বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
উল্লেখ্য, শিবপুরে অনিচ্ছুক জমিদাতা কৃষকদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল শিবপুর জমিহারা কৃষক সংগ্রাম মঞ্চ। তাদের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, শিল্পের দাবিতে এদিন গণ অবস্থান করা হবে। সেইমতো রবিবার অবস্থান বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার কথা ছিল বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামের রাজ্য নেতাদের। কিন্তু, শারীরিক অসুস্থতার জন্য বিকাশবাবু যোগ দিতে পারেননি। পরিষদীয় বৈঠক থাকার ফলে আব্দুল মান্নানও আসেননি এদিনের অবস্থান বিক্ষোভে। শিবপুর জমিহারা কৃষক সংগ্রাম মঞ্চের আহ্বায়ক তপন সাহা বলেন, শিল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে কোথাও আবাসন, কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। কখনও আবার মেলা করা হচ্ছে। কৃষকরা চান জমিতে শিল্প হোক অথবা তাঁদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হোক। সেই দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। এদিন ফের আমরা মঞ্চ থেকে প্রশাসন ও শাসকদলের কাছে সেই দাবিই তুলে ধরলাম।
প্রসঙ্গত, ২০০১–’০২ সালে তৎকালীন বাম সরকার শিবপুর মৌজার প্রায় ৩০০একর জমি অধিগ্রহণ করে। স্থির হয়েছিল এই জমিতে করা হবে শিল্প। সেই সময় জমিদাতাদের চাকরি দেওয়া হবে এই প্রতিশ্রুতিতে ৪৮ হাজার টাকা বিঘা দরে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেখানে কোনও শিল্প করা হয়নি। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল ঘটে। ক্ষমতায় আসে বর্তমান শাসকদল তৃণমূল। শিবপুর সমস্যা নজরে আসতেই প্রথমে ঘোষণা করা হয় এই জমিতে করা হবে আইটি হাব। কিন্তু, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর শিবপুরে এসে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পুনরায় ঘোষণা করেন, ওই জমিতে করা হবে কাঁসা-পিতলের হাব। কিন্তু, সেই ঘোষণারও বাস্তব রূপায়ণ হয়নি। পরবর্তীতে বীরভূম জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, অধিগৃহীত জমিতে করা হবে গীতবিতান আবাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো জোর কদমে শুরু হয়ে যায় প্রকল্পের নকশা তৈরির কাজ। হিডকোর উপর দায়িত্ব যায় মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পের।
জানা যায়, অধিগৃহীত জমির ১৩১একরে তৈরি করা হবে গীতবিতান আবাসন। ২০একর জমিতে বিশ্বভারতীর ধাঁচে তৈরি করা হবে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও প্রায় ৩০একর জমিতে হবে বাজার ও ১০একর জমিতে করা হবে আইটি হাব। এই ঘোষণা শোনার পর থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন জমিদাতা কৃষকরা। তাঁদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, শিল্পের জন্য অধিগৃহীত জমিতে শিল্পই করতে হবে না হলে জমি ফেরত দিতে হবে। সেখানে আবাসন বা বিশ্ববিদ্যালয় করা যাবে না। এই দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করেন জমিদাতা অনিচ্ছুক কৃষকরা। আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে শিবপুর জমিহারা কৃষক সংগ্রাম মঞ্চ তৈরি করা হয়। তাদের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয় মহকুমা শাসক, জেলাশাসক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত। কিন্তু, তাতেও কোনও কাজ না হওয়ায় জমি ফেরত চেয়ে আন্দোলন গড়ায় আদালতে। অনিচ্ছুক কৃষকদের দাবি, আদালত নির্মাণ কাজে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু, তারপরেও শাসকদল আদালতের স্থগিতাদেশ অগ্রাহ্য করে গায়ের জোরে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিন সকাল ১০টা থেকে শিবতলা তিনমাথা মোড়ে শিবপুর জমিহারা কৃষক সংগ্রাম মঞ্চের অবস্থান শুরু হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামের সদস্যরা। ফোরামের অন্যতম সদস্য চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, রাজ্য সরকার, হিডকো ও জেলা প্রশাসন হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যা জমিহারা কৃষকদের সঙ্গে প্রবঞ্চনার শামিল। আমরা ঘটনার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী ও হিডকোর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেব। তারপরেও কোনও সুরাহা না হলে আমরা হিডকোর সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করব।
বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, শিবপুর এলাকায় আবাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। যার ফলে আগামী দিনে সেখানে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু, কিছু মানুষ বাইরে থেকে এসে উস্কানি দিয়ে কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে এলাকাকে অশান্ত করছে।