বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
হিন্দীতে খ্রীস্টের কথার অনুরূপ একটা সুন্দর দোঁহা আছে: যাঁহা রাম তাঁহা নহীঁ কাম। যাঁহা কাম তাঁহা নহীঁ রাম।। অর্থাৎ যেখানে রাম রয়েছেন সেখানে কাম নেই এবং যেখানে কাম রয়েছে সেখানে রাম থাকতে পারেন না। পরীক্ষা করে দেখা গেছে: যুগপৎ “ঈশ্বর ও বিত্তদেবতার” সেবা নিষ্ফল হয়। যতক্ষণ আমরা কামিনীকাঞ্চনের দাস ততক্ষণ আমরা কিছুতেই ভগবানে মন নিবিষ্ট করতে পারি না। সাধনভজনের সঙ্গে সঙ্গে সদসৎ বিচার দরকার। যখন বিচারে পরিপক্কতা আসে অর্থাৎ সৎপক্ষপাতিনী-বুদ্ধি সূক্ষ্মতা লাভ করে তখন বৈরাগ্য দেখা দেয়। তখন খ্রীস্ট-কথিত বণিকের গল্পে যেমন আছে, আমরা আমাদের যথাসর্বস্ব বিক্রী করে স্বর্গরাজ্যরূপ ‘মহামূল্য মণি’ ক্রয় করব।
আমরা বাইবেলে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই, অন্যান্য সত্যদ্রষ্টা মহাপুরুষদের ন্যায় খ্রীস্ট ত্যাগের আদর্শ প্রচার করেছেন। যদি ভগবান চাও তবে বিত্তদেবতাকে ছাড়তে হবে। রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ ও অন্যান্য অবতারদের মতো খ্রীস্টের বাণীও সার্বজনীন। বৈরাগ্যহীন আধ্যাত্মিক জীবন অসম্ভব। তাঁর আত্মকথা: “কেউ যদি আমার অনুগামী হতে চায় তবে সে প্রথমে নিজেকে ভুলে যাক এবং নিজের দুঃখকষ্টরূপে ক্রুশ কাঁধে নিয়ে আমাকে অনুসরণ করুক। কারণ কেউ যদি নিজের প্রাণ বাঁচাতে চায় তবে সে তা হারাবে; আর কেউ যদি আমার জন্য প্রাণ হারায় তবে সে অনন্তজীবন লাভ করবে। কোন মানুষ যদি নিজের প্রাণ হারিয়ে নিখিল বিশ্ব পায় তবে তাতে কি লাভ? নিজের প্রাণের বিনিময়ে মানুষ কি দিতে পারে?”
এই ‘নিজেকে ভুলে যাওয়ার’ ও ত্যাগের প্রকৃত অর্থ কি? এর অর্থ এ নয় যে জগৎ এবং কর্তব্যাদি থেকে পলায়ন। এর অর্থ হচ্ছে ‘আমি’ ‘আমার’ রূপ স্বার্থপরতা ত্যাগ। এর মানে হচ্ছে ভগবানকে মন, প্রাণ ও হৃদয় দিয়ে ভালবাসা। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন: “ভক্ত কেন ভগমানের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করে? পতঙ্গ আলো দেখলে আর অন্ধকারে ফেরে না; পিপঁড়া চিনির স্তূপে মরবে তবুও ফিরবে না। তেমনি ভক্ত কোন কিছু ভ্রুক্ষেপ না করে সচ্চিদানন্দ লাভের জন্য আনন্দে প্রাণ দেয়।”
সুতরাং আমি তোমাদের বলছি: জীবনের ভাবনা ছেড়ে দাও। খাওয়া-পরার চিন্তা কোরো না। আহার থেকে জীবন এবং বসন থেকে দেহ কি শ্রেষ্ঠ নয়? আকাশের পাখীদের দিকে তাকিয়ে দেখো—তারা বীজ বোনে না, শস্য কেটে গোলায় মজুত করে না; তবুও স্বর্গীয় পিতা তাদের আহার যোগান। তোমরা কি পাখীদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ নও?
তোমাদের মধ্যে কি কেউ চিন্তার দ্বারা নিজেকে এক হাত লম্বা করতে পার? বস্ত্রের জন্য ভাবনা কি? বাগানের লিলি ফুলের গাছগুলিকে দেখো—তারা কেমন বাড়ে। তারা পরিশ্রম করে না, কাপড় তৈরী করে না।
তবুও আমি তোমাদের বলছি: সলোমনও তাঁর অতুল ঐশ্বর্য থাকা সত্ত্বেও এই লিলিদের একটিরও মতো সজ্জিত ছিলেন না।
প্রান্তরস্থিত তৃণ— যা আজ সুশোভিত কাল ভস্মীভূত, তা যদি ঈশ্বরের দ্বারা ভূষিত হতে পারে তবে হে অল্পবিশ্বাসিগণ, তিনি কি তোমাদের অধিক সজ্জিত করবেন না? লক্ষ লক্ষ লোক শৈশব থেকে এসব কথা জানে এবং মনে করে কথাগুলি খুবই সুন্দর কিন্তু বাস্তবে প্রয়োজ্য নয়। এরা পছন্দ করে সংসারাভিজ্ঞ নীতিকথা: ভগবানে বিশ্বাস কোরো এবং সেই সঙ্গে নিজের বারুদও শুকনো রেখো। যতক্ষণ তারা এ জগতের মূল্যবোধের দ্বারা জীবনযাপন করে ততক্ষণ এ কথা ঠিক।