বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
যে দেশে জাতপাত নিয়ে আজও ভোটব্যাঙ্ক নির্ধারিত হয়, সেখানে এর থেকে বেশি কীই বা আশা করা যেতে পারে? সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও উত্তরপ্রদেশে জাতপাত এবং ধর্ম একটা বড় ভূমিকা পালন করেছিল। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, আমি পিছড়ে বর্গের বলেই কংগ্রেস আমার নামে এত কিছু বলে। প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্র বারাণসী উত্তরপ্রদেশেই। আর সেই রাজ্যেরই মেয়ে সাক্ষী। প্রাপ্তবয়স্ক। এবং নিজের মতে বিয়ে করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা ভিডিওয় তিনি বারবার বলেছেন, ‘এবার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলান বাবা। অজিতেশরাও মানুষ, জানোয়ার নয়।’ অজিতেশের বাড়ির সামনে পাহারা বসিয়েছে পুলিস। বেগতিক বুঝে বিধায়ক নিজেও ঢোঁক গিলছেন। বলছেন, ‘আমি তো বিয়ের বিপক্ষে নই! ওর থেকে বয়সে অনেক বড় ছেলেটি। তার উপর তেমন কিছু আয় নেই। সে জন্যই বাধা দিচ্ছিলাম। আমি চাই ওরা বাড়ি ফিরে আসুক।’
অর্থাৎ এই পরিস্থিতিতে সাক্ষী এবং অজিতেশের পাশে দাঁড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। সম্মান রক্ষার্থে খুনের ঘটনা উত্তর ভারতে বিরল নয়। সংবাদমাধ্যম ক্ষেত্রের বিকাশের আগে যার বেশিরভাগই আড়ালে থেকে যেত। জাতের বাইরে সম্পর্ক তো বটেই, জল নেওয়া বা এক জমিতে পা রাখার জন্যও দলিতদের খুন হতে হয়েছে এক সময়। সব খবর মিডিয়ার কাছে এসেও পৌঁছত না। কিন্তু এখন সত্যিই সময় বদলেছে। আজ যদি তা সমাজের সামনে নগ্ন হয়ে গিয়ে থাকে, তার কৃতিত্ব অনেকটাই দাবি করতে পারে ফেসবুক, ট্যুইটারের মতো মাধ্যমগুলি। সাক্ষী পুরো বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দিতে সক্ষম হয়েছেন বলেই রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও তাঁর বাবা তথা বিধায়ক রাজেশ মিশ্র কিছু করে উঠতে পারেননি।
কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি তো নরেন্দ্র মোদি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে দেননি! তিনি তো ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশে’র পূজারি। এবার সেটা বদলে হয়েছে, ‘সব কা সাথ, সব কা বিশ্বাস’। মানুষ কিন্তু নরেন্দ্র মোদিকে বিশ্বাস করেই ঢেলে ভোট দিয়েছে। যদি এই লোকসভা ভোট শুধু ধর্ম বা জাতপাতের মেরুকরণের উপর হতো, তাহলে ৩৫৩টি আসন একা বিজেপি পেত না। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বা এমনতর বিষয়গুলি জানেন না, তা তো হতে পারে না! সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরই দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে সন্তানের আশঙ্কা এবং অভিযোগের ভিডিও তিনদিন ধরে ঘুরছে। মোদি ‘পাবজি’র খবর রাখেন, অথচ অভিযোগ উঠেছে বিজেপি বিধায়ক জাতপাতের নামে নিজের মেয়েকে মারতে গুন্ডা পাঠাচ্ছেন, সেদিকে তাঁর নজর নেই? আজ না হয় কাল ভারতবাসী কিন্তু এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করবে। নতুন প্রজন্ম, নতুন ভারত কিন্তু সত্যিই ধর্ম এবং জাতপাতের নামে রাজনীতি বা খুনোখুনিতে বিশ্বাসী নয়। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী যার মাশুল গুনছেন। আরএসএস বা বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণে ইন্ধন দেয়, এই প্রচার যদি সত্যিও হয়, ভারতের ভোটাররা কিন্তু নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এই সমীকরণকে মেলায়নি। ভারত ভেবেছে, মোদি যাবতীয় সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে দেশকে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে লড়াই করবেন। তাঁর সেই পরীক্ষা কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে!