের তালিকাটাই বিরাট। পরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা প্রদান শুরু হলে বঞ্চনার খতিয়ানটা আরও লম্বা হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। অতএব, জমির কাগজপত্র সংক্রান্ত যে জটিলতা এর নেপথ্যে, তার সুরাহা দ্রুত কীভাবে করা সম্ভব তা সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই ভাবতে হবে। তা না-হলে ক্ষোভের আঁচটা সবার আগে রাজ্য সরকারের উপর, আরও খোলসা করে বললে বলতে হয় যে রাজ্যের শাসক দলের উপরেই কিন্তু পড়বে।