উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
লাখো মানুষের জনস্রোতের কাছে মমতার আবেদন, জেলার তিনটি আসনই চাই, তবেই না ৪২-এ ৪২ হবে। মুর্শিদাবাদের তিনটি পেলেই বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ। এদিন বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী অপূর্ব (ডেভিড) সরকারের সমর্থনে কান্দিতে এবং জঙ্গিপুরের প্রার্থী খলিলুর রহমানের সমর্থনে বড় শিমূল এলাকায় দুটি সভা করেন মমতা। দুটি কেন্দ্রেই ঘাসফুলের সঙ্গে মূল লড়াই হাত শিবিরের। মুর্শিদাবাদে আবার জোড়াফুল শিবিরের লড়াই কাস্তে-হাতুড়ির সঙ্গে। কান্দির এদিনের জমায়েত অধীর তথা কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়ালেও, জমায়েতের সমস্ত সংজ্ঞা ফিকে করে দেওয়া জঙ্গিপুরের সমাবেশ, কংগ্রেস প্রার্থী প্রণবপুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ঘুম ছোটানোর জন্য যথেষ্ট বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এক সময় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা ছিলেন মহম্মদ সোহরাব। জঙ্গিপুরের এই ভূমিপুত্র এখন ভোটযুদ্ধে মমতা শিবিরের অন্যতম সেনাপতি। তাঁর কথায়, এতদিনে পরিবর্তনের প্রবল হাওয়া বইছে মুর্শিদাবাদ জুড়ে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জঙ্গিপুরে এত সভা দেখেছি, কিন্তু এদিনের সভা অতীতের সব রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে।
বহরমপুর আর জঙ্গিপুর দুটি আসনই দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে কংগ্রেস। আর সেই কারণেই এদিনের দুটি সভায় মমতার মূল টার্গেটে ছিল কংগ্রেস তথা তাদের দুই প্রার্থী। তোপ দেগেছেন নরেন্দ্র মোদি আর তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধেও। ঝাঁঝ ছিল তৃণমূল সুপ্রিমোর ভাষণে। দীর্ঘদিনের সাংসদ হিসেবে অধীরবাবু আর অভিজিৎবাবু কোন কাজটা করেছেন মুর্শিদাবাদের স্বার্থে, তা নিয়েও জনতার কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি। কান্দির সভায় মমতা জানতে চান, আপনাদের যে এমপি, কোথায় থাকেন? জনতার মধ্যে থেকে কেউ বললেন দিল্লি, কেউ বললেন কলকাতা। এক যুবক ভিড় থেকে চিৎকার করে বলে ওঠেন, বৈদিক ভিলেজে। মমতার জবাব, জানেন দেখছি। জঙ্গিপুরের সভায় তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, মুর্শিদাবাদে যা উন্নয়ন চোখে পড়ে, তা আমরা করেছি। সাগরদিঘির নতুন ইউনিট, জঙ্গিপুর, ডোমকল সহ আরও কয়েকটি জায়গায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, কিষান মান্ডি সহ আরও অনেক কিছু। বিরক্তির সুর মমতার গলায়, ৩৬৫ দিন কাজ করে যাব আমরা, আর বাবুরা হিল্লি-দিল্লি করে ভোটের সময় বসন্তের কোকিলের মতো আসবেন, আবার চলেও যাবেন। কেন মানুষ ভোট দেবে তাঁদের? সমস্বরে জবাব দেয় জনতা, এবার আর দেব না। সভাস্থল জুড়ে নাগাড়ে বেজে চলল নানা বাদ্যযন্ত্র। সঙ্গে সমানতালে করতালি আর হর্ষধ্বনি।
ভিড়ের মুড বুঝে সুর আরও চড়ালেন মমতা। বললেন, এখানে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানেই বিজেপির হাত শক্ত করা। বহরমপুর আর জঙ্গিপুরের কংগ্রেস প্রার্থীকে মদত দিচ্ছে আরএসএস এবং বিজেপি। চোপড়ার সভায় প্রথম এই অভিযোগ করেছিলেন মমতা। এদিন জঙ্গিপুরে দাঁড়িয়ে নাম না করে অধীরবাবু ও অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধে ফের সেই একই অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেন, এখানে কংগ্রেসের হয়ে বিজেপি এবং আরএসএস কাজ করছে। বহরমপুরেও তাই। আপনারা জানেন সেটা? ফের সমস্বরে জবাব, হ্যাঁ, জানি। এই কংগ্রেসকে ভোট দেবেন? সোল্লাসে জবাব, না।
বিজেপি এবার ফিরছে না। সব জায়গায় ‘জিরো’। তাহলে কী করে হবে ‘হিরো’? মমতার এহেন সরস রাজনৈতিক উপমায় হাসির রোল ওঠে সভাস্থলে। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, বাচ্চা ছেলে কাচের গ্লাস ভাঙলে, তাকে বকাবকি করি, অনেক সময় রেগে থাপ্পড়ও মেরে দেন কেউ কেউ। আর যে বড় খোকাটা দেশটাকে ভাঙছে, তাঁকে কী করা উচিত? নাম না করে মোদিকে এহেন কটাক্ষের সঙ্গে প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন মমতা। এদের বিরুদ্ধে এক একটা ভোট মানে গালে একেকটা থাপ্পড়। সেটাই জবাব।