সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
এ গেল আদর্শ পরিস্থিতির কথা। বাস্তবটা এত সহজ নয়। কারণ রাজনীতি আজ আর নিছক জনসেবা নেই। রাজনীতি একটি লোভনীয় পেশায় পরিণত হয়েছে। রাজনীতি হল রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের একমাত্র হাতিয়ার। রাষ্ট্রক্ষমতার অধীশ্বরই সর্বোচ্চ মান্য ব্যক্তি। তাঁদের কাছাকাছি থাকার সুযোগ যাঁরা পান তাঁরাও বিশেষ ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করেন। সব মিলিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থার উপর রাজনীতিকদের যত না আস্থা তার চেয়ে বেশি লক্ষ্য থাকে নির্বাচন ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তারের। লোকসভা এবং বিধানসভার ভোট সম্পন্ন করার দায়িত্ব ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) উপর। এটিও একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। ইসিআই একটি স্বাধীন স্বশাসিত সংস্থা হলেও তার নিজস্ব কর্মিবল সামান্যই। লোকসভা বা বিধানসভার ভোটের মতো রাজসূয় যজ্ঞ উতরে যেতে কমিশনকে সরকারি প্রশাসনের উপর বিশেষভাবে নির্ভর করতে হয়। ভোটার তালিকা তৈরি ও সংশোধন, ব্যালট বা ভোটযন্ত্র (ইভিএম) সমেত বুথ সাজানো সবই করেন সরকারি কর্মীরা। ভোটগ্রহণের দিন পোলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার থেকে বুথের গার্ড সবকিছুই নেওয়া হয় সরকারি কর্মী এবং পুলিস বাহিনীর ভিতর থেকে। ব্যালট বা ইভিএমের স্ট্রংরুম পাহারা থেকে ভোট গণনা, সবেতেই তাঁরা। রাজনীতির কারবারিদের লক্ষ্য থাকে এই গোটা ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তার করার। রাজনৈতিক দলগুলির অভিজ্ঞতা হল, স্বশাসিত ও নিরপেক্ষ সংস্থা বলা হলেও ইসিআই তাদের এই সুনাম ও সাংবিধানিক পবিত্রতা রক্ষা করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। অনেক সময় তারা ব্যবহৃত হয়েছে কেন্দ্রীয় শাসকদের হাতের পুতুলের মতোই। কমিশনের মাধ্যমে অনেকাংশেই দিল্লীশ্বরদের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। বিশেষ করে রাজ্যে বিরোধী (কেন্দ্রীয় শাসকের বিরোধী) দলের সরকার থাকলে এই প্রবণতা লাজলজ্জার সীমাটুকুও অতিক্রম করে ফেলে।
এবার পশ্চিমবঙ্গও কি এই প্রবণতায় আক্রান্ত? প্রশ্ন উঠেছে। নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ আগে থেকেই বাংলা দখলের হুংকার দিয়ে রেখেছেন। সেইমতো তাঁরা ব্যবহার করেছেন রাজভবনকে। রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের শাসক দলকে সবক শেখানোর জন্য বারবার লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে সিবিআই, ইডি প্রভৃতি সেন্ট্রাল এজেন্সিকে। তাতেও বোধহয় সুবিধে হয়নি। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উপর নির্বাচন কমিশনের ক্রমাগত চাপবৃদ্ধির ঘটনা কি তারই অনুক্রম নয়? কলকাতা পুলিসের কমিশনার, রাজ্য পুলিসের ডিজি, মুখ্যমন্ত্রীর সিকিউরিটি-ইন-চার্জ সহ অনেক অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হুকুম জারি হয়েছে, এবার কোনও বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে রাজ্য পুলিস থাকতে পারবে না। সেখানে থাকবে শুধুই কেন্দ্রীয় বাহিনী। এমনকী জেলাশাসক এবং মহকুমা শাসকদেরও ঘিরে থাকবে তারা। প্রশ্ন ওঠে, শুধুমাত্র মোদির প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত লোকজনই পবিত্র এবং দক্ষ? মমতার প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন ওই দুই প্রশ্নেই ‘কমা’! তাহলে তো সাংবিধানিক ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে। কারণ রাজ্যের প্রশাসন দেশের আইন এবং সংবিধানের হুকুমই তামিল করে চলেছে। বিজেপির গোপন মতলবটা ফাঁস হয়ে গিয়েছে অন্যভাবে: ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে বেআইনি জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের নামে সম্প্রতি ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন মুখ্যমন্ত্রীর চিফ ইলেকশন এজেন্টও। মেট্রো ডেয়ারি ইস্যুতে হঠাৎ এখন নোটিস ধরানো হয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে। সবটাই প্রেশার পলিটিক্স। নানাবিধ কেন্দ্রীয় এজেন্সি এবং নির্বাচন কমিশনকে সামনে রেখে মোদি সরকার কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে বিজেপির স্বার্থে বিশেষভাবে ব্যবহার করবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়? পবিত্ররক্ষার প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের এখনই সতর্ক হওয়া উচিত। অন্যথায় তারা দেশবাসীর আস্থা ও বিশ্বাস হারাবে। ভারতের গণতন্ত্রের পবিত্রতা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিরপেক্ষ ভূমিকার উপর।