হ য ব র ল

নামের খোঁজে
সাগর দাস

অক্সিজেন
পঞ্চদশ শতকে ইতালিয়ান চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি তাঁর নোট বইয়ে লিখেছিলেন, ‘বাতাসে কোনও একটা উপাদান আছে, যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এই উপাদানটি ছাড়া মোমবাতি জ্বলতে পারে না।’ কিন্তু সেই উপাদানটি যে কী, সেটি ভিঞ্চি বা অন্য কেউ বলতে পারেননি সে সময়। এর প্রায় ৩০০ বছর পর সুইডিশ রসায়নবিদ কার্ল উইলহেম শিলি মারকিউরিক অক্সাইড আর বেশ কিছুটা নাইট্রেট উত্তপ্ত করে একটি স্বাদ ও বর্ণহীন গ্যাস আলাদা করতে পারেন। তাঁর এই আবিষ্কার টানা পাঁচ বছর সবার অগোচরেই থেকে যায়।
ইতিমধ্যে ব্রিটিশ রসায়নবিদ জোসেফ প্রিস্টলে মারকিউরিক অক্সাইড উত্তপ্ত করে একই গ্যাস আলাদা করতে সক্ষম হন। ১৭৭৪ সালে এই আবিষ্কার প্রকাশ করেন প্রিস্টলে। ফরাসি রসায়নবিদ অ্যান্টোনি ল্যাভয়সিয়েকে এ সম্পর্কে জানিয়েছিলেন তিনি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এই গ্যাসের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন ল্যাভয়সিয়ে। তিনি একে মৌলিক গ্যাস হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে ল্যাভয়সিয়ের ধারণা ছিল, নতুন আবিষ্কৃত এই গ্যাসটি সব অ্যাসিডে থাকে। তাই তিনি গ্যাসটির নামকরণ করেন অক্সিজেন বা অ্যাসিড প্রস্তুতকারক। গ্রিক শব্দ ‘অক্সি’। যার অর্থ ঝাঁঝালো বা অ্যাসিড এবং ‘জেন’ অর্থ উত্পাদনকারী। অবশ্য পরে প্রমাণিত হয়েছিল, সব অ্যাসিডে অক্সিজেন থাকে না। অ্যাসিডের মূল উপাদান আসলে মুক্ত হাইড্রোজেন আয়ন। তবে ল্যাভয়সিয়ের এই ভুল ধারণাটি একসময় বাংলা ভাষাতেও চলে এসেছিল। তাই অক্সিজেনের বাংলা অনুবাদ করা হয়েছিল অম্লজান। অর্থাত্ অম্ল বা অ্যাসিডের প্রাণ বা মূল উপাদান।

ভিটামিন
সপ্তদশ শতকে ইন্দোনেশিয়ার জাভা এলাকার মানুষ অদ্ভুত এক রোগে ভুগতেন। ১৮৫৩ সাল নাগাদ জাপানের নাবিকদেরও সেই একই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ খুবই দুর্বল হয়ে যেত। তাদের হাত-পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেত। সবশেষে মৃত্যু। যেহেতু এই রোগে আক্রান্ত রোগী দুর্বল হয়ে যেত, তাই মালয় ভাষায় এ রোগের নাম দেওয়া হয়েছিল বেরিবেরি। যার অর্থ ‘ভীষণ দুর্বল’। সে সময় চিকিত্সকরা ভেবেছিলেন, বেরিবেরির জন্য জীবাণুই দায়ী। কিন্তু অনেক খুঁজেও কোনও জীবাণু শনাক্ত করা যায়নি। একসময় চালের বাদামি আবরণ থেকে একটি উপাদান আলাদা করতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীরা। জলদ্রাব্য এ বস্তুকে বলা হতো অ্যান্টি বেরিবেরি উপাদান। কারণ এই উপাদানটি বেরিবেরি রোগ সারাতে পারত।
১৯১২ সালে পোলিশ রসায়নবিদ ক্যাসিমির ফাঙ্ক প্রমাণ করলেন, অ্যান্টি বেরিবেরি অন্য রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। এই বিক্রিয়ার ধরন রসায়নবিদদের আগে থেকেই জানা থাকা অ্যামাইন গ্রুপের মতো ছিল। ফাঙ্ক বললেন, অ্যান্টি বেরিবেরি পদার্থ আসলে একটি অ্যামাইন, যা প্রাণীদেহের জন্য অতি দরকারি। শুধু বেরিবেরিই নয়, স্কার্ভি বা রিকেটসের মতো রোগগুলো সারাতেও খাবারের সঙ্গে যেসব পদার্থ গ্রহণ করতে হয়, সেগুলোও অ্যামাইন বলে ধারণা করলেন ফাঙ্ক। এ অ্যামাইনগুলো প্রাণীদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য খুব সামান্য পরিমাণে হলেও অবশ্য প্রয়োজনীয়। সে কারণে উপাদানটির নাম দেওয়া হয় ভিটামিন। অর্থাত্ গুরুত্বপূর্ণ  অ্যামাইন। আরেকটি মত হচ্ছে লাতিন শব্দ ভিটা, যার অর্থ ‘বেঁচে থাকার জন্য’ এবং অ্যামিন শব্দ যোগ করে ভিটামিনস শব্দটি তৈরি করেছিলেন ফাঙ্ক। তবে পরে পরীক্ষায় দেখা গেল, এসব পদার্থের বেশ কয়েকটি অ্যামাইন নয়। এ কারণে ১৯২০ সালে নামটি ছেঁটে দেওয়া হল। শব্দটি থেকে শেষের ইংরেজি ‘ই’ বর্ণটি বাদ দেওয়া হল। তাই ফাঙ্কের উদ্ভাবিত নামটি পরিবর্তিত হয়ে গেল ভিটামিন।

