সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
মোদির নেতৃত্ব সাতবছর যাবৎ যেন এই তত্ত্বটিকেই প্রতিষ্ঠা দিয়ে চলেছে। কেন্দ্রে মোদি সরকার তৈরি হওয়ার পর থেকে অর্থনীতি ক্রমে পিছনের দিকে হাঁটছে। কোভিড পরিস্থিতিতে বেরিয়ে পড়েছে হাঁড়ির হাল! নোটবন্দি থেকে ত্রুটিপূর্ণ জিএসটির জোড়া ধাক্কায় গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে। ধনী হয়েছে আরও ধনী। বেড়েছে কালো টাকার কারবার। কালো টাকার কারবারিদের অবাধ লুটপাটে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নাভিশ্বাস ছুটেছে। বড় মাপের কয়েকজন লুটেরা দেশ থেকে
কেটে পড়েছে সরকারি প্রশাসনের চোখের সামনে। এটাকে কী বলা হবে—চোখে ধুলো দেওয়া নাকি সেফ প্যাসেজ করে দেওয়া? পাঁচ-ছ’বছর ধরে যারা লুটেরাদের দেশে ফেরানোর নিম্নমানের নাটক করে চলেছে, জবাবটা তাদের দিতে হবে। তেল এবং গ্যাসের দামে রেকর্ড বৃদ্ধির ফলে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে কর্পোরেটরা। নতুন কৃষি আইনগুলিরও লক্ষ্য যে কর্পোরেটদের পেট মোটা করা, তাও দিনে দিনে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ওই আইনে কীসের এত আঠা যে বিজেপির মুরুব্বিরা আইনগুলি সংশোধনে কোনওভাবেই রাজি হচ্ছেন না! আন্দোলন করে, প্রতিবাদ করে কৃষকরা মরে গেলেও সরকার তাঁদের পাশে থাকতে পারছে না। রহস্যটা কী? কেরোসিন এবং রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি প্রায় তুলে দেওয়া হয়েছে। তাতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন দারিদ্রসীমার নীচের মানুষজন, এমনকী অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও। মোদি জমানায় নতুন সরকারি চাকরি কী হয়েছে, সাধারণ মানুষ জানে না, সবটাই সংখ্যাতত্ত্বের কারসাজি মাত্র। বেসরকারি চাকরি এবং এমএসএমই মারফত কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। লকডাউন তথা করোনা পরিস্থিতিতে কত গরিব মানুষ যে নতুন করে বেকার হয়ে পড়েছেন তার হিসেব সরকারও দিচ্ছে না। বেসরকারি গবেষণার
রিপোর্ট কিন্তু ভয়ানক। করোনা সংক্রমণ মাঝে নিয়ন্ত্রণে এলেও চাকরিবাকরির পরিস্থিতিতে যে খুব একটা ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে এমনটা নয়। অথচ এই মুহূর্তে ছোটবড় মিলিয়ে ১৭টি রাজ্যে মোদির ক্ষমতা জারি রয়েছে। এগুলির মধ্যে ১২টি রাজ্যে যোগী আদিত্য নাথ, বিজয় রুপানি, শিবরাজ সিং চৌহান, বি এস ইয়েদুরাপ্পা, মনোহরলাল খট্টর, সর্বানন্দ সোনোয়াল, বিপ্লবকুমার দেব প্রমুখ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। আরও পাঁচটি রাজ্যে চলছে এনডিএ সরকার। তামিলনাড়ুতে এআইএডিএমকে সরকারে বিজেপির মন্ত্রী না-থাকলেও সেটিকেও এনডিএ সরকার হিসেবেই গণ্য করতে হবে। জম্মু ও কাশ্মীরে চলছে রাষ্ট্রপতির শাসন। মানে ওখানেও সরকারি কর্তৃত্ব পুরোপুরি কেন্দ্রের। সব মিলিয়ে ভারতের বেশিরভাগ জায়গায় বিজেপির ডবল ইঞ্জিন চালু রয়েছে। তাহলে দেশজুড়ে এই হতশ্রী দশার ‘কৃতিত্ব’ বিজেপি পার্টি এবং নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা নেবেন না কেন?
উল্টো দিকে, পশ্চিমবঙ্গে দশবছর যাবৎ চলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশের ভিতরে বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে বাংলা। এই পর্বে আর্থিক বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যরক্ষা, নারীর সুরক্ষাসহ শান্তিশৃঙ্খলা অক্ষুণ্ণ রাখা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলা দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা নিতে পেরেছে। ডবল ইঞ্জিনের মোহভঙ্গ হয়েছে মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়ের মতো অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে। পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে এনডিএ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে যথাক্রমে অকালি দল এবং শিব সেনা। রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড এবং ছত্তিশগড়েও সরকার পুনর্দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। অসম এবং ত্রিপুরার মানুষের মোহভঙ্গের খবর এখন দেশময়। তার জবরদস্ত প্রকাশের জন্য মানুষ আপাতত শুধু সুযোগের অপেক্ষায়। বুধবার বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে মোক্ষম কথাটি বলে গিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। বিজেপি দেশজুড়ে লুটের কারবার মজবুত করার জন্যই ডবল ইঞ্জিন তত্ত্ব বাজারে ছেড়েছে। তিনি বাংলার মানুষকে শুনিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডের মানুষ কীভাবে বিজেপিকে আছাড় মেরেছেন। অথচ লোকসভার ভোটে ১৪টির মধ্যে ১৩টি আসনে জয়ী হয়েছিল এই বিজেপি। তাহলে বিজেপির জন্য দেশজুড়ে কি এই ভাষাতেই দেওয়াল লিখন এগিয়ে চলেছে? ডবল ইঞ্জিন তত্ত্ব নস্যাৎ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা নয় কি?