বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
বিশ্বভারতীর জন্য অর্থসংগ্রহের কারণে প্রচুর ঘুরতে হচ্ছে। হাতে সময় নেই। মনও বিষণ্ণ। এমন সময় একটা রচনা দৃষ্টিগোচর হল আমেরিকায় বসে। রচনাটির শিরোনাম ‘ঈভল রট বাই দ্য ইংলিশ মিডিয়াম’। প্রকাশিত হয়েছে ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ পত্রিকায়। ১৯২১। লিখেছেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। গান্ধীজির লেখা? পড়তে হচ্ছে। তাই টেনে নিয়েছিলেন লেখাটি। কিন্তু যতই পড়ছেন ততই যেন ক্ষোভ সঞ্চারিত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে। কারণ গান্ধীজি সেই রচনায় লিখেছেন, ‘নিজেদের ভাবনাকে যদি ইংরেজি ভাষায় আবদ্ধ রেখে ইংরেজিতেই সেই ভাবধারা প্রকাশ করার প্রবণতা থেকে রামমোহন রায় কিংবা লোকমান্য তিলক বিরত থাকতেন, তাহলে তাঁরা আরও অনেক বড় সমাজ সংস্কারক হতে পারতেন।’ গান্ধীজি লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে অনেক কুসংস্কারই বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, কিন্তু তার মধ্যেও সবথেকে বেশি যে কুসংস্কারটির ক্ষতিকর প্রভাব এদেশে রয়েছে, সেটি হল ইংরেজি ভাষাজ্ঞান ছাড়া স্বাধীন চিন্তা আর ভাবনার সঠিক প্রকাশ করা যায় না, এই মনোভাব।’ গান্ধীজি আরও লিখেছেন ‘এভাবে বস্তুত ইংরেজি ভাষার শিক্ষার ব্যবস্থা ভারতের শরীর, মন, আত্মাকে ক্ষুদ্র বামনত্বে পর্যবসিত করার প্রবণতাই দেখিয়েছে।’ সোজা কথায় গান্ধীজির ধারণা, রামমোহন রায় ইংরেজি ভাষায় অতি নির্ভরশীল হওয়ার কারণেই সমাজ সংস্কারের শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করতে পারেননি। আর রবীন্দ্রনাথ রামমোহন রায়ের কোনওরকম বিরুদ্ধতা সহ্যই করবেন না। এক মুহূর্ত দেরি না করে রবীন্দ্রনাথ সি এফ অ্যান্ড্রুজকে চিঠিতে লিখলেন, ‘আধুনিক শিক্ষার অন্ধ বিরোধিতা করতে গিয়ে যেভাবে মহাত্মা গান্ধী আধুনিক ভারতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব রামমোহন রায়ের ভূমিকাকে লঘু করার চেষ্টা করেছেন, আমি সেই প্রয়াসের তীব্র প্রতিবাদ করি।’ রবীন্দ্রনাথের পাল্টা যুক্তি হল, দেশীয় সংস্কৃতি ও শিক্ষায় রামমোহন রায় এতটাই উচ্চমানের ছিলেন যে, তাঁকে কখনও বিদেশি শিক্ষার অনুগামী হিসেবে নিজেকে প্রতিভাত করতে হয়নি। প্রাচ্যের জ্ঞান ও প্রতীচ্যের শিক্ষার ওই নিখুঁত মেলবন্ধনই তাঁকে পশ্চিমের কাছে গ্রহণযোগ্য ও শ্রদ্ধার পাত্র করে তুলেছিল। বস্তুত রবীন্দ্রনাথের আজীবনের ধ্রুবপদ ছিল দিবে আর নিবে মিলিবে মেলাবে। তিনি যে কোনও প্রকার দরজা বন্ধ করার বিরুদ্ধে। তাই তিনি ছিলেন গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনের কঠোর বিরোধী। ১৯২১ সালেরই সেপ্টেম্বর মাসে গান্ধীজি কলকাতায় জোড়াসাঁকোতে এলে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ভারতীয় হিসেবে পশ্চিম থেকে আমাদের শুধু যে অনেক কিছু শেখার আছে তাই নয়, আমাদেরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে পশ্চিমী সভ্যতাকে। তাই পশ্চিমের দরজা বন্ধ করার চেষ্টা যেন আমরা না করি।’
