সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
ইস্তাহারে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার যে ছবি এদেশে আঁকা হয়, তার সঙ্গে বাস্তববোধের সম্পর্ক সবসময় থাকে না। অতি সাধারণ নাগরিকটিও তা বোঝেন। তবু স্বপ্ন ফেরির প্রতিযোগিতাতেই অবতীর্ণ হয় দলগুলি। ব্যাপারটা এইরকম দাঁড়ায় যে রাজভোগ স্বপ্নেই যখন খাওয়াব তখন সবচেয়ে বড়টাই খাওয়াই! পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোট উপলক্ষে বড় দলগুলি ইতিমধ্যেই ইস্তাহার প্রকাশ করেছে। সিপিএম তথা বামফ্রন্ট এক দশক ক্ষমতার বাইরে। কংগ্রেস ক্ষমতার অলিন্দ থেকে দূরে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার দশক (২০১১-১২ সালে তৃণমূলের জোটসঙ্গী হিসেবে স্বল্পকাল রাইটার্সে অবস্থানটুকু বাদ দিলে)। বিজেপি কোনওদিনই এখানে রাজ্য-ক্ষমতার স্বাদ পায়নি। শ্যামাপ্রসাদের (মুখোপাধ্যায়) দল এবার মরিয়া হয়ে উঠেছে এত বড় অক্ষমতার ক্ষত ঢাকতে। তাই বাঙালির মন মজাতে অন্যদের থেকে অনেক অনেক বেশি স্বপ্ন ফেরি করতে হচ্ছে মোদির দলকে। ‘সোনার বাংলা সংকল্পপত্র ২০২১’ নামে যে মস্ত ইস্তাহার অমিত শাহ সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন, তা দেখে মনে হয় এটি রূপকথার রাজ্যে গিয়ে ছেপে আনা। আগামী একশো বছরেও এসব রূপায়ণ করা সম্ভব কি না বাংলার মানুষ জানে না।
স্বপ্ন দেখানো নিয়ে অনেক বিতর্ক হতে পারে। অন্য দল এটিকে ধাপ্পা, জুমলা ইত্যাদি দেগে দিতে পারে। প্রতিশ্রুতিগুলি বিশ্বাস করবেন কি না, সেটা ভোটারের স্বাধীনতা। অমানবিক কিংবা দেশ-বিরোধী না-হলে এই কারবার অন্তত আইনের চোখে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। আকাশকুসুম স্বপ্ন ফেরির লাভ-লোকসানের দায় অনেকাংশেই ফেরিওয়ালার। কিন্তু অতীত কীর্তির যে খতিয়ান দেওয়া হবে তা নির্ভেজাল হওয়াই জরুরি। কারণ সেসব সরকারি রেকর্ড। মোদির দল এবার এই নীতিও লঙ্ঘন করেছে। ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশময় প্রচার করেছে, কীভাবে ‘আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভর বাংলা’ তারা নির্মাণ করছে। ওই বিজ্ঞাপনেই দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নিজের ঘর বা মাথার উপর ছাদ পেয়ে বাংলার প্রায় ২৪ লক্ষ পরিবার আজ আত্মনির্ভর হয়েছে। বিজ্ঞাপনটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি এক গরিব মহিলার ছবিও ছাপা হয়েছে। যিনি বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আমি পেয়েছি নিজের ঘর।’ ওই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান—‘সঙ্গে আসুন এবং একসাথে মিলে আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নকে সত্যি করে তুলুন।’ মনে হয় এরই সূত্র ধরে ইস্তাহারে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা হয়েছে, ‘আমরা পিএমওয়াই-শহর এবং পিএমওয়াই-ওয়াই গ্রামীণের আওতাধীন সমস্ত বাসিন্দার পাকাবাড়ির ব্যবস্থা করব’। লজ্জার কথা এই যে, যে মহিলার ছেপে ‘আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভর বাংলা’র বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, বিষয়টি তাঁর গোচরে আনতেই জানা যাচ্ছে যে পুরোটাই ধাপ্পা। ওই মহিলাকে মোদি সরকার আদৌ কোনও ঘর দেয়নি। তিনি কলকাতা শহরে একটি ঘুপচি ঘরের বাসিন্দা, যেটি তিনি মাসিক ৫০০ টাকা ভাড়ায় নিয়েছেন। তবে তাঁর রাত কাটে খোলা আকাশের নীচে। এ কোনও রাজনৈতিক অসার দাবি নয়। সরকারের তরফে বিজ্ঞাপিত মিথ্যাচার। দুনিয়াজুড়ে যিনি নীতির রাজনীতির কথা আউড়ে চলেছেন, সেই মোদির সরকারই এই ধাপ্পা দিয়েছে! স্মরণকালের ভিতরে এত বড় প্রতারণার সাক্ষী কোনও গরিব নারীকে এবং ভারতবাসীকে হতে হয়নি। এই ঘটনা শুধু নিন্দনীয় নয়, ক্ষমার অযোগ্য এক অপরাধ। দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়ে নরেন্দ্র মোদিই প্রমাণ করুন এই ব্যাপারে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী নন। কারণ, এই ঘটনায় মহান ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদটি কলুষিত হয়েছে।