বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
আপনাকে দাও তো আপনাকেও পাবে, পরও আপনার হবে। যত আপনাকে বাঁচাতে যাবে, তত আপনাকে খোয়াবে, আপনও পর হয়ে যাবে।
অবিরাম সংগ্রাম চালাও। বীরের মতো লড়, পেছনে ফিরে চেয়ো না, এগিয়ে চল। অবসন্নই হও বা ক্ষত-বিক্ষতই হও, ভ্রূক্ষেপ করো না। অভীঃ অভীঃ—ভয়শূন্য হও। কিসের ভয়? পরাজয়ের কথা মনে স্থান দিও না। মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর-পাতন। হয় জয়, নয় মরণপণ। মরতে হয় তো বীরের মতো মর। তবে তো কেল্লা ফতে হবে।
‘‘আমি অতি দীনহীন, দুর্বল, আমি কিছু পারব না,’’ বলে মিছে কাঁদুনি গেয়ে কোন ফল নেই। ওসব নড়ে-ভোলা, নিষ্কর্মা, নপুংসকের লক্ষণ, তাদের দ্বারা কি কোন কাজ হয়? উঠে পড়ে লেগে যাও, তবে তো হবে। রাস্তা অনেক দূর ও দুর্গম বলে বসে থাকলে কি রাস্তা ফুরোবে? ওঠ, পথ চলতে শুরু কর, অমনি পথ কমতে শুরু হবে। তবে তো আশা হবে, সাহস আসবে, বল আসবে, অপ্রত্যাশিত সাহায্য আসবে, পথ ও ক্রমশঃ সহজ ও সরল হয়ে আসবে। দেখতে দেখতে গন্তব্যস্থানে পৌঁছে যাবে। তখন কি আনন্দ!
অনেকের ধারণা যে সদ্গুরুর কাছে মন্ত্রদীক্ষা নিলে তাঁর কৃপায় সব দুঃখ ঘুচে যাবে। তখন দুরারোগ্য ব্যাধি সেরে যাবে, মনের মতো চাকরি হবে, ঐহিক সুখ-সম্পদ লাভ হবে, কন্যাদায় হতে মুক্ত হবে, স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় পাশ হবে, মামলায় জিত হবে, ব্যবসাবাণিজ্যের উন্নতি হবে, সংসারের জ্বালাযন্ত্রণা, অশান্তি দূর হবে, শনির দশা কেটে যাবে আরও কত কি অলৌকিক বা অপ্রত্যাশিত ভাবে হবে! তাদের জানা উচিত যে, দীক্ষা বা ধর্মলাভের সঙ্গে এসব ঐহিক লাভের ব্যাপারের কোন সম্বন্ধ নেই। আর এ-সকলের জন্যে গুরুর কাছে আবদার করা মহা হীনতা, ধর্মভাবের মোটেই লক্ষণ নয়। গুরু তো আর হর্তা, কর্তা, বিধাতা নন। তাঁকে এসবের জন্যে বিব্রত ও জ্বালাতন করা অত্যন্ত অন্যায়। তাতে তাঁর আশীর্বাদলাভের চেয়ে বিরাগভাজনই হতে হয়। তাঁর সঙ্গে মাত্র পারমার্থিক ব্যাপারের সম্বন্ধ।
সকামভাবে সেবা বা উপাসনা ব্যবসাদারী মাত্র। তাতে ঠিক ঠিক ধর্মলাভ হয় না, ফললাভ যা হয় তা অতি সামান্য, তুচ্ছ, অস্থায়ী, সহজে ক্ষয় হয়ে যায়। সকাম উপাসনায় চিত্তশুদ্ধি হয় না, ভক্তি-মুক্তি, বা শান্তি ও আনন্দলাভও হয় না! শ্রীশ্রীঠাকুর কামনা করে দেওয়া জিনিস গ্রহণ করতে, এমনকি ছুঁতেও পারছেন না। তাঁকে এই জীবনে পেতে হলে নিজের সমস্ত শক্তিসামর্থ্য দিয়ে সাধনভজন করতে হবে, তাঁকে সর্বস্ব অর্পণ করতে হবে, ষোল আনার ওপরও যদি সম্ভব হয় দিতে হবে। শ্রীশ্রীঠাকুর যেমন বলতেন—পাঁচ সিকে পাঁচ আনা বিশ্বাস-ভক্তির কথা, অর্থাৎ যেন পাত্র ছাপিয়ে গড়িয়ে যায়। সে ক’জনের হয়? তবে নিরাশ হবার কিছু নেই।
স্বামী বিরজানন্দের ‘পরমার্থ-প্রসঙ্গ’ থেকে