হ য ব র ল

শিক্ষক দিবসের শ্রদ্ধার্ঘ্য

আগামী বৃহস্পতিবার ‘শিক্ষক দিবস’। এই বিশেষ দিনে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শ্রদ্ধা জানালেন পূর্ব বর্ধমানের সড্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

 মনের মণিকোঠায় আমার বিদ্যালয়
শিক্ষক দিবসের স্মৃতিস্বরূপ বিদ্যালয় জীবনের প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের সম্পর্কে ছোট্ট একটি ঘটনার কথা বলি। স্কুলের বুক লিস্টে প্রধান শিক্ষকের নামের আগে ‘ডক্টর’ লেখা কথাটি যখন আমার চোখে প‌঩ড়ে, সেই সময় তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ভয়জনিত অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আমার মনের ধারণা একলহমায় ভেঙে যায়, যখন দেখি তাঁর শিষ্টাচার, ক্ষমার মানসিকতা এবং অসাধারণ দায়িত্ববোধ। স্যারকে কোনওদিন রেগে যেতে দেখিনি। তিনি তাঁর স্নেহশীল মন দিয়ে সকল ছাত্রছাত্রীর ভুলত্রুটি সংশোধন করে আলোর পথ দেখান। রুটিনে প্রত্যহ হেড মাস্টারমশাইয়ের ক্লাস না পেলেও কোনও সমস্যায় পড়লেই নির্ভয়ে সেই কথা জানাতে তাঁর সামনে হাজির হই। তিনিও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।
— অস্মি চন্দ্র, ষষ্ঠ শ্রেণি

মহানুভবতার শিক্ষা
আগের বছর শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালীন একটি ছাগলছানা গেট অতিক্রম করে বিদ্যালয়ের প্রধান আঙিনায় এসে উপস্থিত হয়। অনুষ্ঠানের মধ্যেই এটি ছিল একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা। আমরা তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। হঠাৎ করে একটি অবলা প্রাণী কীভাবে গেট দিয়ে ঢুকল, সেটিই ছিল আমাদের কাছে প্রধান বিবেচ্য। এরমধ্যে কখন যে ছাগলছানাটি আমাদের বিদ্যালয়ের গাছপ্রেমী শিক্ষক মহাশয় সৌমিত্রবাবুর নিজের হাতে অতি যত্নে লাগানো ছোট্ট দেবদারুর চারাগাছ খেয়ে  নিমেষে সাবাড় করে ফেলেছিল তা বুঝতে পারিনি। ফলস্বরূপ ওই ছাগলটির উপর আমরা বন্ধুরা বিভিন্নভাবে অত্যাচার শুরু করি। কিছুক্ষণ পর সৌমিত্রবাবু নিজে এগিয়ে এসে বিদ্যালয়ের ফার্স্ট এইড বক্স থেকে ওষুধপত্র দিয়ে যেটুকু সম্ভব শুশ্রূষা করে ফের ছাগলটিকে গেটের বাইরে ছেড়ে দিয়ে আসেন। নিজের হাতে তৈরি গাছের মায়া সৌমিত্রবাবুর কাছে বড় হয়ে ওঠেনি। এটিই আমাদের কাছে পরম শিক্ষার বিষয় ছিল।
—শুভময় চট্টোপাধ্যায়, সপ্তম শ্রেণি

জ্ঞানের আলোকবর্তিকা
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ রাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক, মহান দার্শনিক ও চিন্তাবিদ। বিবিধ গুণাবলির কারণে ভারত সরকার ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ দিয়ে সম্মানিত করে। এই মহান ব্যক্তির জন্মদিন ৫ সেপ্টেম্বর। দিনটি সারা ভারতে শিক্ষক দিবস রূপে উদযাপিত হয়। ছোটবেলা থেকেই রাধাকৃষ্ণাণ একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাবা দরিদ্র ছিলেন বলে নিজের অর্জিত বৃত্তির মাধ্যমেই নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নিতেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে দর্শনের শিক্ষক রূপে নিযুক্ত হন এবং ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে মহীশূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘দ্য ফিলোজফি অব রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ ও ‘দ্য রেইন অব রিলিজিয়ন ইন কনটেম্পোরারি ফিলোজফি’। মহান দার্শনিক হওয়ার সুবাদে দর্শনশাস্ত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন এবং ভারতীয় দর্শনের গুরুত্ব বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করেন। দীর্ঘ ১০ বছর উপ রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন তিনি শিক্ষা ব্যবস্থার বিপুল উন্নতি সাধন করেছিলেন।
— প্রীতম মালিক, দশম শ্রেণি

