রাহুল দত্ত, ঝাড়গ্রাম: একটা সময় জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে মহুয়া খাওয়ার প্রবণতা দেখা যেত। তবে কোনও সময়েই ওই নেশা এখানকার মানুষের উপর চেপে বসতে পারেনি। কিন্তু, এখন শুধু মহুয়া নয়, গাঁজা, চরস, হেরোইন সহ আরও বিভিন্ন দামি মাদকের নেশা গ্রাস করছে এখানকার যুব সমাজকে। বিশেষভাবে শহুরে যুবকদের একাংশ এখন বুঁদ হয়ে থাকতে চায় মাদকের নেশায়। তবে ভোটের বাজারে এনিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে বিশেষ হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। যদিও দরজায় দরজায় প্রচারে গিয়ে এ নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে সব দলের প্রার্থীকেই। ক্ষমতায় এলে এই সমস্যার সমাধান হবে, আশ্বাস দিচ্ছেন প্রার্থীরা। কিন্তু, শুধু আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন বাসিন্দারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝাড়গ্রামের এক বাসিন্দা বললেন, এই সমস্যা ঝাড়গ্রামে নতুন নয়। ডুয়ার্সের চা বাগানে সন্ধ্যা নামলেই মানুষকে নেশায় ডুবে যেতে দেখা যায়। কিন্তু, জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। ওড়িশার সীমান্ত পেরিয়ে নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর হয়ে বিভিন্ন মাদক ঝাড়গ্রামে ঢুকছে। তারপরে সস্তায় তা যুব সমাজের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন করতে না পারলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে, আশঙ্কা বাসিন্দাদের। তাই প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি প্রচারে এলে সকলেই এই সমস্যার দিকে নজর দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন। এ বিষয়ে ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী সুখময় সতপথী বলেন, প্রচারে গিয়ে যুবদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছি। এটা এখন ঝাড়গ্রামে জ্বলন্ত সমস্যা। এ বিষয়ে প্রশাসনিক স্বদিচ্ছা দরকার, বলেন সুখময়বাবু। একইভাবে মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী মধুজা সেনরায় বলেন, সীমান্তে নজরদারি আলগা হওয়ার কারণেই এটা হচ্ছে। এর জন্য কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকারই দায়ী। স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে তুললে, তবেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
এ বিষয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাদকের নেশাই সম্প্রতি দু’টি তরতাজা প্রাণকে কেড়ে নিয়েছে। তাও কারও হুঁশ ফেরেনি। মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর সময় দুর্ঘটনায় তাঁদের প্রাণ গিয়েছে। এরপরে কিছুদিন ধরপাকড় হলেও ভোট আসতেই যে কে সেই অবস্থা। ফলে দেদারে দামি দামি মাদক ঢুকছে ঝাড়গ্রামে। মাদক যে ঢুকছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্য পুলিসের এক কর্তাও। তাঁর দাবি, পুলিস খবর পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। আগেও বহু ধরপাকড় হয়েছে। বিপুল পরিমাণ মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। প্রশাসন এবিষয়ে সচেতন। যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে সচেতনতা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। এদিকে, এবিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা নয়াগ্রামের প্রার্থী দুলাল মুর্মু বলেন, এটা গোটা সমাজেরই ক্ষতি করছে। এ বিষয়ে বিশদে তিনি কিছু জানেন না। প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাবেন।