বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
এক্ষণে স্মরণীয় এই শতবার্ষিকী উপলক্ষে যে অবতার পুরুষের পুণ্য সাধক জীবনী আমরা আলোচনা করিতে অগ্রসর হইতেছি, তিনিও ঠিক অন্যান্য অবতার পুরুষগণের ন্যায় মানবের অধ্যাত্মজীবনে সাহায্য করিতে ও ধর্মগ্লানি দূর করিতে আগমন করিয়াছিলেন। তবে শ্রীরামকৃষ্ণজীবনে এমন একটি বৈশিষ্ট্য ছিল যাহা অন্যান্য অবতার চরিত্রে পরিদৃষ্ট হয় নাই। এ জগতে স্ত্রী, পুত্র ও ঐশ্বর্য ত্যাগের যথার্থানুষ্ঠান জীবনে ঠিক ঠিক প্রতিভাত করা বড়ই দুরূহ। এমন কি ভগবান তথাগতের জীবনীতেও আমরা দেখিতে পাই যে, দীর্ঘ ছয় বৎসরকাল কঠোর তপস্যা করিয়াও তাঁহার মন হইতে স্ত্রীপুত্রের চিন্তা সম্পূর্ণ বিদূরিত হয় নাই। অলৌকিক শ্রীরামকৃষ্ণজীবনে কিন্তু আমরা অদ্ভুত সংযম ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত প্রাপ্ত হই। তিনি কামিনী-কাঞ্চনের আসক্তি জয় করিয়াছিলেন, তাহাদিগকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করিয়া বা তাহাদের নিকট হইতে দূরে পলাইয়া নহে, পরন্তু তাহাদের মধ্যে থাকিয়াই।
তাঁহার ত্যাগের সাধনা বাস্তবিকই অলৌকিক। এক হাতে টাকা ও অপর হাতে মাটি লইয়া “টাকা মাটি, মাটি টাকা” বলিতে বলিতে উভয়কে সমজ্ঞান করিয়া গঙ্গা গর্ভে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন। সেই অবধি জগতের কোন বস্তুই তাঁহার নিকটে মূল্যবান্ বলিয়া প্রতিভাত হইত না। আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা জড়ের উপর আধিপত্য লাভের ইহা এক প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এই সময় হইতে টাকা বা কোন ধাতুদ্রব্যই তিনি স্পর্শ করিতে পারিতেন না, অজ্ঞাতসারেও স্পর্শ করিলে তাঁহার আঙ্গুল বাঁকিয়া ও শরীর নিষ্পন্দ হইয়া যাইত। বাস্তবিক ইহা আশ্চর্য নহে, কারণ তিনি অর্থকে ত্যাগ করিয়া ছিলেন পরমার্থ লাভের পথে সম্পূর্ণ অন্তরায় জ্ঞান করিয়াই, কিন্তু বর্তমান দেহাত্মবাদের যুগে মানুষের মন কিন্তু অর্থের প্রতি এমনই আসক্ত যে, তাঁহাদের অর্থোপার্জনের যন্ত্রস্বরূপ বলিলেও বোধ হয় অত্যুক্তি হয় না। অর্থোপার্জনকেই তাঁহারা পারিবারিক জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলিয়া গ্রহণ করিয়াছে, তাই অনর্থ অর্থের জন্য তাহারা অনেক সময় যে কোন প্রকার পাপকার্য করিতেও পশ্চাৎপদ হয় না। ভগবান্ শ্রীরামকৃষ্ণদেব ভোগের মাঝে তাই ত্যাগের পূর্ণ আদর্শস্বরূপে অলৌকিক সাধনা দ্বারা দেখাইলেন “টাকা মাটি” বা তুচ্ছ পদার্থ, অর্থে শান্তি নাই, পরমার্থই মানবজীবনের একমাত্র লক্ষ্য এবং ভোগের মাঝে থাকিয়াও যর্থার্থ ত্যাগকে বরণ করিয়া ঐ জ্ঞানরূপ ভগবানকে লাভ করা যায়।