হ য ব র ল

সাইকেলে বিশ্বজয়!

যখন মেসোপটেমিয়ায় ছিলেন, তখনই বিশ্ব ভ্রমণের‌ কথা মাথায় আসে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর একটি সাইকেল জোগাড় করে রামনাথ বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গী ছিল এক জোড়া চটি, দু’টি চাদর ও একটি সাইকেল। ক্যারিয়ারে একটি বাক্সে রাখা ছিল সাইকেল মেরামতির কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। ১৯৩১ সালের ৭ জুলাই সিঙ্গাপুরের কুইন স্ট্রিট থেকে যাত্রা শুরু করল ‘রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’। হ্যাঁ, ঠিক এই কথাটিই লেখা ছিল রামনাথের সাইকেলের গায়ে।

সোমা চক্রবর্তী: পৃথিবীতে বিস্ময়ের শেষ নেই! আর এই গ্রহে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক কর্মক্ষমতার অধিকারী মানুষ। এই জীবজগতের শ্রেষ্ঠ জীব। সে কী না পারে! কত দুর্গমকে লঙ্ঘন করার চেষ্টায়, কত অজানাকে জানার প্রচেষ্টায় জীবন বিপন্ন করেছে, সেকথা বলে শেষ করা যাবে না । এমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছিলেন ভারতের প্রথম ভূ-পর্যটক রামনাথ বিশ্বাস। তিনি শুধু প্রথম ভারতীয় ভূ-পর্যটক এই কথাটা বললে ভুল হবে। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম সাইকেল আরোহী ভূ-পর্যটক। সাইকেলে চড়ে সমগ্র পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন। দু’ চাকার চক্রবাহনে কেমন ছিল এই গ্রহটিকে দেখা? জানতে গেলে পড়তে হবে তাঁর লেখা বই। নানা ভ্রমণ কাহিনি, নানা অভিজ্ঞতা দ্বারা ঋদ্ধ সেই বইগুলি।
১৮৯৪ সাল। অবিভক্ত ভারতের সিলেট জেলার বানিয়াচং গ্রামে ১৩ জানুয়ারি গুণময়ী দেবীর কোল আলো করে এলেন এই বিস্ময় বালক। বানিয়াচংয়ের‌ হরিশ্চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে পড়তেই পিতা বিরজানাথ বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। ফলে অষ্টম শ্রেণির পরই পড়াশোনায় ইতি।
এরপর শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। হবিগঞ্জের জাতীয় ভাণ্ডার সমিতির ম্যানেজার পদে যোগ দেন তিনি। এই সমিতির একটি মোটর কারখানা ছিল। সেখানেই তিনি গাড়ি চালানো শেখা শুরু করেন। সেইসঙ্গে শেখেন সাইকেল চালানো। সাইকেল চালানোয় তিনি বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। কিছুদিন পর এই সমিতির কাজ ছেড়ে অন্য একটি চাকরিতে যোগ দেন। সেইসঙ্গে যুক্ত হন বিপ্লবী সংগঠন অনুশীলন সমিতিতে। বিপ্লবী কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে তাঁকে চাকরি হারাতে হয়। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। দুঃসাহসী রামনাথ বেঙ্গল রেজিমেন্টের হয়ে যুদ্ধে যোগদান করেন এবং মেসোপটেমিয়ায় (বর্তমান ইরাক) যান। একসময় শেষ হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে তিনি একটি চাকরি নেন। সময়টা ১৯২৪।
যখন মেসোপটেমিয়ায় ছিলেন, তখনই বিশ্ব ভ্রমণের‌ কথা মাথায় আসে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর একটি সাইকেল জোগাড় করে তিনি বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গী ছিল এক জোড়া চটি, দু’টি চাদর ও একটি সাইকেল। সাইকেলের ক্যারিয়ারে একটি বাক্সে রাখা ছিল সাইকেল মেরামতির কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। ১৯৩১ সালের ৭ জুলাই সিঙ্গাপুরের কুইন স্ট্রিট থেকে যাত্রা শুরু করল ‘রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’। হ্যাঁ, এই কথাটিই লেখা ছিল তাঁর সাইকেলের গায়ে। সিঙ্গাপুরে কর্মরত প্রবাসী ভারতীয়দের শুভেচ্ছাকে পাথেয় করে রামনাথ মালয় (মালয়েশিয়া), শ্যাম (থাইল্যান্ড), ইন্দোচীন (ভিয়েতনাম), চীন, কোরিয়া, জাপান অতিক্রম করে কানাডায় পৌঁছলেন। ১৯৩৪-এ তাঁর দীর্ঘ সফর শেষ করে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়েন। শুরু হয় তাঁর দ্বিতীয় বিশ্বযাত্রা। আফগানিস্তান, পারস্য, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, তুরস্ক, বুলগেরিয়া, যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লাভাকিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স হয়ে ব্রিটেনে পৌঁছন তিনি। ভ্রমণ করেন ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। কিন্তু এবারের যাত্রায় তাঁর শরীর ভেঙে পড়ে। ১৯৩৬ সালে তিনি জাহাজে লন্ডন থেকে মুম্বইয়ে ফিরে আসেন।
কিন্তু বেশিদিন ঘরে বসে থাকার মানুষ তিনি ছিলেন না। সুস্থ হয়েই আবার তৃতীয় বিশ্বযাত্রার আয়োজন করলেন। এবার গন্তব্য আফ্রিকা। মুম্বই থেকে জাহাজে মোম্বাসায় পৌঁছে তারপর সাইকেলে ভ্রমণ শুরু হল। কেনিয়া, উগান্ডা, নায়াসাল্যান্ড, রোডেশিয়া (জিম্বাবোয়ে) হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছন এই বাঙালি ভূ-পর্যটক। তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪০ সালে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়ার ফলে সিলেট জেলাটি পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) অন্তর্ভুক্ত হয়। রামনাথ ভারতেই থেকে যান। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমার অভিজ্ঞতাকে ছাপার অক্ষরে বন্দি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনও প্রকাশকই তাঁর বই প্রকাশ করতে রাজি হননি।‌ তখন রামনাথ নিজেই একটি প্রকাশনার সংস্থা খোলেন এবং নিজের বই প্রকাশ করেন। এরপর তিনি চলে আসেন কলকাতায়। ভাগ্য কিছুটা সুপ্রসন্ন হয়। তাঁর লেখা বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০। অন্ধকারের আফ্রিকা, আজকের আমেরিকা, যুযুৎসু জাপান, ট্যুর রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড উইদাউট মানি, আগুনের আলো, বিদ্রোহী বলকান প্রভৃতি রামনাথের লেখা বিখ্যাত বই। ১৯৫৫ সালে ১ নভেম্বর মাত্র ৬১ বছর বয়স তাঁর মৃত্যু হয়।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা