হ য ব র ল

বিলুপ্তির পথে বিশ্বের বৃহত্তম ফুল 
কল্যাণকুমার দে

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুলের নাম কী? উত্তরটা হবে র‍্যাফলেসিয়া আরনল্ডি। বিরল ও বিপন্ন এই ফুলটি শুধুমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন্স ও থাইল্যান্ড) দুর্গম ও প্রত্যন্ত বৃষ্টিঅরণ্যেই (রেইন ফরেস্ট) দেখা যায়। র‍্যাফলেসিয়া ইন্দোনেশিয়ার তিনটি জাতীয় ফুলের মধ্যে একটি। ১৯৯৩ সালে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ডিক্রি এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় বিরল ফুল হিসাবে স্বীকৃতি দেন। র‍্যাফলেসিয়া হল একটি পরজীবী বা হ্যালোপ্যারাসাইট। যার অর্থ হল এরা একধরনের পূর্ণ পরজীবী উদ্ভিদ, যা একটি উপযুক্ত পোষক ছাড়া তার জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে পারে না। যদি একটি বাধ্যতামূলক পরজীবী পোষক পেতে ব্যর্থ হয়, তবে এটি বংশবিস্তার করতেও ব্যর্থ হবে। আর পাঁচটা গাছের মতো এদের না আছে কোনও কাণ্ড, না আছে পাতা। খাদ্য তৈরির জন্য এরা সালোকসংশ্লেষও করতে পারে না। এদের কোনও শিকড়ও নেই। দেহ বলতে ছত্রাক কোষের মতো দেখতে লম্বা শাখাযুক্ত ক্লোরোফিলবিহীন অনুসূত্র। উপযুক্ত পোষক হিসাবে যে গাছটিকে র‍্যাফলেসিয়া বেছে নেয়, সেটি হল টেট্রাস্টিগমা নামে এক ধরনের বুনো আঙুর জাতীয় কাষ্ঠল লতা।
বংশবিস্তারের জন্য র‍্যাফলেসিয়ার বীজগুলো প্রথমে বনভূমির মেঝেতে যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু শুধু মাটিতে তারা অঙ্কুরিত হয় না। যে বীজগুলো পোষক গাছের শিকড় ও কাণ্ডের গোড়ায় ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে এবং পোষক গাছের সজীব কোষকলার সান্নিধ্যে আসে সেই বীজগুলোই অঙ্কুরিত হয়ে অনুসূত্রকার বর্ণহীন দেহ গঠন করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি পোষক লতাগুলোর মূল কাণ্ডের ভেতরে লুকিয়ে থেকে সারাটা জীবন অদৃশ্য হয়ে থেকে যায় এবং পরজীবী রূপে বসবাস করে। র‍্যাফলেসিয়া নিজস্ব খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না, তাই বেঁচে থাকার রসদটুকুর জন্য তারা পোষক গাছের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। পোষক লতা থেকে তারা জল ও পুষ্টি শোষণ করে।
পোষকলতার মধ্যে র‍্যাফলেসিয়ার দেহকোষ থেকে একটি ছোট বাদামি কুঁড়ি বা মুকুল তৈরি হতে ১৮ মাস সময় লেগে যায়। মুকুলটি ধীরে ধীরে পোষক গাছ থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে দৃশ্যমান হয়। একটি বাঁধাকপির আকারে মুকুলটির পরিপক্ব হতে আরও ৬-৯ মাস সময় নেয়। কুঁড়ি থেকে বাদামি পাতাগুলি বা মঞ্জুরীপত্রগুলি খুলতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। কুঁড়ি থেকে ফুল ফুটতে মোটামুটি দু’বছর তিন মাস সময় লাগে। কিন্তু ফুলটি মাত্র ৫-৭ দিন খোলা অবস্থায় থাকে। একটি ফুলের ব্যাস ১ মিটার এবং ওজন প্রায় ১৫ কেজি। 
এই ফুলের ঐতিহ্যগত পাপড়ি নেই, যেমনটি সাধারণ ফুলে পাওয়া যায়। ফুলটিতে পাঁচটি মাংসল লালচে বাদামি থেকে মেরুন রঙের পাপড়ির মতো কাঠামো রয়েছে, যাকে প্রায়শই পাপড়ি হিসাবে উল্লেখ করা হয়। আসলে এগুলোকে ‘পেরিগন’ বা ‘পুষ্পপুট’ বলে। পুষ্পপুটগুলির গায়ে অসংখ্য ফোলা ফোলা অংশ দেখা যায়। ফুলের মাঝখানে রয়েছে পাড়ওয়ালা গর্ত। গর্তের ভেতরের দেওয়ালে অসংখ্য রোম বা র‍্যামেন্টা দেখা যায়। ফুলের বাইরে গোড়ার দিকে মঞ্জুরীপত্র দিয়ে ঘেরা থাকে। 
অধিকাংশ ফুলের একটা নিজস্ব গন্ধ থাকে, যা তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু র‍্যাফলেসিয়ার ক্ষেত্রে ফুলটি হল বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দুর্গন্ধযুক্ত। এই ফুল থেকে অত্যন্ত দুর্গন্ধ নির্গত করে। পচা মাংসের বা পচাগলা প্রাণী গন্ধের সঙ্গে এটি তুলনীয়। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য র‌্যাফলেসিয়াকে ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় ‘বুঙ্গা বাংকাই’ অর্থাৎ মৃতদেহ ফুল বলা হয়। আবার এটিকে ‘পদ্মারাক্ষস’ও বলা হয়। যার অর্থ হল দৈত্য বা দানব ফুল। র‍্যাফলেসিয়া ফুলে ‘ডাইমিথাইল ডাইসালফাইড’-এর মতো রাসায়নিক থাকে। যাতে সালফার থাকায় পচা গন্ধ তৈরি হয়। ফুলের পচা মাংসের গন্ধ দু’ধরনের ক্যারিয়ন মাছিকে (ক্যালিফোরা ভিসিনা ও লুসিলিয়া সিজার) আকৃষ্ট করে। এই মাছিগুলি সাধারণত পচাগলা মৃতদেহের গায়েই বসে এবং খাদ্য সংগ্রহ করে। ডিম পাড়তে এসে তারা যখন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে যায় তখন ফুলের পরাগমিলনের কাজটি সুকৌশলে করে দেয়। এই মাছিগুলি ব্লো ফাই এবং বোতল মাছি নামেও পরিচিত।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন-জঙ্গল ধ্বংসের কারণে বিপন্ন র‍্যাফলেসিয়া। এই ফুলের পরিচিত আবাসস্থলগুলির অন্তত ৬৭ শতাংশ সুরক্ষিত এলাকার বাইরে পড়ে, যার ফলে গাছগুলি আরও বেশি করে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। র‍্যাফলেসিয়া পুরোপুরিভাবে জল ও পুষ্টির জন্য অবিচ্ছিন্নভাবে পোষকের উপর নির্ভরশীল। পোষক ছাড়া এদের স্বাধীন অস্তিত্বের কথা ভাবাই যায় না। সঠিক পোষক খুঁজে না পেলে এদের জীবন বিপন্ন তো হবেই। তাছাড়া পোষক কোনও কারণে বিপন্ন হলে তাদের জীবনযাত্রাও বিপন্ন হবে।
এখন পর্যন্ত ৪২টি পরিচিত র‍্যাফলেসিয়ার প্রজাতির মধ্যে একটি র‍্যাফলেসিয়া ম্যাগনিফিকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার দ্বারা বিপন্ন হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যে মানদণ্ডের মাধ্যমে একটি উদ্ভিদকে বিপন্ন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সে একই মানদণ্ড ব্যবহার করে গবেষকদের একটি দল জানিয়েছে যে, বিপন্ন তালিকাভুক্ত র‍্যাফলেসিয়ার প্রজাতির সংখ্যা অনেক বেশি হওয়া উচিত। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরাও এ কথা স্বীকার করেছেন। গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে, র‌্যাফলেসিয়ার ৪২টি প্রজাতির মধ্যে ৪২টিই বিলুপ্তির পথে। তাঁদের মতে, ২৫টি প্রজাতি গুরুতরভাবে বিপন্ন এবং ১৫টি বিপন্ন হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ। বাকি দু’টি প্রজাতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা উচিত।
প্রাকৃতিক বাসস্থান রক্ষা এবং র‌্যাফলেসিয়া ফুল বাঁচাতে সংরক্ষণের বহুমুখী প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু এবিষয়ে সাফল্য খুব বেশি আশাপ্রদ নয়। এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে সংরক্ষণের জন্য র‍্যাফলেসিয়ার একটি নতুন আইকন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত গবেষকরা পোষক লতার বাইরে ল্যাবরেটরিতে এগুলিকে চাষ করতে পারেননি। অবশ্য স্থানীয় ইকোট্যুরিজম উদ্যোগগুলি র‌্যাফলেসিয়া সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পেরেছে।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা