সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
নিয়মানুযায়ী প্রতিবাদ জানিয়েও, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিক মমতা ব্যাপারটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন। তিনি নিশ্চিত যে মানুষ যথাসময়ে যথাস্থানেই সমুচিত জবাবটি দেবেন। তাঁর দল ২৯১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে সবার আগে। তৃণমূল সুপ্রিমো ঘোষণা করেছেন, আসলে সব আসনের প্রার্থী বকলমে তিনিই স্বয়ং। বিজেপিকে সবচেয়ে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন নন্দীগ্রাম থেকে। তাঁর এই মাস্টার স্ট্রোকের জন্য সম্ভবত কেউই প্রস্তুত ছিল না—হয়তো বিজেপি নেতৃত্ব কল্পনাও করেনি। মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন সৎ ও অসীম সাহসী নেতা কাকে বলে, নেতৃত্ব সামনে থেকেই দিতে হয়। নন্দীগ্রামে ভোট নেওয়া হবে দ্বিতীয় দফায়—১ এপ্রিল। এই উপলক্ষে মমতা বুধবার তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন। অসংখ্য মানুষের সাদর অভ্যর্থনায় তিনি অভিভূত হয়ে যান। নন্দীগ্রামের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে ভোটযন্ত্রে তারা কী উত্তর দিতে চলেছে। আর সেদিনই আক্রমণের শিকার হলেন মমতা, নন্দীগ্রামেরই মাটিতে। বাঁ পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। আঘাত পেয়েছেন মাথায়ও। রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েন। গ্রিন করিডর করে তাঁকে দ্রুত কলকাতায় আনা হয়। এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তৃণমূল পার্টি এবং স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগ, এই ঘটনা একটা গভীর চক্রান্ত। যদিও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এটা নতুন কিছু নয়। ক্ষমতা আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বৈশিষ্ট্য। সিপিএমের অপশাসনের বিরুদ্ধে, বাংলায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি লড়াই করেছেন একের পর এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে। এজন্য তিনি আক্রান্ত হয়েছেন কখনও দক্ষিণ কলকাতার হাজরায়, কখনও রাইটার্সে এবং এই নন্দীগ্রামেও। ২০০৭-এ নন্দীগ্রামে কৃষকদের মাটিরক্ষার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে গেলে তাঁকে পেট্রল বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল। তার আগে পরেও তাঁকে মারার একাধিক চক্রান্ত হয়েছে।
কিন্তু কোনওবারই তাঁকে দমানো যায়নি। জনগণের স্বার্থে তাঁকে লাগাতার লড়াই করতে হয়েছে, ঘরে বাইরে—এইভাবে আক্ষরিক অর্থেই জননেত্রী হয়ে উঠেছেন তিনি। বুধবার নন্দীগ্রামে আক্রান্ত হওয়ার পরও দমে যাননি মমতা—তীব্র যন্ত্রণা দাঁতে দাঁত চেপে সয়ে ঘুরে দাঁড়াবার সংকল্প ঘোষণা করেছেন। দিকে দিকে মানুষ এই ঘটনার নিন্দা করেছেন, প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। সেটাই স্বাভাবিক। তবু সবার ‘দিদি’ আশ্বস্ত করেছেন, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে লড়াইয়ের ময়দানে ফিরছেন। সবাইকে মাথা ঠান্ডা রাখার এবং শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। যথার্থ নেত্রীর মতোই তাঁর এই আহ্বান ও ভূমিকা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় হতাশ সারা বাংলা। যে কমিশন ‘সুষ্ঠু ও অবাধ’ নির্বাচন করার জন্য কোমর বেঁধেছে বলে দাবি করছে, দু’-এক দফার বদলে আট দফায় ভোট নিচ্ছে, রাজ্য পুলিসের জিজিকে সরিয়ে দিচ্ছে, আরও কিছু অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া নিরাপদ মনে করেছে, সেই কমিশন এত বড় ঘটনার দায় নেবে না কেন? বাংলার তো বটেই, পাঁচ রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে ওজনদার প্রার্থীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হয়ে যাওয়ার পর তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব কমিশন ছাড়া আর কারও উপর বর্তায় না। কমিশন সেই গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যপালনে পুরো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এর জবাব যেমন কমিশনকে দিতে হবে, তেমনি এই বিপজ্জনক খেলার নপুংসক নায়কদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে হবে। এই ন্যায্য দাবি বাংলার প্রতিটি শান্তিকামী মানুষের।