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বিশ্ব মানবতাবাদী। তিনি তাই বরাবর জাতীয়তাবাদের উপরে স্থান দিয়েছেন মানবতাবাদকে। জাতীয়তাবাদ যে উগ্র দেশপ্রেমে পর্যবসিত হয়ে শেষ পর্যন্ত দেশীয় মানুষের কাছেও একপ্রকার বিপদ নিয়ে আসে, সেকথা তিনি ‘ঘরেবাইরে’ উপন্যাসেই দেখিয়েছেন। মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় ‘দ্য কল অব ট্রুথ’ নামক একটি প্রবন্ধে তিনি লিখলেন, ‘আমার সাম্প্রতিক বিদেশ সফরে এরকম অনেকের সঙ্গে দেখা হল যাঁরা জাতীয়তাবাদের বন্ধন ছিন্ন করে মানব ঐক্যের লক্ষ্যে পৌঁছতে সংকল্প করেছেন।’ রবীন্দ্রনাথ নিজে অসহযোগের মতো আন্দোলনকে নেতিবাচক ভেবে এসেছেন। এই ভাবনাগত লড়াইয়ে তিনি প্রতিনিয়ত আক্রান্ত ও কোণঠাসাও হয়েছেন। অসহযোগের বিরোধিতা করায় তাঁর নিজের বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ পর্যন্ত গান্ধীজিকে একটি ব্যক্তিগত চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, ‘রবি ভুল পথ গ্রহণ করেছে। ভারত যখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে তার নতুন সন্তান স্বরাজের জন্ম দেওয়ার পথে, তখন রবি নিজের চারপাশে সঙ্গীত আর আনন্দের একটা আবহ রচনা করে রয়েছে...’। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা করে গান্ধীজিকে চিঠি লিখেছিলেন (৫ অক্টোবর, ১৯২১), ‘কিছু কিছু সময় নীরবতাই স্বর্ণসম উজ্জ্বল এবং ভাষণ নিছকই রুপোর মতো। আমার ধারণা রবীন্দ্রনাথ এই আপ্তবাক্য অনুসরণ করলে সবথেকে বেশি ভারতের স্বার্থের পক্ষে হত।’ রবীন্দ্রনাথ ১৯১৬-১৭ সালে আমেরিকা ও জাপানে তাঁর প্রদান করা বক্তৃতাতেও এই একইভাবে জাতীয়তাবাদের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। বক্তৃতাগুলি মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় পড়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এতটাই বিস্মিত হয়েছিলেন যে, তিনি ১৯১৭ সালের এপ্রিলে বলেছিলেন, ‘স্বদেশির সেই দিনগুলিতে যে রবীন্দ্রনাথ বাংলার মাটি, বাংলার জলকে পূর্ণ করার, পূণ্য করার কামনা জানিয়েছিলেন ঈশ্বরের কাছে, সেই তিনিই এখন তাহলে স্যার রবীন্দ্রনাথে পরিণত হয়েছেন?’ কিন্তু ক্রমাগত চতুর্দিক থেকে আসা নানাবিধ আক্রমণ ও সমালোচনার তির রবীন্দ্রনাথকে নিজের অবস্থান থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তিনি আজীবন অবিচল রইলেন বিশ্বমানবতার সৌভ্রাতৃত্বের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে। তাই অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে অনশনে শায়িত গান্ধীজির পাশে দাঁড়াতে ৭০ বছর বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়েও পুনের ইয়েরওয়াড়া জেলে ছুটে গিয়েছিলেন কলকাতা থেকে। তাঁকে সামনে পেয়ে দু’হাতে জড়িয়ে ধরেছিলেন মহাত্মা গান্ধী।
রবীন্দ্রনাথ তাহলে কি জাতীয়তাবাদী ছিলেন না? তিনি স্বদেশপ্রেমকে তাহলে কী চোখে দেখতেন? ঠিক এখানেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর বিস্ময়কর সাদৃশ্য। কারণ এই দুই মহান আত্মাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন ভারতের আত্মা থাকে গ্রামে। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন স্বদেশপ্রেমের অর্থ হল স্বদেশবাসীর আত্মসম্মান অর্জন। স্বাবলম্বী হওয়া। স্বদেশি আন্দোলনের সময় বারংবার কংগ্রেস অধিবেশনে কিংবা স্বদেশি সমাজ সম্মেলনে বলেছেন গ্রামকে শক্তিশালী করার কথা। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করেন নেতারা নিছক বক্তৃতা, অধিবেশন আর রাজনীতি নিয়ে গরম গরম কর্মসূচিতেই ব্যস্ত। তাঁর প্রস্তাবে কেউ গুরুত্বই দেয়নি। রবীন্দ্রনাথ স্থির করলেন তিনি নিজের মতো চেষ্টা করবেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রকে নির্দেশ দিয়েছিলেন জমিদারি পরিচালনার। বাংলায় তিনটি পরগনায় তাঁদের জমিদারি ছিল। তিনটি পৃথক জেলায়। পাবনার শাহজাদপুর, রাজশাহির কালীগ্রাম এবং নদীয়ার বিরাহিমপুর। বিরাহিমপুর পরগনার সদর কাছারি ছিল শিলাইদহ। সেটাই প্রধান সদর দপ্তর করলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথমেই তিনি গ্রামের প্রজাদের মধ্যে সালিশি বিচারের প্রবর্তন করেন। বিরাহিমপুর ও কালীগ্রামের কিছু গ্রাম নিয়ে স্থির হল ফৌজদারি ছাড়া অন্য কোনও মামলা নিয়ে আদালতে কেউ যাবে না। সালিশির বিচার পছন্দ না হলে আপিল করা যাবে। পৃথক আপিল সভাও নির্বাচিত হয়। একটা সময় পর দেখা যায় আদালতে গেলে অনেক খরচ, তাই গ্রামের পর গ্রাম আর কেউ আদালতে গেল না। গ্রামবাসীদের কাছে এই বিচারসভাই সবথেকে সুবিধাজনক হয়ে গেল।
পুত্র রথীন্দ্রনাথকে আমেরিকায় কৃষিবিজ্ঞান পড়তে পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর আশা ছিল রথীন্দ্রনাথ ফিরে এসে গ্রামের কৃষি উন্নয়নের কাজে লাগবেন। রথীন্দ্রনাথ তাই করেছিলেন। শিলাইদহে কুঠিবাড়ির কিছু জমি খাস করে সেখানে আমেরিকা থেকে যন্ত্র নিয়ে এসে চাষবাস শেখানো হয়েছিল কৃষকদের। রাসায়নিক ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হল। ক্রমেই গ্রামে গ্রামে আলু, আখ, টমেটোর চাষ বাড়তে লাগল। ইতিমধ্যেই রবীন্দ্রনাথ গ্রামে গ্রামে হিতৈষী সভা গঠন করেছেন। হিতৈষী সভা গ্রামের উন্নয়নের রূপকার। জমিদারের দান হিসেবে যাতে কেউ মনে না করে, তাই রবীন্দ্রনাথ এমন ব্যবস্থা করলেন, যাতে মনে হয় প্রজা ও গ্রামবাসী নিজেরাই করছেন নিজেদের কাজ। এখানে তাঁর কোনও ভূমিকাই নেই। তাই নিয়ম হল খাজনার প্রতি টাকার সঙ্গে তিন পয়সা করে চাঁদা দিতে হবে। সেই টাকা জমা হবে হিতৈষী সভার তহবিলে। এর নাম সাধারণ ফান্ড। গ্রামে গ্রামে কোনও স্কুল নেই। একমাত্র ধনীদের পুত্রদের গ্রামের বাইরের স্কুলে পাঠানোর মতো সঙ্গতি আছে। গরিব প্রজাদের সন্তানদের পড়াশোনা হয় না। হিতৈষী সভাকে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ তাই এবার দু’টি বিষয়ে জোর দিলেন। স্কুল নির্মাণ আর হাসপাতাল গঠন। দুই বছরের মধ্যে ওই সাধারণ ফান্ড থেকেই একঝাঁক পাঠশালা, মিডল ইংলিশ স্কুল আর দুটি হাই স্কুল নির্মাণ করা হল। কিন্তু দূর গ্রাম থেকে আসা ছাত্ররা কোথায় থাকবে? তাই ছাত্রাবাস নির্মাণ করার টাকা রবীন্দ্রনাথ নিজের এস্টেটের তহবিল থেকেই দিয়ে দিলেন। কয়েক বছরের মধ্যেই তিন পরগনার প্রতিটি গ্রামেই একটি করে স্কুল অথবা পাঠশালা হয়ে গেল। সম্পূর্ণ সরকারের সাহায্য ছাড়াই।
কৃষি কিংবা মৎস্যচাষ তো গ্রামবাসী জানেই। কিন্তু কাপড় বোনা, ক্ষুদ্রশিল্প ইত্যাদি শিল্প কীভাবে শিখবে তাঁরা? তাই শান্তিনিকেতন থেকে নিয়ম করে এই কর্মীদের এইসব পরগনায় ডেপুটেশনে পাঠাতেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি যখন পদ্মাবোটে সন্ধ্যার নিভৃতিতে কবিতা, গান বা পত্র রচনা করছেন, সেদিনই দ্বিপ্রহরে পতিসর থেকে আত্রাই সাত মাইল রাস্তা নির্মাণের কাজও তদারকি করে এসেছেন। দিনের পর দিন। কারণ তিনি দেখেছেন বর্ষায় গ্রাম-গ্রামান্তরে গ্রামবাসীদের যেতে হয় শস্যক্ষেতের আল ধরে। তাই তিনি নিজের এস্টেটের টাকায় রাস্তা নির্মাণ করেছেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে।
বাংলার গ্রামবাসীর অভিশাপ হল ঋণ। ঋণ পরিশোধ আর হয় না। সুদই মেটানো যায় না, আসল কবে মিটবে? এর একটা বিহিত করতে রবীন্দ্রনাথ নিজের পরিচিতদের থেকে ধারদেনা করে পতিসর পরগনায় একটি কৃষিব্যাঙ্ক স্থাপন করলেন। যাঁকে শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয় চালানোর জন্য সারা বছর ধরে ভারত ও ভারতের বাইরে ঘুরে ঘুরে ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে, সেই কবি বাংলার এক প্রত্যন্ত পরগনায় তাঁর প্রজাদের সুরাহার জন্য একটা আস্ত কৃষিব্যাঙ্ক স্থাপনের জন্য কয়েকহাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করলেন! ৮ শতাংশ সুদে কৃষকরা এই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেবেন। আবার ১২ শতাংশ সুদে শোধ করে দেবেন। এই ছিল পরিকল্পনা। দ্রুত সফল হল সেই প্রয়াস। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কৃষকরা মহাজদের ধার মিটিয়ে দিল। একে একে কালীগ্রাম, পতিসরের মহাজনদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল। একটা সময় চাহিদা এতই বেড়ে গেল, অথচ ব্যাঙ্কে সেই পরিমাণ টাকার সংস্থান নেই। কী করা যায়? আর তো ধারদেনার জায়গাও নেই। রবীন্দ্রনাথ এক অবিস্মরণীয় কাজ করলেন। নোবেল পুরস্কারে পাওয়া ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা ওই গ্রামের কৃষিব্যাঙ্কে বিনা দ্বিধায় ডিপোজিট রাখলেন!
বাঙালির কবিগুরু বন্দনার তীব্র ঔজ্জ্বল্যে অন্য এক রবীন্দ্রনাথ চিরকালই যেন কিছুটা আড়ালে। তিনি হলেন কর্মী রবীন্দ্রনাথ। উগ্র দেশপ্রেম কিংবা উত্তুঙ্গ স্লোগানধর্মী বক্তৃতা নয়। রবীন্দ্রনাথের আজীবনের লক্ষ্য ছিল দেশবাসীর আত্মিক ক্ষমতায়ন। স্বয়ম্ভরতা। আত্মমর্যাদা। আত্মবিশ্বাস। এবং ঐক্য। তিনি লিখেছেন, ‘মিলনের পন্থাই ভারতপন্থা।’ রবীন্দ্রনাথের কাছে এই ছিল স্বদেশপ্রেম।
গ্রাফিক্স: সোমনাথ পাল
সহযোগিতায়: উজ্জ্বল দাস