সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
এই সরকারের মতিগতি বোঝা দায়। আমানতকারীদের সঞ্চিত সমস্ত অর্থ সুরক্ষিত করা এবং ব্যাঙ্ককর্মীদের চাকরির নিরাপত্তার স্বার্থেই ইন্দিরা গান্ধী ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের যুগান্তকারী পদক্ষেপটি করেছিলেন। তাই ব্যাঙ্কের পরিষেবা প্রত্যন্ত গ্রামের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। মহাজনি শোষণের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে গরিব মানুষ। ঘটেছে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি। ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ করে ফের কি গরিব মানুষকে মহাজনি শোষণের হাতে ঠেলে দিতে চায় সরকার? কারণ এ সরকার গরিব দরদি নয়, কর্পোরেট তোষণকারী। এই মোদি জমানায় ২০১৭ সাল থেকে একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে অন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার পরিণতিতে পরিষেবার যে কী করুণ হাল হয়েছে তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। এমনকী সংযুক্তিকরণের পরও একাধিক ব্যাঙ্ক পরিষেবা বিশ বাঁও জলে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ইতিমধ্যে দু’টি ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য আদৌ কতটা ভালো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। না-হলে কেন নিজ দায় এড়িয়ে আত্মনির্ভর ভারতের উদ্গাতারা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের পথে হাঁটবেন? কর্পোরেট স্বার্থরক্ষায় তৎপর এই সরকার কয়লাখনি, রেল ও প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের উদ্যোগ নিয়ে কার্যত দেশের সম্পদ বেচার পথেই হাঁটছে। আর রাখঢাক না করেই এবার যে মারাত্মক সিদ্ধান্তটি নিচ্ছে তা হল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ। ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ ছিল বেসরকারিকরণেই প্রথম ধাপ। এবার একেবারে স্পষ্ট বার্তা—অদূর ভবিষ্যতে অন্তত কয়েকটি ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ হচ্ছেই। সরকার ভুলে যাচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সহায়তাতেই বহু মানুষ স্বাবলম্বী হতে পেরেছে। বিদেশি ব্যাঙ্ক বা বেসরকারি ব্যাঙ্কের কি সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষায় সেই দায়বদ্ধতা থাকা সম্ভব? বলাবাহুল্য, এই ধুরন্ধর সরকারের আমলেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কারণ, মোদি জমানাতেই দেশের টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছেন বিজয় মালিয়া, মেহুল চোকসি, নীরব মোদির মতো ব্যক্তিরা। উল্টোদিকে, মানুষের জমানো টাকার সুদের উপর কোপ পড়েছে দফায় দফায়। অর্থনীতির ব্যর্থতা ঢাকতে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে দেশের মানুষকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ সেরকমই এক প্রচেষ্টা মাত্র।
মানুষের যৎসামান্য সঞ্চিত অর্থের সুরক্ষা প্রদান সরকারের কর্তব্য। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিই এই প্রশ্নে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। বিশ্বজুড়ে মন্দার কালে তার আঁচ দেশে পড়েনি শুধুমাত্র ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা শক্তিশালী ছিল বলেই। ধসে পড়া অর্থনীতি সামাল দিতে তাই বেসরকারিকরণের নামে ঘটিবাটি বেচে দেওয়ার তোড়জোড় অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। মনে রাখা দরকার, মানুষকে ভালো রাখা সরকারের কাজ, বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া নয়।