রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ভাষার উপর সার্টিফিকেট এবং ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সার্টিফিকেট কোর্স ছয় মাস থেকে দেড় বছরের মেয়াদের এবং ডিপ্লোমা কোর্স ২ বছরের মেয়াদের। আবেদনপত্র এপ্রিল মাস পর্যন্ত পাওয়া যাবে।
৬ মে ২০১৯ থেকে ১ জুন ২০১৯ এফটিআইআই , পুনে এবং এনএফএআই , পুনেতে কম সময়ের কোর্সটি করানো হবে। দরখাস্তের শেষ তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৯।
ইনস্টিটিউট অব রেল ট্রান্সপোর্ট ডিসট্যান্স এডুকেশন কোর্স হিসাবে পড়াচ্ছে ট্রান্সপোর্ট ইকনমিক্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের ডিপ্লোমা কোর্স। আবেদনের শেষ তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১৯।
‘হ্যারি পটার’ বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সম্প্রতি যাদবপুর ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় ‘অ্যালোহোমোরা: আনলক দ্য ম্যাজিক’ নামক ইভেন্টটি। তবে ‘হ্যারি পটার’-কে শৈশবে পড়া রূপকথার গল্পের বাইরে এনে বর্তমান আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিতে তার প্রাসঙ্গিকতা ছিল অনুষ্ঠানের মূল মন্ত্র।
উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
ডঃ গৌতম মাইতি: উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি হাতে, কিন্তু চাকরি নেই। শিক্ষিতদের চাকরির সম্ভাবনা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। বেকারত্বের হার রেকর্ড ছুঁয়েছে। এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন কেবল আমাদের দেশের কর্মপ্রার্থীরাই নয়, সারা বিশ্বের চাকরির বাজারের হালহকিকত এমনটাই। তবে এ বাজারেও কিছু পেশায় চাকরির সুযোগ আছে। চাকরিও হচ্ছে। এমনই একটি ক্ষেত্র হল গ্রন্থাগারিকের চাকরি বা লাইব্রেরিয়ানশিপ। আমেরিকান ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিক্সের এক সমীক্ষার পূর্বাভাস থেকে দেখা যাচ্ছে ২০১৬ থেকে ২০২৬ পর্যন্ত লাইব্রেরিয়ান ও সমতুল পেশায় কর্মসংস্থানের সুযোগ অন্যান্য অনেক পেশার তুলনায় বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশে এখনও এ ধরনের পেশায় চাকরির সুযোগ তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে তথ্য প্রযুক্তির বাজার দিন দিন দ্রুত হারে বিস্তৃত হচ্ছে। আশা করা যায়, এর প্রভাবে আগামী দিনে এ দেশেও তথ্য সংরক্ষণ ও পরিষেবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে লাইব্রেরিয়ান ও সমতুল পেশাজীবীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বাড়বে।
পদমর্যাদা, বেতন ও চাকরির সুযোগ লাইব্রেরিয়ানশিপ একটি সুপ্রাচীন ও সম্মানিত পেশা। আজ থেকে প্রায় দু’ হাজার তিনশো বছর আগে প্রাচীন বিশ্বের বিস্ময় আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা হয়। তখন প্রখ্যাত গ্রিক পণ্ডিত ও ভাষাতত্ত্ববিদ জেনোদোতাস হন তার লাইব্রেরিয়ান। যুগে যুগে বহু কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব এই মহান পেশায় নিযুক্ত থেকেছেন। চীনের চেয়ারম্যান মাও সে-তুং, ইরানের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ খাতামি, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার, প্রখ্যাত দার্শনিক ডেভিড হিউম, বৈজ্ঞানিক বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, ঔপন্যাসিক লুইস ক্যারল এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায়, রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ও লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে প্রশিক্ষিত কর্মপ্রার্থীরা পাবলিক লাইব্রেরি, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অফিস, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিভিন্ন স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, যাদুঘর ও আর্কাইভ, হাসপাতাল, সংশোধনাগার, বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতাবাস, আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্ক ও বিমা সংস্থার লাইব্রেরি, ডকুমেন্টেশন সেন্টার, লাইব্রেরি নেটওয়ার্ক, মিডিয়া হাউস ও নিউজ এজেন্সি, পাবলিশিং হাউস, এমনকী বিভিন্ন এনজিওতেও চাকরি পেতে পারেন। কিন্তু চাকরি পেলে ডেজিগনেশন কিন্তু কেবলমাত্র লাইব্রেরিয়ান খেতাবে সীমিত নাও থাকতে পারে। তথ্য বিশেষজ্ঞ ও কর্মীদের এখন প্রিন্টেড ডকুমেন্টের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল রিসোর্স এবং ওয়েব রিসোর্সের সংরক্ষণ ও পরিষেবা সংক্রান্ত কাজ করতে হয়। ট্রাডিশনাল লাইব্রেরির কাজের প্রকৃতি ও ধরণ থেকে এই পরিবর্তন তাই প্রতিষ্ঠানভেদে তাদের ডেজিগনেশনেও পরিবর্তন এনে দিয়েছে। রূপান্তরের পথে তাদের ডেজিগনেশন ইনফরমেশন অফিসার, ইনফরমেশন অ্যানালিস্ট, ডকুমেন্টেশন অফিসার, কিউরেটর অ্যান্ড আর্কিভিস্ট, রেকর্ড ম্যানেজার, ইনফরমেশন আর্কিটেক্ট, ডাটা ব্যাঙ্ক ম্যানেজার, নলেজ ম্যানেজার, ইন্ডেক্সার প্রভৃতি।
এছাড়াও লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে উচ্চ শিক্ষার পরে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষকতা ও গবেষণার কাজ পেতে পারেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ও বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রের লাইব্রেরিয়ানদের পদমর্যাদা এবং বেতন কাঠামো এখন অধ্যাপকদের সমতুল। স্কুল লাইব্রেরিয়ানদের পদমর্যাদা এবং বেতন কাঠামোও প্রায় স্কুল শিক্ষকদের সমতুল। পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ানদের বেতন কাঠামোও প্রায় স্কুল লাইব্রেরিয়ানদের মতো। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইব্রেরিয়ানদের বেতন কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ আকর্ষণীয়।
লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স কোর্স
পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সের বিভিন্ন কোর্স চালু আছে। যেমন স্নাতক স্তরের বিএলআইএস (ব্যাচেলর অব লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স), স্নাতকোত্তর স্তরের এমএলআইএস (মাস্টার অব লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স), এমফিল, পিএইচডি ইত্যাদি। যাদবপুর, কলকাতা, বর্ধমান, কল্যাণী, রবীন্দ্রভারতী, বিদ্যাসাগর ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কোর্সগুলো করার সুযোগ আছে। তবে এমফিল কোর্স চালু আছে কেবল যাদবপুর, কলকাতা, বর্ধমান ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি ওপেন অ্যান্ড ডিসট্যান্স লার্নিং মোডে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, আন্নামালাই ইউনিভার্সিটি, সিকিম মণিপাল ইউনিভার্সিটি, মাদুরাই কামরাজ ইউনিভার্সিটি থেকে বিএলআইএস ও এমএলআইএস কোর্স করা যায়।
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের ডিআরটিসি (বেঙ্গালুরু) দু’বছরের এমএসইন লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স এবং নয়াদিল্লিতে নিসকেয়ার (সিএসআইআর)-এর দু’বছরের এআইএস নামের স্নাতকোত্তর কোর্স দুটির চাহিদা বেশ ভালো।
এছাড়া বেঙ্গল লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন, বাণীপুর ও কালিম্পংয়ের পিপলস (জনতা) গভর্নমেন্ট কলেজে ছয় বা দশ মাসের সার্টিফিকেট ইন লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স (সিএলআইএস) কোর্স চালু আছে।
ভর্তির যোগ্যতা
বিএ, বিএসসি, বিকম (অনার্স এবং পাস) বা ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, ম্যানেজমেন্ট গ্র্যাজুয়েটরা বিএলআইএস, কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। তবে অনার্স ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলে ভর্তির সুযোগ বেশি। এমএলআইএস কোর্সে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা বিএলআইএস ডিগ্রি। এমফিলের জন্য এমএলআইএস ডিগ্রি। পিএইচডি করতে হলে নেট বা সেট পাস করতে হয়।
অবশ্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএলআইএস পাস করা ছাত্ররা প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে পিএইচডি করার সুযোগ পান। সার্টিফিকেট ইন লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স পড়ার ন্যূনতম যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক পাস। বিস্তারিত জানতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট দেখে নিতে পারেন।
শেষ কথা
চাকরি পেতে গেলে শিক্ষাগত যোগ্যতাই কিন্তু সব নয়। শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে সঙ্গে কর্মপ্রার্থীর ভালো কমিউনিকেশন স্কিল, রাইটিং এবিলিটি, জ্ঞান জগতের বিভিন্ন শাখায় অগ্রগতি এবং সাম্প্রতিক বিষয় ও সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা, সাহিত্যে আগ্রহ এবং দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তাও কিন্তু বেশ জরুরি।
(লেখক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক)
