বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল

তোমাদের বিবেকানন্দ

আজ স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন। অসম্ভব মানসিক দৃঢ়তায় তিনি জয় করেছেন যেকোনও প্রতিকূলতাকে। তাঁর জীবন ছাত্রছাত্রীদের কাছে শিক্ষণীয়। স্বামীজির জীবনের কিছু ঘটনা ছোট্ট বন্ধুদের জন্য তুলে ধরলেন সায়ন্তন মজুমদার।

আজ থেকে একশো পঁচিশ বছর আগেকার কথা। ডিসেম্বরের শীতের এক রাত। বেলুড় মঠের গেটে একজন এসে দাঁড়ালেন। তাঁর মাথায় টুপি, গায়ে কোট দেখে এক সাহেব আসার খবর রটে গেল। এদিকে সেই সাহেব তখন গেট খুলে ভেতরে ঢুকে একেবারে খাবার ঘরে গিয়ে হাজির। তাঁকে দেখে সকলেই খুশিতে ডগমগ হয়ে হাসতে হাসতে স্বীকার করে নিলেন, ‘এ যে আমাদের সাহেব।’ সেই গুরুভাইদের অতিপ্রিয় সাহেবই হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। যিনি এক সময় স্বামী বিবিদিষানন্দ ও সচ্চিদানন্দ নামেও পরিচিত ছিলেন। আর তাঁর আসল নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত।
সেই রাতের হ্যাটকোট পরা স্বামীজি তাঁর সময়ে ভারতের শাসক ব্রিটিশ সাহেবদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতেন জানা যাক। একদিন রাজপুতানায় ট্রেনে কোথাও  যাচ্ছিলেন। পরনে ছিল  গেরুয়া বেশ। তা দেখে কামরার দুই সাহেব তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করে। ভেবে বসে তিনি ইংরেজি জানেন না। কিন্তু স্টেশন মাস্টারের কাছে স্বামীজি ইংরেজিতে জল চাইতেই তাদের সেই ভুল ভেঙে যায়। তারা জানতে চায়, সব বুঝতে পেরেও তিনি কোনও জবাব দেননি কেন? সার্থকনামা বীরেশ্বর উত্তরে বলেন যে, তিনি দরকার মনে করেননি। কারণ তিনি তাদের আগেও অনেক আহাম্মক দেখেছেন। তখন সাহেবরা রেগে গিয়ে মারতে আসে। কিন্তু বিবেকানন্দের তেজি রূপ দেখে ক্ষান্ত হন। ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা  নিশ্চয়ই বুঝতে পারলে যে, মনের সঙ্গে শরীরের জোর থাকাটাও খুব জরুরি। আসলে তিনি ভয় পেতেন না। একবার কাশীর দুর্গামন্দিরে বাঁদরদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পালাননি। ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা ঘুরে দাঁড়িয়ে রুখে দিয়েছিলেন শাখামৃগগুলিকে। এক সন্ধ্যায় হঠাৎ খোঁজ শুরু হয় বালক বিলের। মা কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না। অবশেষে তাঁকে পাওয়া যায় এক কলা বাগানে। অমর, কলাপ্রিয়, রামভক্ত হনুমান সত্যিই আছেন কি না সেটা জানাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। মায়ের কাছেই তিনি শিখেছিলেন কষ্টকে মেনে নিয়ে সত্যকে খুঁজে সেই পথে এগিয়ে যেতে। তাই হনুমানের অপেক্ষায় বসেছিলেন কলা বাগানে।
ছোটবেলায় এক ব্রিটিশ নাবিকের তিনি খুব সেবা করেছিলেন। আসলে সেই সাহেব ছোট্ট বিলের খেলায় সাহায্য করতে এসে আহত হন। জীবে প্রেমই ছিল তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র। ঘোড়া ছিল অত্যন্ত প্রিয়। তাঁর বাবা একটা ঘোড়া কিনেও দিয়েছিলেন। বড় হয়ে ছোট্ট বিলে কোচোয়ান হতে চাইতেন। পরবর্তীকালে এই ঘোড়ার গাড়িতেই তিনি সেই হ্যাটকোট পরা রাতে হাওড়া স্টেশন হয়ে মঠে গিয়েছিলেন। আবার শিকাগো থেকে বিশ্বজয় করার পর দেশে ফিরলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে এই ঘোড়ার গাড়িতেই সওয়ার হন। সেদিন কিন্তু সেই গাড়িটিকে ঘোড়ায় এগিয়ে নিয়ে যায়নি। ঘোড়ার বদলে গাড়ি টেনেছিল কলকাতার যুবকরা। শিয়ালদহ ও হাওড়া দুই স্টেশনে গেলেই ‘বিবেক’ নামের স্মৃতিফলক দেখতে পাওয়া যায়। একবার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চাপা পড়া থেকে বাঁচিয়েছিলেন এক কিশোরকে।