প্রিয় শিক্ষক
আমার প্রিয় শিক্ষক হলেন প্রসেনজিৎ কোঙার মহাশয়। বাংলার শিক্ষক। ক্লাসের সকল ছাত্রছাত্রীকে তিনি সমান চোখে দেখেন। পাঠ্যবই ও ব্যাকরণের জটিল দিকগুলি আমাদের কাছে সহজ-সরল করে দেন। নিজেদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভাগুলিকে কীভাবে বিকশিত করতে হয় তা তাঁর হাত ধরেই আমরা শিখছি। শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে স্যার এবং স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি রইল আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।
—উজান কোঙার, পঞ্চম শ্রেণি

শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশাই
বিদ্যালয় জীবনে মূল্যবোধ আহরণের সঙ্গে প্রথাগত শিক্ষারও উন্মেষ ঘটে চলে। শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে জ্ঞান লাভের মধ্যে দিয়ে আমাদের জ্ঞানপিপাসা সমৃদ্ধ হয়, যা আমাদের মনের মণিকোঠায় অমলিন থেকে যায়। আজ এমনই এক আদর্শ শিক্ষকের কথা বলব, যিনি আমাদের স্কুলের গণিতের শিক্ষক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়। ছাত্রছাত্রীদের তিনি স্নেহবশত কখনও কখনও বকাঝকা করলেও হাসি মজার গল্প বলতে বড়ই ভালোবাসেন। গত বছর শিক্ষক দিবস উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রছাত্রীরা চাঁদা তুলে শ্রেণিকক্ষের ঘর সাজাতে ব্যস্ত ছিল। তখন ক্লাসের বাইরে বিবর্ণ মুখে দাঁড়িয়ে ছিল একটি মেয়ে। বিষয়টি স্যারের নজর এড়ায়নি। জিজ্ঞেস করায়, মেয়েটি জানায় সে চাঁদা দিতে অপারগ। শুনেই স্যার মেয়েটির হাতে চাঁদার টাকা দিয়ে বলেন জমা দিয়ে দিতে। সেইসঙ্গে কথাটি গোপন রাখারও নির্দেশ দেন। মুহূর্তে মেয়েটির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কাকতালীয়ভাবে দূর থেকে সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলাম আমি। ঘটনাটি কোন ক্লাসের প্রকাশ করলাম না। তবে, এই ঘটনার 
মধ্য দিয়ে আমি অনুধাবন করি প্রকৃত শিক্ষকের পরিচয় শুধুমাত্র জ্ঞান-গরিমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তাঁর প্রকৃত পরিচয় ধরা পড়ে মানবিকতায়, আচার -ব্যবহারে।
—সৌমিলি কোঙার, নবম শ্রেণি

প্রধান শিক্ষকের কলমে: সড্যা উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব বর্ধমান
পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান-২ নং ব্লকের একটি গ্রাম সড্যা। কৃষিনির্ভর গ্রামের বিদ্যোৎসাহী মানুষেরা অনুধাবন করেন দেশে স্বাধীনতা আনতে গেলে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। এর জন্য তাঁরা শিক্ষাবিস্তারের প্রয়োজনে এলাকায় একটি স্কুল স্থাপন করেন। ১৯৪৩ সালের ৭ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সড্যা উচ্চ বিদ্যালয়’। মাটির দেওয়াল ও টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে স্কুলের পথচলা শুরু। পরে স্কুলের অনেক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনে ২৫টি শ্রেণিকক্ষ, ৪টি গবেষণাগার, ২টি স্মার্ট ক্লাসরুম, গ্রন্থাগার, মিড-ডে-মিলের কিচেন ও ডাইনিং রুম রয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকদের সহযোগিতায় ফুলের বাগান, সব্জি বাগান ছাড়াও বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সীমানায় প্রায় তিনশোটি গাছের চারটি খণ্ডবন তৈরি করেছে। বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি যেমন— ডেঙ্গু প্রতিরোধ, সাপে কামড়ানো রোগীর চিকিৎসা, মাদক ও তামাক বিরোধী অভিযান, পার্থেনিয়াম দূরীকরণ অভিযান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। ২০২৪ সালে বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পায় অঙ্কুর সিদ্ধান্ত (৯৩ শতাংশ) এবং মাধ্যমিকে শুভম যশ (৯৪ শতাংশ)। এছাড়াও ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলো ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় জেলা ও রাজ্যস্তরে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। ২০২৩ সালে জাতীয় শিশু বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয়ের সুপ্রভা দাঁ ও দেবমাল্য খুলি জেলা স্তর থেকে রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য নির্বাচিত হয়। ২০২৪ সালে জেলা বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় ছাত্র রনি কোঙার ও সায়ন রায় জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে পূর্বাঞ্চলীয় বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও সুরজিৎ খুলি রাজ্যস্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
 শীর্ষেন্দু দত্ত, প্রধান শিক্ষক
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা