উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
উত্তর ২৪ পরগনার উদ্যানপালন আধিকারিক শুভদীপ নাথ জানিয়েছেন, বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য কৃষককে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। উঁচু জমিতে চাষ করতে হবে। জমির জলনিকাশি ব্যবস্থা যেন খুব ভালো হয়। বীজতলা অবশ্যই উঁচু জমিতে করতে হবে। ৪০-৪৫দিনের চারা লাগাতে হবে মূল জমিতে। চারা লাগানোর পর থেকে একমাস সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইসময় পরিচর্যায় ঘাটতি হলে গাছ মারা যেতে পারে। মার খেতে পারে ফলন। মূল জমিতে বসানোর পর যেন চারার গোড়ায় কোনওভাবে জল না দাঁড়ায়। তা হলে গাছ মারা যাবে। অনেক কৃষক বর্ষাকালীন পেঁয়াজের চাষ করেন, কিন্তু বীজতলায় নজর দেন না। শীতকালীন পেঁয়াজের ক্ষেত্রে যেমন অনেক কৃষক বীজতলায় সুখসাগর জাতের বীজ ছিটিয়ে বোনেন, বর্ষাকালীন পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও সেটাই করে থাকেন। কিন্তু তা করলে চলবে না। বর্ষাকালীন পেঁয়াজের বীজতলায় বীজ লাইনে বুনতে হবে। মূলজমিতে ভেলি করে চারা বসাতে পারলে ভালো। নতুবা প্রথম চাপান সার দেওয়ার পর গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। অনেক জমি অল্প কাদা করে পেঁয়াজের চারা গেঁথে দেন। এটা না করে পেঁয়াজ একটু ভাসিয়ে অর্থাৎ গোড়া হাল্কা রেখে চাষ করলে ভালো। এতে পেঁয়াজ আকারে বড় হয়। বিঘায় ৪০ কুইন্টাল ফলন পাওয়া যায়। বর্ষাকালীন পেঁয়াজ ডিসেম্বরের গোড়ায় ওঠে। গাছ তখন সবুজ থাকে। ফলে বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না যে, পেঁয়াজ পরিপক্ক হয়েছে কি না। সেক্ষেত্রে এক লিটার জলে ১০০ গ্রাম নুন জল ছিটিয়ে দিয়ে গাছের মাথার দিকটা মুচড়ে দিতে হবে। বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে সরকারি অনুদানও মিলছে। এজন্য উদ্যানপালন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এ রাজ্যে বর্ষাকালীন পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনও শুরু হয়েছে। তাছাড়া ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানিগুলি বীজ বিক্রি করছে।
ঝাঁঝরি দিয়ে দিনে ২-১ বার জল দিতে হবে। বর্ষার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়া দরকার। জমি তৈরির সময় শেষ চাষের আগে বিঘায় ৫ টন গোবরসার, ৮০ কেজি অ্যামোনিয়াম সালফেট, ১০০ কেজি সুপার ফসফেট, ৪০ কেজি পটাশিয়াম সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষাকালীন পেঁয়াজের জন্য শ্রাবণের শেষ থেকে আশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত চারা রোয়া করার সময়। ২০-২৫ সেন্টিমিটার উচ্চতার ৬-৭ সপ্তাহের চারা মূল জমিতে বসাতে হবে। মূলসার হিসেবে ইউরিয়া ২২ কেজি, সুপার ফসফেট ৩ কেজি শেষ চাষের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা বসানোর ৩০ ও ৬০দিন পরে প্রতিবারে ১১ কেজি ইউরিয়া ও ৮ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। কন্দ ফসলে পটাশের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম বোরণ ৩০ ও ৬০ দিন পর দু’বার স্প্রে করতে পারলে ভালো। পেঁয়াজের বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য ঠিকমতো সেচ দেওয়া জরুরি। জমিতে যেন আগাছা না থাকে। ১২৫-১৪০ দিনের মাথায় পেঁয়াজ তোলা যায়। গাছ পুরো শুকিয়ে যাওয়ার পর পেঁয়াজ তোলার কাজ শুরু করতে হবে। পেঁয়াজ তোলার ১৫ দিন আগে সেচ বন্ধ করতে হবে। পেঁয়াজ তোলার পর জমিতে ফেলে রাখা চলবে না। এতে রোদ লেগে পেঁয়াজ ঝলসে যেতে পারে। ছায়ায় ছড়িয়ে রাখতে হবে।
কন্দের গলার দিক যদি মোটা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে কন্দ ঠিকমতো পরিপক্ক হয়নি। পেঁয়াজ গাছের মাটির উপরের অংশের ৫০ শতাংশ যদি শুকিয়ে ঢলে পড়ে, তাহলে ধরে নিতে হবে পেঁয়াজ ঠিকমতো পরিপক্ক হয়েছে। পাতা ঝলসানো রোগ পেঁয়াজের মারাত্মক ক্ষতি করে। এটি এক ধরনের ছত্রাকঘটিত রোগ। আক্রান্ত গাছের পাতায় সাদা ভেজা ভেজা দাগ দেখা যায়। ডাইথেন এম ৪৫ প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ডাউনি মিলডিউ, এটিও ছত্রাকঘটিত রোগ। ব্লাইটক্স স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম মাত্রায় স্প্রে করতে হবে। পাতার ডগা শুকনো রোগ হয়ে থাকে পটাশের অভাবে। অল্প বয়সি গাছের পাতা শুকিয়ে কুঁচকে যায়। সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। পেঁয়াজের গোড়াপচা রোগটিও ছত্রাকঘটিত। একটানা একই জমিতে পেঁয়াজ চাষ করলে এই রোগ দেখা দেয়।