একটা সময় টেলি দুনিয়ায় শাশুড়ি-বউমার সাংসারিক কূটকচালির রাজত্ব চলত। এরপর সেই শাসনভার ক্রমে হস্তান্তরিত হয় ঐতিহাসিক, পৌরাণিক কাহিনীর উপর। সেই শাসনকালও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বর্তমানে ছোটপর্দার সিংহাসন অতিপ্রাকৃতর দখলে। চ্যানেলে চ্যানেলে আধিভৌতিক, অতিপ্রাকৃত, জাদুশক্তির ছড়াছড়ি। ‘নাগিন’, ‘নজর’, ‘শ্বশুরাল সিমর কা’, ‘কবচ’, ‘কোই হ্যায় থেকে মনমোহিনী’, ‘নিশির ডাক’। এই তালিকায় কালারস চ্যানেলের নতুন দুই নতুন ধারাবাহিক— ‘তন্ত্র’ এবং ‘বিষ ইয়া অমৃতঃ সিতারা’। মজার বিষয় হল একই চ্যানেলে একই দিনে শুরু হয়েছে এই দুই ধারাবাহিক। বিষয়ও এক, অতিপ্রাকৃত। ‘বিষ ইয়া অমৃতঃ সিতারা’ নাম শুনে নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে যে, বিষের সঙ্গে কোথাও একটা সম্পর্ক রয়েছে। বিষকন্যাদের গল্প। রাজস্থানি লোকগাথায় এই বিষকন্যাদের উল্লেখ মেলে। রাজপরিবার নিজেদের স্বার্থে নাকি বিষকন্যাদের তৈরি করতেন, যাদের শত্রু নিধনের কাজে ব্যবহার করা হতো। তেমনই কয়েকজন বিষকন্যার গল্প নিয়ে তৈরি এই মেগার কাহিনীও রাজস্থানের। রাজা শিবদান সিংয়ের মহলে কয়েদ চার বিষকন্যা— বৃন্দা, ছবিলি, সুরিলি ও আলবেলি চার বোন। রাজগুরু জগন্নাথ এই চার কন্যার ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক। বৃন্দা আর রাজপরিবারের ম্যানেজার কুলদীপের একমাত্র মেয়ে সিতারা। সিতারা তার বাবার কাছেই মানুষ। মায়ের কথা তার অজানা। বিদেশে পড়া শেষ করে মহলে ফেরে সিতারা। অন্যদিকে নিজেদের বন্দিদশার জন্য রাজপরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধস্পৃহায় ফুঁসছে চার বিষকন্যা। ঘটনচক্রে এই চারজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় সিতারার। ক্রমে সেও হয়ে ওঠে আর এক বিষকন্যা। মা, মাসিদের উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নাকি রাজবংশের নিরাপত্তা কোনটা বেছে নেবে সিতারা— তা ভবিষ্যতে জানা যাবে। শোয়ের লঞ্চে এসে নির্মাতা রেশমি শর্মার দাবি, ‘ইদানীং ছোটপর্দায় এতো বেশি অতিপ্রাকৃত নিয়ে কাজ হচ্ছে যে সমালোচনাও বেড়েছে। তবে আমি আগে ‘শ্বশুরাল সিমর কা’তে অতিপ্রাকৃত নিয়ে কাজ করেছি। তার তুলানায় সিতারা সম্পূর্ণ আলাদা। বিষকন্যাদের নিয়ে এর আগে ছোটপর্দায় সেভাবে কাজ হয়নি। তাছাড়া ধারবাহিকটি আসলে মা-মেয়ের সম্পর্কের গল্প।’ তাঁর কথার সূত্র ধরেই শোয়ের অন্যতম অভিনেত্রী শিল্পা সাকলানির (বৃন্দা) মন্তব্য, ‘অতিপ্রাকৃত শো নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন ঠিকই, কিন্তু তারপরও এটাই এখন ট্রেন্ড। এই শোগুলোর জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি। আমার মনে হয় সেই কারণেই এই ধরনের শো বেশি হচ্ছে। আর আমি শুধুই ভালো চরিত্রে কাজ করেছি। এবার তাই সচেতন ভাবেই একটা মন্দ চরিত্র বেছেছি।’ নাগিনের পর আবারও অতিপ্রাকৃত ঘরানায় কাজ করছেন আদা খান। ধারাবাহিকের সিতারা তিনি। ‘অনেকেই বলছেন আমি টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছি। তবে আমার তা মনে হয় না। বরং নাগিনের পর সিতারায় দর্শক আমাকে অনেক বেশি রিলেট করছেন,’ মত আদার।
‘সিতারা’র মতো স্বার্থকনামা অন্য মেগা ধারাবাহিক ‘তন্ত্র’। তন্ত্র-মন্ত্র, জাদুটোনা, বশীকরণের মতো বিষয় স্থান পেয়েছে। গল্পের সূত্রপাত দেরাদুনে। পৃথ্বী খান্না তার পরিবারের জন্য একটি বাড়ি কেনে। নাম রাখে খান্না ম্যানসন। গৃহপ্রবেশের পর থেকেই সেই বাড়িতে খান্না পরিবার নানা অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হয়। অচিরেই তারা জানতে পারে এই বাড়িতে তন্ত্রশক্তির অবস্থান প্রসঙ্গে। পরিবারের একমাত্র মেয়ে নিয়তি এই তন্ত্রশক্তির বিরুদ্ধে নিজের পরিবারকে বাঁচানোর লড়াই করে। স্বস্তিক প্রোডাকশন প্রযোজিত মেগাটিতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন মণীশ গোয়েল (পৃথ্বী), জুহি পারমার (সুমতি), সরগুণ কৌর(নিয়তি), গৌরী টঙ্ক (সুনয়না) প্রমুখ। মণীশ বললেন,‘আমি বরাবর ঐতিহাসিক আর পৌরাণিক ধারাবাহিকের থেকে দূরে থেকেছি। তন্ত্র এমন একটা সোস্যাল ড্রামা যেখানে অতিপ্রাকৃত ও থ্রিলার এলিমেন্টস রয়েছে।’ অন্যদিকে বেশ কিছুটা বিরতির পর আবার ছোটপর্দায় ফিরলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জুহি পারমার। ‘শুধু ব্ল্যাক ম্যাজিকই ধারাবাহিকটির বিষয়বস্তু নয়। অকাল্ট সায়েন্স বলে একটা বিষয় আছে। সেটাই এই শোয়ে দেখানো হচ্ছে। তাছাড়া সুমতি-পৃথ্বীর সম্পর্কের জটিলতাও ধারাবাহিকের আর একটা দিক। সব মিলিয়ে অনেকগুলো স্তর রয়েছে’, বলছেন জুহি।
মানসী নাথ