১৮৯৮ সালে প্লেগ রোগে আক্রান্ত কলকাতা মহানগরীর প্রচুর মানুষ। সেই সময় আর্তদের পাশে যেভাবে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন তা ভোলা যায় না। তার কিছুদিন আগে তিনি নিজেই অসুস্থ ছিলেন। রোগমুক্তির জন্য দার্জিলিঙে গিয়েছিলেন। প্রত্যেক বছর মঠের জমি সাফ করতে আসত কিছু শ্রমিক। একবার তাদের পেটভরে খাইয়ে বলেছিলেন—নারায়ণকে ভোগ দিয়েছেন! এদিকে কখনও সারাদিন,কখনও কয়েকদিন তিনি খেতে পাননি এমন ঘটনাও ঘটেছে।
প্রায় সব সময় আমরা গৈরিক কাপড়েই স্বামীজির ছবি দেখে অভ্যস্ত। ছোট থেকেই এই রংয়ের পোশাক তাঁর পছন্দের ছিল। একদিন এই গেরুয়া কাপড় পরে বাড়িময় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। মায়ের সামনে পড়তেই বললেন, ‘দেখো,কেমন শিব সেজেছি।’ ঘরে রেখেছিলেন শিবের মূর্তি। রেগে গেলে মাথায় জল ঢেলে শিব-শিব বলে তাঁকে শান্ত করতেন মা। স্বপ্নে নিজেকে দেখতেন কখনও রাজা,কখনও ফকির হিসেবে। তাই হয়তো বড় হয়ে এরকম সন্ন্যাসী-রাজা হতে পেরেছিলেন। যিনি আজও আমাদের সকলকে আশ্রয় দিয়ে চলেছেন বটগাছের মতো।
একবার সেই রকমই এক গাছতলায় বিখ্যাত নাট্যকার গিরিশ ঘোষের সঙ্গে বসেছিলেন ধ্যানে। মশার কামড়ে গিরিশবাবু তো পালিয়ে বাঁচলেন। কিন্তু সারদা মায়ের কথা যেন সত্যি করে স্বামীজি বসেছিলেন ‘অটল পাহাড়ে’র মতো। আবার ছোটবেলাতে একবার ধ্যানে বসে তিনি জানতেই পারেননি পাশে থাকা গোখরো সাপের কথা। সেই ধ্যানের ফলে পাওয়া গভীর মনোযোগ, ইচ্ছা ও আত্মবিশ্বাসই তাঁর সাফল্যের  মূল মন্ত্র ছিল। কাজেই তোমরাও এই ধ্যানের অভ্যাস 
করতে পার।
ছেলেবেলায় কুস্তি প্রতিযোগিতায় রুপোর প্রজাপতি পাওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করার জন্য বাবার কাছ থেকে একটি রুপোর ঘড়ি পেয়েছিলেন। এই পরীক্ষার মাত্র কয়েকদিন আগে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জ্যামিতির চারটে বই রপ্ত করে ফেলেছিলেন। ছোটবেলায় গঙ্গায় সাঁতার শেখা বিলে পরবর্তীকালে বিবেকানন্দ হয়ে কন্যাকুমারী পৌঁছতে ভারত মহাসাগর সাঁতরে পার হয়েছিলেন। যেখানে বসে ধ্যান করেছিলেন, তা এখন ‘বিবেকানন্দ রক’ নামে বিখ্যাত।
আজ রবিবার, ১২ জানুয়ারি তাঁর জন্মদিন। ১৮৬৩ সালে তিনি যেদিন জন্মেছিলেন, সেদিন ছিল সোমবার আর পিঠেপাটিসাপটার দিন— পৌষ পার্বণ। ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা বিবেকযাত্রায় অংশগ্রহণ করতেই পার। উত্তর কলকাতায় শিমুলিয়ায় তাঁর বাড়ি গিয়ে প্রথমে জন্মস্থান, মিউজিয়াম, থ্রিডি শো দেখে নিলে। তারপরে বেলুড় মঠে গিয়ে পুরনো ঠাকুরবাড়ির পূর্ব দিকের দোতলার স্বামীজির ঘরটিও দেখে নিও। সেখানেই ১৯০২ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। কাশ্মীর থেকে কেরল, গুজরাত থেকে অসম, পাশাপাশি প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের বহু দেশই বিশ্ববিবেকে বাঁধা পড়ে আছে এই বাঙালি বিবেকের মাধ্যমে। সকলকেই তিনি ভাইবোন ভাবতেন। শিকাগো ধর্ম মহাসভায় বলা তাঁর একটি গল্পের কথা তোমরা হয়তো অনেকেই জানো। এক সমুদ্রের ব্যাঙ হঠাৎ একদিন কুয়োর ব্যাঙের দেখা পেয়ে যায়। কুয়োর ব্যাঙ কিছুতেই বিশ্বাস করে না যে, সমুদ্র কুয়োর থেকে অনেক বড়। তাই সে দূরে ঠেলে দেয় সমুদ্রের ব্যাঙকে। এই স্বভাব থাকলে মানুষে মানুষে মিলন সম্ভব নয়। এর থেকেই ‘কূপমণ্ডূক’ শব্দটি এসেছে। স্বামীজির বাণী পাথেয় করেই আমাদের সকলের জীবনের পথে এগিয়ে চলা উচিত।
 
3d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন।  অর্থপ্রাপ্তির যোগ...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৮৩ টাকা৮৭.৫৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.০৫ টাকা১০৭.৭৪ টাকা
ইউরো৮৭.৩০ টাকা৯০.৬৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা