হ য ব র ল

সাহিত্য পাঠের আসর

গরমের ছুটি শেষ। অবশেষে খুলে গিয়েছে স্কুল। সামনেই দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা। জোরকদমে চলছে পড়াশোনা। তারমধ্যেই চলছে গল্প-উপন্যাস পড়া। কারও প্রিয় পাঠ্য বইয়ের গল্প। কেউ আবার পড়ার বইয়ের বাইরের গল্প-উপন্যাস ভালোবাসে। নিজেদের প্রিয় গল্প ও উপন্যাসের কথা জানাল আরামবাগের চাঁদুর হাই স্কুলের পড়ুয়ারা।
 
বনভোজন যখন ফল ভোজন
 আমার পড়া গল্পের মধ্যে ভালো লাগে ‘বনভোজনের ব্যাপার’। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা এই গল্পটি পড়ে খুব মজা পেয়েছিলাম। গল্পটিতে পাঁচটি চরিত্র— টেনিদা, ক্যাবলা, হাবুল, প্যালা ও ভন্টা। হাবুল সেন ঢাকাই বাঙাল। গল্পটি পড়তে গিয়ে ভালো লেগেছিল টেনিদার বকাঝকা, উপমা দেওয়ার রীতি এবং অন্যদের খোঁটা দেওয়ার ভঙ্গি। হাবুলের বাঙাল ভাষা, ক্যাবলার হিন্দি টান এবং ‘পোলাপান’ ও ‘জলপান’ শব্দ দু’টি গল্পটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এই গল্পের সঙ্গে আমার বনভোজনের একটা ঘটনার মিল পাই। ভালো লাগে টেনিদার লেডিকেনি সাফাইয়ের ঘটনা, রান্নার জন্য আনা চাল-ডাল-অন্যান্য জিনিস হনুমানের গাছে উঠে খাওয়া। শেষপর্যন্ত চারমূর্তির বনভোজন পরিণত হয় ফল ভোজনে। তাদের নানান কীর্তিকলাপে ভরপুর গল্পটি।
—রাকেশ লাগা, নবম শ্রেণি

মায়ের চোখকে ফাঁকি
 বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালি’ আমার প্রিয় উপন্যাস। বেশ কয়েকবার উপন্যাসটি পড়েছি। প্রকৃতি প্রেমিক এই লেখক আমার মনে নিশ্চিন্দিপুরের ছবি এঁকে দিয়েছেন। হরিহর ও সর্বজয়ার সংসারের অভাব-অনটনের এক নিখুঁত চিত্র এই উপন্যাসে ধরা পড়েছে। আর রয়েছে দুই ভাইবোন অপু-দুর্গার নিখাদ ভালোবাসা। কিশোর অপুর চোখে অপার বিস্ময় আমাদের কৈশোরের যেন চেনা ছবি। অপু-দুর্গা ঝড়ে আম কুড়ানোর অংশটি পড়লে আমার আর দাদার আম কড়ুানোর কথা মনে পড়ে যায়। দুপুরবেলা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে নুন-লঙ্কা দিয়ে আম মাখার স্বাদই আলাদা। কিন্তু দুর্গার চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
—অর্পিতা সাঁতরা, দশম শ্রেণি

অদ্ভুত কালি-কলম
 যদিও কথা হচ্ছে প্রিয় গল্প অথবা উপন্যাস নিয়ে, কিন্তু আমার ভালো লাগে প্রবন্ধ। শ্রীপান্থের ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ লেখাটি পড়ে বেশ মজা লেগেছিল। কারণ লেখক যেখানে কাজ করতেন, সেখানে সবাই লেখক। অথচ, শ্রীপান্থ ছাড়া আর কেউই কালি-কলম ব্যবহার করতেন না। বিষয়টি ভেবেই আমার বেশ অদ্ভুত লেগেছিল। শ্রীপান্থের আসল নাম নিখিল সরকার। লেখক তাঁর ছোটবেলায় যেভাবে কালি তৈরি করতেন এবং কলাপাতায় লিখতেন সেটা পড়ে অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলাম। আর যে কলাপাতায় লেখা হতো, তা জলেই ভাসাতে হবে। কারণ গোরু খেয়ে নিলে শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে! এখন বল-পেন, জেল-পেনের যুগ। তাই কালি-দোয়াতের এসব বর্ণনা যেন আমাকে অতীতে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছিল।
—সাবানা ইয়াসমিন, অষ্টম শ্রেণি

একটুকরো গ্রাম
 আমার প্রিয় গল্পগুলির মধ্যে অন্যতম ‘পুঁইমাচা’। লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই গল্পের মধ্যে দিয়ে একটি সাধারণ গ্রামীণ চিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সহায়হরি চাটুজ্যে উঠোনে পা রাখতে না রাখতেই হাঁক পেড়ে স্ত্রী অন্নপূর্ণার কাছে কোনও বাটি-ঘটি চাইলেন তারক খুড়োর গাছ থেকে খেজুর রস আনার জন্য। গল্পের শুরুটাই লেখক এমনভাবে শুরু করেছেন যে, আমার ওই অংশটাই সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। মেয়ের প্রতি বাবার দায়িত্ব, মায়ের মমতা ফুটে উঠেছে। ভাই-বোনেদের প্রতি দিদির ভালোবাসার ছবিও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গ্রামীণ পৌষপার্বণ পালনের রীতিও এই গল্প থেকে জানা যায়। আবেগ, দায়িত্ব, মমতা, স্নেহ, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মিশেল গল্পটিকে অনন্য করে তুলেছে।
—আসমিরা খাতুন, দশম শ্রেণি