এনার্জি
দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত শব্দের নাম এনার্জি বা শক্তি। অনেকেই মনে করতে পারেন যে, শব্দটি বোধ হয় প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু বাস্তব বলছে শব্দটির বয়স মাত্র ২০০ বছর। পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় এনার্জি বা শক্তির অর্থ কাজ করার সামর্থ্য। কাজ করা মানে শক্তিকে এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় রূপান্তর করা। যে বস্তু কাজ করতে সমর্থ তার মধ্যেই শক্তি থাকে। আমরা যখন বলি কোনও বস্তুর মধ্যে শক্তি নিহিত আছে, তখন বোঝা যায়, বস্তুটি অন্য কিছুর ওপর বল প্রয়োগ করতে পারে এবং তার ওপর কাজ সম্পাদন করতে পারে। সপ্তদশ শতকে শক্তিবিষয়ক একটি ধারণা বোঝাতে জার্মান বিজ্ঞানী গটফ্রিড লিবনিজ লাতিন শব্দ ‘ভিস ভিভা’ ব্যবহার করেছিলেন। এর অর্থ জীবন্ত বল। তাঁর বর্ণিত এই ধারণাটির সঙ্গে আধুনিক গতিশক্তির সাদৃশ্য আছে। ১৮০৭ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টমাস ইয়ং এই ধারণাটিকে বোঝাতে ভিস ভিভার পরিবর্তে ‘এনার্জি’ শব্দটি ব্যবহার করেন। গ্রিক শব্দ এনার্জিয়া থেকে ধার করেছিলেন ইয়ং, যার অর্থ ক্রিয়াকলাপ বা ভিতর থেকে কাজ করা।

ক্যালশিয়াম
অনেকের ধারণা, ক্যালশিয়ামের রং সাদা। কিন্তু বিশুদ্ধ ক্যালশিয়াম আসলে রুপোলি ধূসর ধাতব মৃৎক্ষারীয় পদার্থ। প্রকৃতিতে বিশুদ্ধ অবস্থায় ক্যালশিয়ামের দেখা পাওয়া ভার। কারণ, এই মৌলটি অতিমাত্রায় সক্রিয়। মৌলটি খুব সহজেই বাতাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্যালশিয়াম অক্সাইড গঠন করে। মানুষসহ প্রাণীদের জন্য মৌলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মেরুদণ্ডী প্রাণীর হাড় (ক্যালশিয়াম ফসফেট) আর দাঁত, মোলাস্কা (শামুক ও ঝিনুক) ও খোলসজাতীয় (কাঁকড়া, চিংড়ি) প্রাণীদের খোলস (ক্যালশিয়াম কার্বনেট হিসেবে) গঠনে এটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনকাল থেকেই ক্যালশিয়ামের বিভিন্ন যৌগের ব্যবহার জানা ছিল মানুষের। যেমন মিশর, রোমসহ অনেক দেশে ভবন নির্মাণে ক্যালশিয়াম অক্সাইড বা চুনাপাথর এবং জিপসাম ব্যবহার করা হতো। আবার চুনাপাথর পুড়িয়ে চুন বানানো হতো। এই চুনের সঙ্গে বালি আর জল মিশিয়ে সিমেন্টের মতো এক ধরনের মিশ্রণ তৈরি করা হতো। ইটের ফাঁকে এই মিশ্রণ দিলে আস্তে আস্তে সেই গাঁথুনি শক্ত হয়ে যেত। কারণ, বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে ওই সিমেন্টের ক্যালশিয়াম অক্সাইড পরিণত হতো ক্যালশিয়াম কার্বনেটে। ক্যালশিয়াম নামের সঙ্গেও এই ইতিহাস জড়িয়ে আছে। লাতিন শব্দ ক্যালক্স থেকে ক্যালশিয়াম নামটি এসেছে। যার অর্থ চুন বা চুনাপাথর।
4d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মের উন্নতি হবে। হস্তশিল্পীদের পক্ষে সময়টা বিশেষ ভালো। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মের প্রসার। আর্থিক দিকটি অনুকূল।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৮০ টাকা৮৬.৫৪ টাকা
পাউন্ড১০৫.৩৬ টাকা১০৯.০৯ টাকা
ইউরো৮৭.০০ টাকা৯০.৩৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা