উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
শুধু আবাসিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করাই নয়, চাষিরা যাতে একেবারে নিজেদের মাঠে হাতেকলমে উন্নত কৃষির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন, সেজন্য জেলায় জেলায় ব্লক স্তরেও এক সপ্তাহের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। উত্তর ২৪ পরগনায় হাসনাবাদের পর হাবড়া-২ নম্বর ব্লকে সপ্তাহব্যাপী একটি ট্রেনিং অনুষ্ঠিত হয় সম্প্রতি।
যে জেলায় যেসব ফসলের বেশি চাষ হয়, প্রচুর উৎপাদনের কারণে সেই ফসল যাতে কোনওভাবেই কৃষককে ‘অভাবী’ বিক্রি করতে না হয়, সেজন্য প্রক্রিয়াকরণের উপর বিশেষ দিয়েছে ওই ট্রেনিং ইন্সটিটিউট। সেক্ষেত্রে কৃষক পরিবারের ছেলেমেয়ে এবং এলাকার উৎসাহী যুবক-যুবতীদের নিয়ে ‘ফার্মার্স ইন্টারেস্টেড গ্রুফ’ (এফআইজি) গঠন করে দেওয়া হয়। উদ্যোগে শামিল করা হয়ে থাকে বিভিন্ন কৃষি সমবায় সমিতি ও ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানির মতো কৃষক সঙ্ঘকে। কৃষকবাজার ও সুফল বাংলা-র সঙ্গেও যুক্ত করে দেওয়া হয়ে থাকে ফার্মার্স ইন্টারেস্টেড গ্রুপগুলিকে। ফলে বিক্রির সমস্যা থাকছে না। তারা তাদের নিজেদের প্রকল্প অনুযায়ী, কৃষকের কাছ থেকে ফল, সব্জি কিনে তা আংশিক প্রক্রিয়াকরণ করে সংরক্ষণ করে রাখে। তার পর চাহিদা বুঝে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ফল, সব্জি বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব হয়, তেমনই তুলনামূলক বেশি দাম পাওয়া যায় বলে দাবি। নেতাজি সুভাষ ট্রেনিং ইন্সটিটিউট অফ এগ্রিকালচারাল মার্কেটিংয়ের অধিকর্তা সুজিতকুমার ভদ্র জানিয়েছেন, উন্নত কৃষি ও সঠিক মূল্যে তার বিপণনের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১৪-১৫ সাল থেকে এপর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি কৃষক ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের ১১১টি ব্লক থেকে টিম নিয়ে এসে ওই ট্রেনিং করানো হয়েছে।
বর্তমানে আমাদের ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে ৭টি ক্লাসরুম রয়েছে। থাকার ব্যবস্থা আছে ১১৮জনের। আরও বেশি করে যাতে কৃষক ও গ্রামীণ ছেলেমেয়েদের আমাদের এখানে রেখে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে উন্নত কৃষির পথ দেখানো যায়, সেকারণে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি হস্টেল হচ্ছে। ২ লক্ষ টাকা এককালীন অনুদানের পাশাপাশি প্রতিটি এফআইজি যাতে প্রকল্প চালিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় ব্যাঙ্কঋণ পায়, তারও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়ে থাকে। ১৫টি ব্যাঙ্কের ৬৬টি শাখা থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, এমন টাকার অঙ্ক এক কোটিরও বেশি। কৃষ্ণনগর এক নম্বর ব্লকের বেশকিছু উৎসাহী যুবক এই সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্প্রতি ট্রেনিং নিয়ে ‘আস্থা’ ফার্মার্স ইন্টারেস্টেড গ্রুপ গঠন করেছেন। ফল ও সব্জি সংরক্ষণ শুরু করেছেন তাঁরা। সেগুলি প্রক্রিয়াকরণের পর বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে তাঁদের। নবদ্বীপের কাছে অবস্থিত ব্রহ্মনগর কৃষি উন্নয়ন সমিতি তাঁদের কাছ থেকে উৎপাদিত দ্রব্য কিনে নেবে বলে জানিয়েছে। একইভাবে নবদ্বীপ এলাকার উৎসাহী যুবকরা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং নিয়ে গঠন করেছেন ‘মহাপ্রভু’ ফার্মার্স এফআইজি। তাঁরা মশলা প্রক্রিয়াকরণ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্রেনিংয়ের দায়িত্বে থাকা ভাস্কর সেনগুপ্ত। তিন মাসের ট্রেনিংয়ে ব্লক ভিত্তিক টিমের কাছ থেকে প্রথমে জেনে নেওয়া হয়, তাদের এলাকায় কী কী ফসল চাষ হয়। তার পর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের খামারে নিয়ে গিয়ে সেসব ফসল সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়। কীভাবে সেই ফসল চাষ করতে হয় এবং উৎপাদিত ফসল কীভাবে প্রক্রিয়াকরণ করতে হয় তা হাতেকলমে শেখানো হয়। এর পর তাঁরা জানান, তাঁরা কী করতে চান। এবার সেই সম্পর্কে আরও বেশি করে পরামর্শ দেওয়া হয়। শেষে প্রকল্প জমা দেয় প্রতিটি টিম।