সততার বার্তা
 সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম— ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘রাজসিংহ’, ‘আনন্দ মঠ’, ‘দেবী চৌধুরাণী’। তবে, আমার ভালোলাগা উপন্যাসটি হল— ‘রাধারাণী’। উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদেই রয়েছে রাধারানির মাহেশের রথের মেলা দেখতে যাওয়া ও মালা বিক্রির বর্ণনা। বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে যাওয়ায় তার বনফুলের মালা বিক্রি না হওয়ায় সে কাঁদতে কাঁদতে রাতের অন্ধকারে বাড়ি ফিরছিল। ঠিক সেই সময় এক আগন্তুক হাজির হয় এবং তাকে সাহায্য করে। রাধারানির অসুস্থ মায়ের পথ্যের জন্য অর্থ সাহায্য করে। এমনকী, পদ্মলোচনের মাধ্যমে কাপড়ও পাঠায়। পরে জানা যায় সেই উপকারী ব্যক্তির নাম রুক্মিণীকুমার রায়। কিন্তু মা-মেয়ে সেই টাকা খরচ না করে তুলে রাখল। কারণ তারা গরিব হলেও লোভী নয়। প্রথম পরিচ্ছেদের এই সততার বার্তাটি আমার খুব ভালো লেগেছে।
—অঙ্কিতা মালিক, দশম শ্রেণি

খেলাধুলোর গল্প
 খেলাধুলোর গল্প পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। আর আমার প্রিয় লেখক শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর লেখাগুলির মধ্যে অন্যতম ‘ক্লাবের নাম মোহনবাগান’, ‘ক্লাবের নাম ইস্টবেঙ্গল’, ‘ফুটবলের পাঁচ নক্ষত্র’, ‘পরাজয়’। এর মধ্যে ‘পরাজয়’ গল্পটি খুব ভালো লাগে। আমার প্রিয় খেলা ফুটবল। আর আমি ফুটবল খেলতেও খুব ভালোবাসি। তাই খেলাধুলো সংক্রান্ত কোনও লেখা পড়ার সুযোগ পেলে আলাদা উত্তেজনা তৈরি হয়। ‘পরাজয়’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র স্টাইকার রঞ্জন সরকার। পুরনো ক্লাব থেকে বাদ পড়ায় রঞ্জন কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দিতে চান যে, তিনি ফুরিয়ে যাননি। নতুন ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত খেলে পুরনো ক্লাবকে হারিয়ে দেন। কিন্তু তাসত্ত্বেও তিনি দুঃখিত। আসলে পুরনো ক্লাবকে তিনি প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। ওই ক্লাবের ১০ নম্বর জার্সিটি তাঁর কাছে মায়ের সমান। তাই খেলার মাঠে জয় পেলেও রঞ্জনের নিজের কাছে এটি পরাজয়। গল্পের এই ব্যঞ্জনাটি আমার অসাধারণ লেগেছে।
—সৌমেন দাস, নবম শ্রেণি
প্রধান শিক্ষকের কলমে: চাঁদুর হাই স্কুল, আরামবাগ
 হুগলি জেলার এক অতি পরিচিত জনপদ আরামবাগ। আরামবাগ থেকে বর্ধমানগামী রাজ্য সড়কের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে দ্বারকেশ্বর নদ। এই নদের তীরেই রয়েছে চাঁদুর ফরেস্ট। আর ছায়া ঘেরা বনবীথি লাগোয়া চাঁদুর হাই স্কুল। শান্ত, সুন্দর, নিরিবিলি এক পরিবেশ।
একসময়ে কুসংস্কারে ভরা এই অঞ্চলটিতে শিক্ষা ছিল কার্যত সোনার পাথরবাটি। তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ছিল দারিদ্র্য। অর্ধ শতাব্দী আগে কয়েকজন যুবক এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়ের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে মিলিত হন সৈয়দ আবদুল মান্নান, দীনবন্ধু পাল, বাসুদেব হাজরা ও বিনয়কৃষ্ণ দত্তরা।
১৯৭০ সালে শুরু হল এই স্কুলের পথচলা। তারপর বহু পরিশ্রমের ফলে চার বছর পর মিলল সরকারি অনুদান। ধাপে ধাপে স্কুল উন্নীত হল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে। ২০২৪ সালের শুরুতেই পালিত হয়েছে স্কুলের সুবর্ণ 
জয়ন্তী বর্ষ।
স্কুল তৈরির পর প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিভিন্ন সময়ে সাহায্য করেছেন শেখ আবদুল জব্বার, শঙ্করপ্রসাদ গড়াই, কৃষ্ণচন্দ্র পাল ও গ্রামবাসীরা। বর্তমানে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা প্রায় আটশো। দাদনপুর, কাঁটাবনি, বিরামপুর, ভাদুর ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই স্কুলে পড়ুয়ারা আসে। রয়েছে বেশ কিছু সমস্যাও। যেমন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শুধুমাত্র কলা বিভাগ রয়েছে। অতি শীঘ্রই এই স্কুলে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগ চালু করা একান্ত প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ক্লাসরুমেরও অভাব রয়েছে। ঘরগুলি রং করারও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর জন্য দরকার অর্থের। আশা করি, সব সমস্যা কাটিয়ে উঠে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারবে।
  সুদীপকুমার করণ, প্রধান শিক্ষক
 
2Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা