সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
জ্যোতিবাবুর প্রথম দু’টি টার্ম নিয়ে মানুষ বিশেষ উচ্চবাচ্য করেনি, কারণ মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি এবং তাদের সরকার সম্পর্কে মানুষের মোহ তখনও অটুট ছিল। সরকারের থার্ড টার্ম থেকেই পার্টি দাঁত নখ বের করতে শুরু করে। দোসরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় জ্যোতি বসুর দোর্দণ্ডপ্রতাপ সরকারও। সাক্ষাৎ হার্মাদে রূপান্তরিত হয় পার্টি ও সরকারের নিকৃষ্ট জুটি। মানুষ প্রতি মুহূর্তে প্রতিকার চেয়েছিল। তারা ভরসা করেছিল কংগ্রেসের উপর। কিন্তু রাজীব গান্ধী, নরসিমা রাও, সীতারাম কেশরী ও সোনিয়া গান্ধীর কংগ্রেস বাংলার মানুষের চোখের জলের কোনও দাম দেয়নি। দিল্লির গদি টিকিয়ে রাখতে তারা গৌড়ীয় মার্কসবাদীদের সঙ্গে নির্লজ্জ আপসের রাজনীতি করে গিয়েছে। স্বভাবতই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে সিপিএমের ওই বি-টিম আঁকড়ে থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠে। তিনি বাধ্য হলেন ১৯৯৮-এ নতুন দল গড়তে। তাঁর এক ও একমাত্র অ্যাজেন্ডা ছিল বামফ্রন্ট সরকার নামক জগদ্দল পাথরকে বাংলার বুক থেকে সরানো। সারা দেশ জানে, তাঁর হাতে গড়া দল তৃণমূল কংগ্রেস বাংলাজুড়ে ১৩ বছর যাবৎ কত গণআন্দোলন সংগঠিত করেছিল। শহরের মানুষ, গ্রামের মানুষ, মহিলা, ছাত্র, যুব, কৃষক, শ্রমিক প্রায় প্রত্যেকের স্বার্থ নিয়ে তিনি দিনরাত এক করে লড়াই করেছেন। তার জন্য বারবার মারও খেয়েছেন। তাঁর অগণিত সতীর্থ রক্ত দিয়েছেন, জেল খেটেছেন। জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের ভিত বারবার কেঁপে উঠেছে। একইভাবে কেঁপে উঠেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। আর এসবেরই যোগফল ছিল ২০১১ সালের জনসুনামি। রাইটার্স থেকে বিদায় নিয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ২৩৫-এর দম্ভ।
নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা দেশের এবং বাংলার রাজনীতির এই সাধারণ শিক্ষার কথা মনে রাখেননি। তাই তাঁরা দিবাস্বপ্ন দেখতে পেরেছেন এবং দিলীপ ঘোষদের বিভোর করেছেন সেই স্বপ্নে। বিজেপি আজ দিবাস্বপ্ন দেখে, স্রেফ কুলোর বাতাস দিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নবান্ন থেকে উড়িয়ে দেবে! গণতন্ত্রে সরকার প্রতিষ্ঠা, পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বদল—তিনটিই স্বাভাবিক। এটাই গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য, বৈশিষ্ট্য। সবটাই মানুষের চাহিদা এবং পছন্দের ব্যাপার। মানুষ যেটা মনে করবে, সেটাই হবে। মানুষ অন্ধ, বধির কিংবা অনুভূতিশূন্য নয়। তারা সব দেখে, শোনে এবং অনুভব করে—তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য কে আছে, কতটা এবং কী কী করেছে। বিবেকবান মানুষ এসব বিচার-বিবেচনা করেই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি ভোটযন্ত্রে প্রয়োগ করে। বাংলার ক্ষমতা দখল করার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে বিজেপিকে প্রথমে মজবুত সংগঠন গড়তে হতো। দল মত ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের স্বার্থে লড়াই সংগ্রাম করতে হতো। দুঃস্থ নির্যাতিত নরনারীর পাশে দাঁড়াতে হতো। ফলের আশা ছাড়াই প্রথমে একতরফা ত্যাগস্বীকারেই রাজনীতির অগ্নিপরীক্ষা। বাংলার মানুষ জানে, বিজেপি সে-পথে হাঁটেনি। মোদিবাবুদের বড় তাড়া! তাঁরা এক্ষুনি বাংলার রাজক্ষমতা ভোগ করতে চান। তাই তাঁরা সহজতম রাস্তাটি নিয়েছেন—সিঁদ কেটেছেন তৃণমূলের ঘরে। তৃণমূলের কিছু নেতা-নেত্রী, এমএলএ-এমপি-মন্ত্রীকে ভাঙিয়ে নিয়েছেন। ভেবেছিলেন, অতএব কেল্লা ফতে! কিন্তু তাঁদের ভাবনার গোড়ায় ছিল বড় গলদ। কিছু বাতিল নেতা-মন্ত্রীকে কব্জা করা মানেই তাঁদের একদা সমর্থক বা ভোটারদের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠা নয়। সমর্থক এবং ভোটাররা সবসময় স্বাধীন। তাঁদের এই মনোভাবেরই প্রকাশ আমরা দেখতে পাচ্ছি দিকে দিকে। তৃণমূলের ডাস্টবিন কুড়িয়ে আনা নেতাদের প্রার্থী হিসেবে কিছুতেই মানবেন না বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। প্রতিবাদীরা হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রভৃতি নানা জায়গায় বিজেপির ভিত কাঁপাতে নেমে পড়েছেন। প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে বিজেপির কলকাতায় হেস্টিংসের অফিসেও। তাও তো এখনও পুরো তালিকা ঘোষণার সাহস পায়নি মোদির দল। অনুমান করা যায়, মনোনয়ন পর্বেই আরও অনেক দুর্ভোগ অপেক্ষা করে আছে বিজেপির কপালে। ভোটগ্রহণ, গণনা, ক্ষমতা দখল—এখনও দীর্ঘ চড়াই উতরাই। বাংলায় বিজেপি হাবডুবু খাচ্ছে স্বখাত-সলিলে।