হ য ব র ল

মহাকাশ মিউজিয়াম

আগামী ২৩ আগস্ট জাতীয় মহাকাশ দিবস। তার আগে কলকাতার মুকুন্দপুরের মহাকাশ মিউজিয়াম ঘুরে এসে লিখলেন চকিতা চট্টোপাধ্যায়।

বেলুন চড়ে চল চলে যাই রূপকথারই রাজ্যে...’
হ্যাঁ, মানুষের মনের এই ইচ্ছেই একদিন পূর্ণ  হয়েছিল, যেদিন মানুষ সত্যি সত্যিই উড়তে পেরেছিল আকাশে! তারপর উড়তে উড়তে পৌঁছে গিয়েছিল সেই সুদূর মহাকাশে। পা রেখেছিল এক্কেবারে চাঁদের মাটিতে! তোমরা যদি সেই রূপকথার রাজ্যে প্রবেশ করতে চাও, তাহলে চলে এসো যেকোনও শনি, রবি ও ছুটির দিন সকাল ন’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যে মুকুন্দপুরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স পরিচালিত মহাকাশ মিউজিয়ামে। টিকিটের দাম মাথা পিছু একশো টাকা। তবে, ছাত্রছাত্রীরা স্কুল বা কলেজ থেকে দল বেঁধে এলে থাকে বিশেষ ছাড়। 
মিউজিয়ামটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রথম ভারতীয় তথা বাঙালি শূন্যে ভ্রমণকারী রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং প্রথম রকেট-মেইল-পাইওনিয়ার আরও এক কলকাতাবাসী বিদেশি স্টিফেন হেক্টর টেলার স্মিথের নামে। ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করেছিলেন প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা।
মোট বারোটি ঘর আছে এই মিউজিয়ামে। যা সাজানো হয়েছে মূলত কেমনভাবে মহাকাশ অভিযান শূন্য থেকে শুরু করে আজকের জায়গায় এসে পৌঁছেছে সেই সম্পর্কিত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে।
প্রথমেই আছে স্পেস রুম। এখানে রয়েছে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ডিজাইন করা এক কাল্পনিক উড়োজাহাজের নকশা! আছে সাইকেলের চেন ও প্যাডেল ব্যবহার করে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় প্রথম যে এরোপ্লেনটি তৈরি করেছিলেন তার ফোটো ও মডেল। ১৭৮৩ সালের প্রথম বেলুনে ওড়ার ছবিও প্রদর্শিত হয়েছে এই রুমে।
রাশিয়ার স্পুটনিকের নাম তো শুনেছ? সেই স্পুটনিক কেমন দেখতে ছিল তা জানানোর জন্য এই রুমেই রাখা রয়েছে তার একটি মডেল। মহাকাশের বুকে ভেসে বেড়ানোর প্রথম কৃতিত্ব কিন্তু কোনও মানুষের নয়, রাশিয়ার পথকুকুর লাইকার! মহাকাশযানে চড়া অবস্থায় সেই লাইকার ছবিও দেখতে পাবে এখানে। আছে প্রথম নভশ্চর, যিনি মহাকাশে ভেসে বেড়িয়েছিলেন, রাশিয়ার সেই ইউরি গ্যাগারিনের ফোটো। আছে মহাকাশে ৪৩৮ দিন কাটিয়ে আসা ভ্যালেরি পালিয়াকভের ছবিও। সেই সঙ্গে আছে প্রথম মহিলা মহাকাশচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভার একটি দুষ্প্রাপ্য ফোটো তাঁর সই সমেত। 
স্পেসক্রাফ্টের ভেতরে মানুষ তো ভেসে থাকে। তাই ঘুমোনোর সময় স্লিপিং-ব্যাগের ভেতর ঢুকে নিজেদের স্ট্যারপ দিয়ে দেওয়ালের সঙ্গে বেঁধে রেখে ঘুমোতে হয়! এই রুমে দেখতে পাবে সেই অবস্থায় তোলা তাঁদের ছবি। আর মহাকাশ অভিযান ফেরত তেমনই একটি আসল স্ট্যারপও! এখানে আছে হ্যাভেলস টেলিস্কোপের মডেল, আদিত্য ওয়ানের মডেল এবং সাম্প্রতিকতম চন্দ্র অভিযানের অন্যতম আকর্ষণ ‘বিক্রম’ ও ‘প্রজ্ঞান’-এর মডেলও।
