বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
রাজ্যের অগ্রগতি করতে হলে আমাদের ছেলেমেয়েদের অবশ্যই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তা কখনওই ইংরেজিকে অচ্ছুৎ করে রেখে নয়। ইংরেজি ভাষা শিক্ষায় যথোচিত গুরুত্ব এখন না-দিলেই নয়। এই সারমর্মটি উপলব্ধি করেছে তৃণমূল সরকার। প্রশ্নটা হল, যে-রাজ্যে ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করতে নানা রকম সরকারি প্রকল্প রয়েছে, চালু আছে মিড ডে মিল সেখানে সরকার পোষিত স্কুলে ছাত্রাভাব থাকবে কেন? অস্বীকার করার উপায় নেই—সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে একসময় ইংরেজি তুলে দেওয়াটা ছিল ভর্তির আকর্ষণ কমে যাওয়ার একটি কারণ। দুর্ভাগ্যজনক যে রাজ্যে আড়াই হাজারেরও কিছু বেশি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০-র নীচে চলে গিয়েছে! ছাত্রছাত্রী কমে গিয়েছে এরকম একাধিক স্কুলকে একসঙ্গে যুক্ত করা, পরিকাঠামোর উন্নতি, ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চালু করা প্রভৃতির মাধ্যমে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বা সরকারি স্কুলগুলিকে আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য সরকার। আপাতত এক হাজার সরকারি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি এই প্রচেষ্টাটি তখনই সফল হবে যখন স্কুলে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হবে। থাকবেন প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত শিক্ষক। দরকার নির্ভুল পাঠ্যপুস্তকেরও। মাথায় রাখা দরকার, গোড়ায় গলদ রেখে কোনও কাজই সফল হতে পারে না। শিক্ষা দপ্তর বিষয়টি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে তার জন্য তাদের সাধুবাদ প্রাপ্য। শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক প্রাথমিকেই যাতে ইংরেজির সঙ্গে ধাতস্থ হতে পারে খুদে পড়ুয়ারা সেজন্য সিলেবাস কমিটির তরফে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব জমা পড়েছে। ওই শ্রেণীতে বাচ্চাদের জন্য ওয়ার্ক বুক তৈরি করারও প্রস্তাব আছে।
একথা ঠিক, সরকারি স্কুলে যদি অভিভাবকদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও শিক্ষার সুযোগ থাকে তাহলে সেখানে পড়ুয়ার অভাব হওয়ার কথা নয়, বিশেষত যেখানে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম বহু স্কুলেই পড়ার খরচাপাতি অনেক বেশি। ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা নেওয়ার জন্য যেখানে এত ঝোঁক রয়েছে তাকে মান্যতা দেওয়াই উচিত। সরকারি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সুযোগ প্রসারিত হলে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করানোর প্রবণতা কিছুটা হলেও কমবে। কমবে তাদের রমরমা। তবে, বিজ্ঞাপনের যুগে এ ব্যাপারে প্রচারটাও চাই। আর দরকার নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি। রাজ্যে যত্রতত্র যাতে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গজিয়ে উঠতে না-পারে সেজন্য সরকারকে তৎপর হতে হবে। সেক্ষেত্রে অন্য বোর্ডের অধীনে গড়ে ওঠা স্কুলগুলির জন্য সরকারের তরফে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়টির গুরুত্বকে অস্বীকার করার উপায় নেই। যেহেতু রাজ্যেই স্কুলগুলি চলছে তার দায় কিছুটা হলেও রাজ্য সরকারের উপর বর্তায়। তবে সরকারি স্কুলের হৃত গৌরব ফেরাতে হলে আগে শিক্ষকের অভাব দূর করতে হবে। নজর দিতে হবে সেখানে শিক্ষার মানোন্নয়নের উপর। দরকার উপযুক্ত লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরিও। নচেৎ উদ্দেশ্য সফল হবে না। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে পড়ুয়া কমে যাওয়া ঠেকাতে ইংরেজি মাধ্যমে জোর দেওয়ার যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি সরকার নিয়েছে তা অত্যন্ত যুক্তিসংগত। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে এছাড়া উপায়ও নেই।