বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
তবে ভারতবর্ষ কখনো সমগ্রভাবে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেনি। সে ধর্মের পরিধির বহির্ভাগেই ভারতবর্ষ চিরদিন দণ্ডায়মান ছিল। ফলে খ্রীস্টধর্ম ইহুদীদের মধ্যে যে পরিণতি লাভ করেছিল, অর্থাৎ অধিকাংশ ইহুদী খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করেনি— বৌদ্ধধর্মও ভারতবর্ষে অনুরূপ পরিণতিই লাভ করেছিল এবং এভাবেই প্রাচীন ভারতীয় ধর্মের ধারা অব্যাহত ছিল।
কিন্তু তুলনাটির পরিসমাপ্তির এখানেই। কারণ খ্রীস্টধর্ম ইহুদী জাতিকে নিজ পরিধির মধ্যে গ্রহণ করতে সমর্থ না হলেও সমগ্র দেশকে নিজ প্রভাবের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। যে-সব স্থানে প্রাচীন ইহুদীধর্ম প্রচলিত ছিল—অতি অল্পকাল মধ্যে খ্রীস্টধর্ম সে-সব স্থানেও প্রবেশ করে তাকে যেন বাতিল করে দিয়েছিল।
সেজন্য প্রাচীন ইহুদীধর্ম শুধু বিক্ষিপ্তভাবেই পৃথিবীর এখানে সেখানে টিকে থাকল। কিন্তু ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মরূপী শিশুটিকে তার প্রসূতি নিজেই যেন গ্রাস করে ফেলেছিল এবং আজ বুদ্ধের নামও যেন ভারতবর্ষে প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে আজ সে-দেশের অধিকাংশ নরনারী অপেক্ষা আপনারাই হয়তো বৌদ্ধধর্মের কথা বেশি অবগত আছেন। তারা বড়জোর সেই মহাপুরুষের নামটি মাত্র শ্রবণ করেছে। তিনি একজন বিশিষ্ট মহাপুরুষ ছিলেন, ভগবানের অবতার ছিলেন— এই পর্যন্ত সংবাদ তারা হয়তো রাখে, এর অতিরিক্ত আর কিছু নয়।
সিংহল অবশ্য আজও বুদ্ধদেবের সাম্রাজ্য, এবং হিমালয়ের কোন কোন অংশেও বৌদ্ধধর্মআবলম্বীদের সংখ্যা এখনও কিছু আছে। এ-ছাড়া ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। তবে ভারতের বাইরে, এশিয়ার বিভিন্ন অংশে বৌদ্ধধর্ম বিস্তৃতি লাভ করেছিল। বৌদ্ধধর্মের অনুগামীদের সংখ্যাই পৃথিবীতে সর্বাধিক এবং এ-ধর্ম পরোক্ষভাবে অন্যান্য ধর্মের শিক্ষা ও অনুশাসনকে প্রভূত পরিমাণে প্রভাবিতও করেছে।
একদা বৌদ্ধধর্মের অনেক কিছু এশিয়া মাইনরে প্রবেশ করেছিল। খ্রীস্টধর্মে ও বৌদ্ধধর্মে প্রাধান্য এবং প্রভুত্ব নিয়ে অবিচ্ছিন্ন সংগ্রামও একসময়ে বড় কম ছিল না। খ্রীস্টধর্মের আদিযুগে নষ্টিক(Gnostics) প্রমুখ যে-সব সম্প্রদায় উদ্ভূত হয়েছিল, তাদের আচার-আচরণ, মতি-গতি বৌদ্ধদেরই অনুরূপ ছিল। আলেকজান্দ্রিয়া নগরীর বিচিত্র আবহাওয়ার মধ্যে রোমক আইনের অধীনে যে ধর্মমত সংমিশ্রণ সাধিত হয়েছিল— তারই দানে খ্রীস্টধর্মের উৎপত্তি হয়।