মিউজিয়ামের অ্যাপোলো রুমে দেখা পাবে অ্যাপোলো ইলেভেনের রেপ্লিকা। যেটি আসলটির থেকে মাত্র ২০ শতাংশ ছোট। তবে তার প্রতিটি নাট, জানলা ইত্যাদি হুবহু আসলটির মতোই! আসল যানটির একটি ছোট্ট টুকরোও এখানে রাখা আছে যা তোমরা ছুঁয়ে দেখতে পার। মহাকাশে মানুষকে যেহেতু শুয়ে শুয়ে পাড়ি দিতে হয়, তাই এই রেপ্লিকা-যানটির ভেতরে শায়িতভাবে রয়েছে মার্কিন নভশ্চর নীল আর্মস্ট্রং, এডুইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্সের মডেল। অভিযানের আগে তাঁদের বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল, যেখানে শেখানো হয়েছিল প্যারাসুট ল্যান্ডিংয়ের পর যেকোনও পরিবেশে কেমন করে তাঁরা জীবনধারণ করতে পারবেন। প্রয়োজনে সাপের রক্ত খেয়ে, প্যারাসুটের কাপড় কেটে জামাকাপড় ও তাঁবু তৈরি করে কীভাবে বাঁচবেন, যতক্ষণ না তাঁদের উদ্ধার করা হচ্ছে। এই সমস্ত কিছুই ফোটোর মাধ্যমে দেখানো আছে এই রুমে। আছে মহাকাশচারীর পোশাক পরা নীল আর্মস্ট্রংয়ের মডেল। আছে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখার পর নীল আর্মস্ট্রংয়ের জুতোর ছাপের ফোটোও। 
চাঁদের মাটিতে পা রাখতে না পারলেও সেই মাটি কিন্তু তোমরা ছুঁয়ে দেখতে পার! এখানে রয়েছে সে ব্যবস্থাও! সঙ্গে রয়েছে মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করার সুযোগও! শুধু কী তাই? আছে নীল আর্মস্ট্রংয়ের মাথার চুল স্পর্শ করার সুযোগ! স্বপ্নপূরণের এমন সুযোগ পাওয়াও কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার তাই না?
এবার বলব তাঁদের সম্পর্কে, যাঁদের দু’জনের নামে এই মিউজিয়ামটিকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
১৮৮৯ সালে রীতিমতো খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে সকলকে জানানো হয়েছিল যে, কলকাতার ‘নেটিভ’ বাবু রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বেলুনে চড়ে সেটা নিজের হাতে চালাবেন! এবং তা সকলের চোখের সামনেই! এ দৃশ্য দেখবার জন্য মানুষ দলে দলে টিকিট কেটে ভিড় জমিয়েছিল নারকেলডাঙার গ্যাস ওয়ার্কার্স গ্রাউন্ডে! মিউজিয়ামের একটি প্যাসেজে ডিসপ্লে করে রাখা আছে সে যুগের খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনের সেই সব কাটিং। ১৮৮৯ সালের মে মাসে, নারকেলডাঙা থেকে বিকেল সাড়ে চারটের সময়, বাবু রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘হট-এয়ার’ বেলুনে চড়ে সাফল্যের সঙ্গেই ভাসতে ভাসতে চলে গিয়েছিলেন সোদপুর পর্যন্ত। সেখানে প্যারাসুটে করে ল্যান্ড করেছিলেন তিনি! সেই যুগে তো ফোটোগ্রাফের এত চল ছিল না, তাই তাঁর সেই ঐতিহাসিক উড়ে যাওয়ার এবং প্যারাসুটে চড়ে নামার সমস্ত দৃশ্যকে তাঁদের পটচিত্রের মধ্যে এঁকে রেখেছিলেন কালীঘাটের পট-শিল্পীরা! তাই সে দৃশ্যগুলো আজও অমর হয়ে আছে! এখানে এলে দেখতে পাবে সেই সব দুষ্প্রাপ্য ছবিও!
