বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
মিথ্যাজ্ঞানের নিবৃত্তি হইলে জীবের অন্তরতম আত্মাই যে নিত্যশুদ্ধ ব্রহ্ম, ইহা প্রত্যক্ষরূপে অনুভূত হয়। এই কারণে সম্যগ্রূপে বিচারের দ্বারা আত্মাতে আরোপিত অন্তঃকরণাদি-অনিত্যবস্তুসমূহের নিরাস করা অবশ্য কর্তব্য। পূর্বে যেসকল যুক্তি দেওয়া হইয়াছে সেইসকল-অনুসারে বিজ্ঞানময়কোশ চিদাত্মা হইতে পারে না। এই বিজ্ঞানময়কোশ বিকারশীল। ইহা জড়, দেশকালের দ্বারা সীমাবদ্ধ, দৃশ্যবস্তু এবং ব্যভিচারী (সর্বকালে একরূপে থাকে না—যেমন সুষুপ্তিকালে ইহা প্রকাশ পায় না)। এই প্রকার অনিত্য বস্তু কখনও নিত্য আত্মার সহিত অভিন্ন হইতে পারে না।
বাঞ্ছিত বস্তুর লাভে প্রকাশপ্রাপ্ত, প্রিয়-মোদ-প্রমোদরূপে পরিণত, স্থিরীভূত এবং অন্তর্মুখ-তমোবৃত্তি আনন্দস্বরূপ আত্মার দ্বারা প্রতিবিম্বিত হইয়া আনন্দময়কোশরূপে পরিণত হয়। সৌভাগ্যশালী ব্যক্তিগণের পুণ্যকর্মের অনুভবের সময় এই আনন্দময় কোশ স্বতঃ প্রকাশ পায়। দেহধারী জীবমাত্র বিনা চেষ্টায় এই আনন্দময়-কোশ সুখানুভব করে। তমোগুণরূপ উপাধিযুক্ত বলিয়া, প্রকৃতির পরিণাম বলিয়া, পূর্বকৃত পুণ্যকর্মসমূহের ফলে উত্পন্ন বলিয়া এবং অন্নময়াদি বিকারসমূহের মধ্যে বর্তমান বলিয়া এই আনন্দময় কোশও পরমাত্মা হইতে পারে না। যুক্তির দ্বারা এবং শ্রুতিপ্রমাণের সহায়ে অন্নময়াদি পাঁচটি কোশ আত্মা নয় ইহা প্রমাণিত হইলে মিথ্যা বলিয়া প্রমাণিত এই কোশসমূহ যাঁহার আশ্রয়ে প্রকাশিত হয়, সেই স্বয়ংপ্রকাশ চৈতন্যস্বরূপ আত্মা অবশিষ্ট থাকেন।
শিষ্য বলিলেন—হে গুরো, পাঁচটি কোশই মিথ্যা বলিয়া প্রমাণিত এবং সেইগুলি আত্মা নয় বলিয়া স্থিরীকৃত হওয়ার ফলে, নিজের মধ্যে এবং স্থূল ও সূক্ষ্ম জগতের মধ্যে সবকিছুর অভাব ব্যতীত অন্য কিছু দেখিতে পাই না। অতএব আত্মবিচারশীল ব্যক্তির পক্ষে নিজের আত্মস্বরূপে সত্যবস্তুরূপে জ্ঞেয় কোন বস্তু আছে কিংবা নাই?
শ্রীগুরু বলিলেন—হে বুদ্ধিমান শিষ্য, তুমি ঠিকই বলিয়াছ। তুমি বিচারে নিপুণ হইয়াছ। সেই অহংপ্রভৃতি বিকারসমূহ, সেই সব কিছু জ্ঞানগোচর বিষয়, জাগ্রত্কালে (যখন তাহাদের প্রকাশ দেখা যায় তখন) এবং পরে সুষুপ্তিকালে (যখন তাহাদের অভাব হয়, প্রকাশ থাকে না, তখনও) যাঁহার দ্বারা অনুভূত হয়, অথচ যিনি নিজে অন্য কিছুর অনুভবের বিষয় হন না, সূক্ষ্ম বুদ্ধির সহায়ে তুমি সেই জ্ঞাতা আত্মাকে জান। কোন বিষয় যদি কেহ দর্শন করে তবেই বলা যায় যে, সে সেই বিষয়ে সাক্ষী। কিন্তু যে বিষয় যে ব্যক্তি দেখে নাই, সে সেই বিষয়ের সাক্ষী হইতে পারে না।
স্বামী বেদান্তানন্দ অনুদিত শঙ্করাচার্যের ‘বিবেকচূড়ামণি’ থেকে