আগামী বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবস। এই বিশেষ দিনের মাহাত্ম্যের কথা জানাল চাকদহ রামলাল অ্যাকাডেমির পড়ুয়ারা।
মুক্তির খোঁজ
স্বাধীনতা শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে পাওয়া যায় স্ব+অধীনতা। মানব জন্মের সার্থকতা তখনই পরিপূর্ণতা পায়, যখন সে নিজের জীবনে নিজের নিয়ন্ত্রণ ও অধিকারের মূল্য অর্জন করে। স্বাধীনতার গণ্ডি ব্যক্তি বিশেষ, সমাজ, জাতি থেকে দেশের সীমা ছুঁতে পারে। দীর্ঘ প্রায় দু’শো বছরের বিদেশি শাসনের শৃঙ্খল মোচন করে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে আমাদের দেশমাতৃকা— ভারত। অসংখ্য বীর সন্তানের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা লাভ করি আমরা। তাই আজকের দিনটিতে আমরা স্বাধীনতার সৈনিক অর্থাৎ বিপ্লবীদের স্মরণ করি। তাঁদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরি। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ভারত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা ও সামরিক শক্তিতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি লাভ করেছে। তবে, দারিদ্র্য, কুসংস্কার, হানাহানি থেকে আজও মুক্তি পাইনি আমরা। আমার প্রত্যাশা, খুব শীঘ্র দেশ এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করবে।
—জিষ্ণু দাস, একাদশ শ্রেণি
বিপ্লবী স্মরণ
ব্রিটিশ রাজশক্তি প্রায় দু’শো বছর ভারতকে পরাধীন করে রেখেছিল। বিদেশি শাসকদের অত্যাচারে এদেশের মানুষজন দুর্দশার চরম সীমায় পৌঁছন। ধর্ম-জাতি-ভাষার বিভেদের কথা ভুলে এদেশের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। যে লড়াই শুরু হয়েছিল মহাবিদ্রোহ থেকে। আত্মবলিদান করেন ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী, বিনয়-বাদল-দীনেশ, ভগৎ সিং, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙ্গিনী হাজরা সহ অসংখ্য বিপ্লবী। তাঁদের প্রাণের বিনিময়েই আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। তাই ১৫ আগস্ট বিপ্লবীদের স্মরণ করার দিন। প্রতিবারের মতো এবারও আমরা স্বাধীনতা দিবসের দিন শহিদ স্মরণ করব।
—আয়ুষী ভৌমিক, ষষ্ঠ শ্রেণি
ভারত আমার জননী
অশ্রুবিন্দু কলমের শিষে
রচনা করেছি এই অবশেষে
যে পালন করেছি এই আজ্ঞা
মায়ের জন্য যাব পঞ্চভূতে মিশে।
ধরায় রক্ত বহিয়ে দিলাম
জীবন মরণ উৎসর্গ করলাম
পাঞ্জাব, গুজরাত, মারাঠা, সিন্ধুভি
বাজিয়ে গেলাম যুদ্ধের দুন্দুভি।
রক্তে শুদ্ধ কুরুক্ষেত্র
যখন মনুষ্যে খুলবে তৃতীয় নেত্র
পদভরে কম্পিত স্বাধীনতা যুদ্ধ
অতীত স্মরণে শ্বাস হবে রুদ্ধ।
ধুলায় মেশা মায়ের লাজ
বাঁচিয়ে নে তুই আজ
জ্বালিয়ে দে তুই তাকে
যে কুমন্তব্যে মাকে ডাকে।
অত্যাচার কতদিন আর
বসে বসে সইব রে
কারার ওই লৌহ কপাট
তোর পরাক্রমে ভাঙ রে।
ধর্মা মজুমদার, অষ্টম শ্রেণি
১৫ আগস্টের সার্থকতা
ভারতের মাটিতে প্রথমবার স্বাধীনতার জয়পতাকা উঠেছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। কিন্তু এখনও কি দেশবাসী সর্বক্ষেত্রে মুক্তি লাভ করেছে? অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমাজে? স্বাধীনতার এতগুলো বছর পর আজও সমাজে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ রয়ে গিয়েছে। আমরা ছাত্রীরা যারা শিক্ষালাভ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি, তাদের নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। আজও সমাজে রয়ে গিয়েছে নানান কুসংস্কার ও কুপ্রথা। সেগুলি থেকে মুক্তির উপায় কী? যতক্ষণ না আমরা সার্বিক মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছি, ততক্ষণ ‘১৫ আগস্ট’ সার্থক হয়ে উঠবে না।
—বিনীতা বিশ্বাস, দ্বাদশ শ্রেণি
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র
স্বাধীনতা শব্দের আক্ষরিক অর্থ কারও অধীনে না থাকা। স্বাধীনতা যেকোনও মানুষ, সমাজ, জাতি বা রাষ্ট্রের হতে পারে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে ভারতবর্ষ। তবে, দ্বিখণ্ডিত স্বাধীনতা লাভ করি আমরা— ভারত আর পাকিস্তান। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়। স্বাধীনতা লাভের জন্য আমাদের প্রায় দু’শো বছর অপেক্ষা করতে হয়। ভারত আজ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। স্বাধীনতার সময় এদেশে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ১২ শতাংশ! আর আজ ভারতের সাক্ষরতার হার ৭৬.৩২ শতাংশ। ভারতের রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী, ইসরোর মতো মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। রবীন্দ্রনাথ-মহাত্মা গান্ধী-সুভাষচন্দ্রের ভারত আজ বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে। তবে, যেদিন ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘুচে যাবে, সেদিন ভারতের জাতীয় পতাকা আরও উঁচুতে স্থান পাবে।
—অমিত বিশ্বাস, দ্বাদশ শ্রেণি
দেশ ভাগের বেদনা
ইংরেজ শাসনে দুর্বিষহ দিন কেটেছে ভারতবাসীর। তাদের শাসনকালে ভারতীয়রা সাক্ষী থেকেছে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, নীলকর সাহেবদের অত্যাচার, জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের মতো বহু নারকীয় ঘটনার। বাংলা ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সংগ্রাম, মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ, আইন অমান্য ও ভারত ছাড় আন্দোলন এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াইয়ের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে এই দেশ। মুঘল শাসকদের হাত থেকে ভারতবর্ষের শাসন ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর এদেশের ক্ষমতা চলে যায় ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার হাতে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট অবশেষে স্বাধীনতা পাই আমরা। এদিন যেমন আনন্দের, তেমনই এদিনটির সঙ্গে জুড়ে রয়েছে দেশ ভাগের বেদনা। ইংরেজদের পুঁতে যাওয়া দ্বন্দ্বের গাছটি আরও পল্লবিত হয়েছে। সেই অভিশাপ আজও বয়ে চলেছি।
—উজান দাস, অষ্টম শ্রেণি
প্রধান শিক্ষকের কলমে
চাকদহ রামলাল অ্যাকাডেমি, নদীয়া
১৮৪৫ সালে চাকদহের কিছু শিক্ষানুরাগী মানুষ একটি ব্রাহ্ম সমাজ ও স্কুল স্থাপন করেছিলেন। স্কুলটির নাম ছিল ‘কেরানি স্কুল’। ১৮৬৪ সালে স্কুলটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মিডল ইংলিশ স্কুল’। তখন এখানে পড়াশোনা চলত ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। পরবর্তীকালে ১৯০৭ সালে স্কুলটি ‘বেণীমাধব ইনস্টিটিউশন’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। কলকাতা নিবাসী রামলাল সিংহ ১৯০৮ সালে এই বিদ্যালয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা দান করেন। পরের বছর তৈরি হয় নতুন ভবন। এরপর স্কুলের নতুন নামকরণ করা হয়— ‘দ্য রামলাল অ্যাকাডেমি’। আর মিডল ইংলিশ স্কুলের মূল ভবনটি নাম দেওয়া হয় দ্য বেণীমাধব বোস মেমোরিয়াল হল।
বর্তমানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে পঠনপাঠন হয়। বাংলা ও ইংরেজি দুই মাধ্যমেই পড়াশোনা চলে। পাশাপাশি রয়েছে ভোকেশনালের বিভিন্ন কোর্স। বিদ্যালয়ের দু’টি ভবন— পুরাতন ভবন ও তালতলা ভবন। এর মধ্যে তালতলা ভবনে রয়েছে সুশৃঙ্খলভাবে মিড ডে মিল গ্রহণের সুব্যবস্থা, পড়ুয়াদের সাইকেল গ্যারেজ, খেলার মাঠ, সুইমিং স্কুল, লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি।
পুরাতন ভবনে ক্রমবর্ধমান ছাত্র ভর্তির চাহিদা মেটানোর জন্য আরও ছ’টি শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ভবনে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া, খেলাধুলো ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। ২০২৪ সালে চাকদহ রামলাল অ্যাকাডেমি থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল সম্বিত সাহা (৯৩.৮ শতাংশ) এবং মাধ্যমিকে জিষ্ণু দাস (৯৭.৮৫ শতাংশ)। ২০২৩-’২৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের ‘ইনস্পায়ার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়ে বিদ্যালয়কে গর্বিত করে মধুরিমা দে সরকার। খো খো, কাবাডি, ক্রিকেট খেলায় এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা জেলা ও রাজ্যস্তরে বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছে।
—রিপন পাল, প্রধান শিক্ষক