আর ছিলেন ভারতবর্ষের শিলংয়ে জন্ম নেওয়া প্রথম রকেট-মেইল-পাইওনিয়ার স্টিফেন হেক্টর টেলার স্মিথ। যিনি ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিনশো মেইল রকেট পাঠিয়েছিলেন কলকাতা থেকে ডায়মন্ডহারবার ও সাগরদ্বীপে! ডিসপ্লে করা আছে সেসব মেইলের ঠিকানা লেখা খাম ও স্ট্যাম্প। তিনি তাঁর মিসাইলে করে জামাকাপড়, ওষুধপত্র এমনকী মুরগির মতো জীবিত প্রাণীও ত্রাণ হিসেবে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়!
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের ওপর একটি তথ্যচিত্র এখানে দেখানো হয়। চোখে থ্রি-ডি চশমা পরে দেখে নিতে পার কেমন করে মহাকাশচারীরা স্পেস স্টেশনের ভেতর উড়ে বেড়ান, হাসতে হাসতে শূন্যে জলের ফোঁটা ভাসিয়ে দেন! এছাড়াও জানতে পারবে মহাকাশ সম্পর্কিত অনেক 
অজানা তথ্যও।
বিল্ডিংয়ের পাঁচতলা থেকে দড়ির সাহায্যে ঝোলানো আছে একটি ‘ফুকো-র পেন্ডুলাম’। ১২ ঘণ্টা অন্তর পৃথিবীর প্ল্যান অব রোটেশন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই পেন্ডুলামটির রোটেশনেরও পরিবর্তন হয়। সবটাই অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশের অনুপাতে। আগে এই পেন্ডুলামটিকে ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এর পাশেই রাখা আছে একটি জায়ান্ট স্পেস টেলিস্কোপের রেপ্লিকা।
স্পেস ইন্ট্রুমেন্ট রুমে রাখা আছে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের তৈরি বিভিন্ন প্লেমোড, যেগুলো মহাকাশে গিয়ে আবার ফিরে এসেছে। আছে চাঁদে গিয়ে যে ‘এক্স রে-ডিটেক্টর’টি ফিরে এসেছিল, সেটি। আছে স্পেস শাটল। যা দিয়ে হ্যাভেল স্পেস টেলিস্কোপ সারানো হয়, আছে স্পেস এয়ারক্রাফ্টের একটি রেপ্লিকাও।
লিটারেচার-রুমে আছে যে সব পত্র-পত্রিকায় মহাকাশ অভিযানের খবর বিভিন্ন সময় বেরিয়েছিল সেগুলোর আসল কপি। মিউজিয়ামের ডিরেক্টর প্রফেসর সন্দীপ চক্রবর্তীকে উপহার দেওয়া বিজ্ঞানী সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখরের লেখা অটোগ্রাফ সহ বইও আছে এই রুমে। আছে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের থ্রি-ডি ছবি। এখানে দেখতে পাবে স্বনামধন্য বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার হাতে লেখা ডায়েরি! যার প্রতিটি পাতা স্ক্যান করে টাঙানো আছে দেওয়ালে! আছে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নিজের হাতে করা ক্যালকুলেশনের পাতাও!
টেলিস্কোপে চোখ রেখে আকাশ দেখতে চাও? সে ব্যবস্থাও আছে এখানে। শুধু তাই নয়, চাইলে এখানেই অর্ডার দিয়ে তৈরি করে নিতে পার, তেমনই একটি টেলিস্কোপ নিজের জন্য!
ফসিল রুমে ছুঁয়ে দেখতে পারবে সাড়ে চার হাজার কোটি বছর আগের ম্যাটিওর! আর একটি রুমে সম্পূর্ণ সৌরজগৎকে ডায়াগ্রামের সাহায্যে দেখানো হয়েছে। এই পুরো মিউজিয়ামটি ঘুরে দেখতে এবং বুঝতে গাইড হিসেবে এখানকার রিসার্চ স্কলারদের পাওয়াটাও বাড়তি লাভ। 
ফেরার সময় স্মারক হিসেবে সংগ্রহ করার জন্য পাবে অ্যাপোলো-১১-এর মডেলটি। সেই সঙ্গে মহাকাশচারী রাকেশ শর্মার ছবি দেওয়া কফি মাগ আর টি-শার্ট। 
তাহলে মহাকাশকে ছুঁয়ে দেখতে দেরি না করে চটপট চলে যাও কলকাতার এই নতুন দর্শনীয় স্থান মহাকাশ মিউজিয়ামে!
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা