সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
মোদি জমানায় যেভাবে দফায় দফায় জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষের একেবারে প্রাণান্তকর অবস্থা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য জেনেও সরকারের কোনও হেলদোল নেই। অথচ গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ঋণনীতি ঘোষণার সময়ে মূল্যবৃদ্ধি ফের মাথাচাড়া দিতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন। সুদের হারও তাই অপরিবর্তিত রেখেছিলেন। সেই আশঙ্কাটিই সত্য হল। শুক্রবার ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, গত মাসে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ৫.০৩ শতাংশ। অথচ জানুয়ারিতে সেই হার ছিল ৪.০৬ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের মধ্যে এই হার এক শতাংশ বেড়েছে। তাই খুচরো বাজারে একমাসে এক শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি যথেষ্ট উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। নির্লজ্জের মতো কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, মূলত জ্বালানি তেল ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই বেড়েছে মূল্যবৃদ্ধির হার। জানুয়ারি মাসে এই হার কম থাকার কারণ হিসেবে শীতের শুরুতে কাঁচা আনাজের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকার যুক্তিটি খাড়া করেছে। সরকার যাই যুক্তি দিক সাধারণ মানুষ অতশত বোঝে না, বুঝতে চায়ও না। তারা বুঝতে পারছে মোদি সরকারের তুঘলকি কাণ্ডকারখানা মানুষের রান্নাঘরকেও রেহাই দিচ্ছে না। কারণ নানা ছলচাতুরির আশ্রয়ে এই সরকার ক্রমাগত গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে এবং চুপিসারে কমিয়েছে গ্যাসের ভর্তুকি। আর জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য জেনেও সরকারি কোষাগার ভরানোর চেষ্টা করছে শুল্ক বা সেস আদায়ের মাধ্যমে। রাজ্যের ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগেই জনস্বার্থে মমতা সরকার তার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে লিটার পিছু এক টাকা কর ছাড়ের ঘোষণা করলেও কেন্দ্র সে পথে হাঁটেনি। কারণ তাদের ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা থেকে উতরানোর জন্য সবচেয়ে সহজতম উপায়টিকেই তারা বেছে নিয়েছে। মানুষের উপর কোপ বসিয়ে আয়বৃদ্ধির রাস্তাটিকে শ্রেয় মনে করেছে। এই হল একটি স্বেচ্ছাচারী সরকারের জনকল্যাণের নমুনা! সরকার বাহাদুর যত খুশি গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে রাজকোষ ভরানোর চেষ্টা করুক তা যেমন অমানবিক, তেমন অন্যায়ও। কারণ সরকারের এই মনোভাবের জন্য গরিব মধ্যবিত্তের জীবনে যে আঘাত নেমে এসেছে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় দেখা যাচ্ছে না। মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় ঘরে ঘরে ত্রাহি ত্রাহি রব। তা কর্ণগোচর হচ্ছে না এই সরকারের। এই মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুতেই কী মারাত্মক চাপে পড়েছিল মনমোহন সিং সরকার তা সম্ভবত ভুলে গেছে এরা। কে বলতে পারে এই ইস্যুতেই হবে না পতনের শুরু? তাই সাধু সাবধান। অবশ্য তুল্যমূল্য বিচারে মূল্যবৃদ্ধিতে মনমোহন সরকারকে ছাপিয়ে গেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। এই জমানাতেই জ্বালানি তেল ও গ্যাসের রেকর্ড দাম হয়েছে। খাদ্যপণ্যের দামও হয়েছে লাগাম ছাড়া। এই পরিস্থিতির দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। গ্যাস ও তেলের দাম নিয়ে সরকারের অনাচারকে কোনও অজুহাত খাড়া করেই আর আড়াল করা যাবে না।
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়। পেটে ভাত না জুটলে কোনও ধর্মকর্ম বা হিন্দুত্ববোধ নীতিকথা কাজে লাগে না। হুজুগে মাতিয়ে রাখাও যায় না। তাই মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় ঘরে ঘরে যে ক্ষোভের আগুন জ্বলতে শুরু করেছে তা কোনও বাগাড়ম্বর বা অসত্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেভানো সম্ভব কি? সরকার বাহাদুর কি এই সহজ সত্যটি বুঝতে পারছেন? ললাটলিখন যদি পড়তে পারেন তাহলে এখনই সতর্ক হওয়া দরকার। আগে দরকার মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা।