উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
বাঙালির চোখে এখনও আপনিই তো সেরা ব্যোমকেশ... অনুভূতিটা কেমন?
সেটা আমার সৌভাগ্য ছাড়া আর কী বলি। এমন সম্মান পেয়ে আমি অভিভূত।
আজও ব্যোমকেশ কেন এত জনপ্রিয়?
ব্যোমকেশকে নিয়ে শরদিন্দুর লেখার ধরন খুব সাধারণ, অথচ অসম্ভব শক্তিশালী। সব ধরনের মানুষের কাছে যা পৌঁছে যেতে পারে অনায়াসে। কিশোর বা বয়স্ক, প্রত্যেককেই ছুঁয়ে যায় ব্যোমকেশ। শরদিন্দুর গল্প বলার কৌশলটাই এত আকর্ষণীয় যে, বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও লোকে ফের ব্যোমকেশ নিয়েই কাজ করার কথা ভাবে। সেটা সিরিয়াল হোক বা ফিল্ম অথবা নাটক, প্রক্রিয়াটা চলতেই থাকে। কারণ ব্যোমকেশ আপাতভাবে একজন সাধারণ মানুষ, যাঁর সঙ্গে নিজেকে খুব সহজে কানেক্ট করতে পারি আমরা। এটাই এই রহস্য-গল্পের সৌন্দর্য।
সত্যান্বেষী ব্যোমকেশের চরিত্রে আপনি... কীভাবে ঘটেছিল?
বাসুদার (চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে যখন দেখা করতে যাই, তার আগে আমি একটা কাজ করেছিলাম... যুগান্তর। সুজিত সেনের লেখা, শুভঙ্কর ঘোষের পরিচালনা। সেখানে আমি মাইকেল মধুসূদন দত্তের চরিত্রে ছিলাম। বাসুদা সেই কাজ দেখেছিলেন। আর সুজিতদা ব্যোমকেশের চরিত্রে আমার নামটা বলেছিলেন। বাসুদার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর ঠিক দশ মিনিট লেগেছিল... উনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, আমিই ব্যোমকেশ। তারপর আবার ওঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছিলেন। ততদিনে ৩৩টা গল্পের হিন্দি অনুবাদ ওঁর করা হয়ে গিয়েছে। সব এপিসোড আমায় দিয়ে দিলেন... আর বললেন, ‘আমার হোমওয়ার্ক হয়ে গিয়েছে। এবার তুমি তোমারটা করে নাও। সব পড়ে ফেলো। যদি হিন্দিতে কোথাও সমস্যা থাকে, ঠিক করে দিও। আমার হিন্দি অত ভালো নয়। আর অন্য কোনও সমস্যা হলেও বোলো। তোমার হয়ে গেলে আমরা শ্যুটিং শুরু করে দেব।’ অল্প কথায় কত সুন্দর বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এভাবেই শুরু হয়ে গেল কাজ।
বাসু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা একটু বলুন।
উনি গল্পগুলোয় কোনও রূপান্তর ঘটানোর চেষ্টা করেননি। সাধারণ জিনিসটাকে সাধারণই রাখতে চেয়েছিলেন। আমরা লোকেশন ওয়াইজ শ্যুট করেছিলাম। ফিল্ম যেভাবে হয়, সেভাবেই। ব্যোমকেশের বাড়ির দৃশ্যগুলো সব ওঁর বাড়িতে শ্যুট হয়েছিল। সবকটা এপিসোডের... একসঙ্গে। সেটাই প্রথম... তারপর শুরু হল আউটডোর কাজ। সেই সূত্রেই কলকাতা যাওয়া। উৎপলদা (দত্ত) আর রবি ঘোষের সঙ্গে দু’টো এপিসোডের পুরোটা কলকাতায় শ্যুট হয়েছিল।
তখন ব্যোমকেশ হয়েছিল পুরোটা শরদিন্দুর লেখা মেনেই... আজকাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। সেটা কীভাবে দেখেন?
দেখুন, সেটা নির্ভর করে কে কীভাবে কাজটা করতে চাইছেন, তার উপর। আজ যদি কেউ ব্যোমকেশ করতে যান, তিনি কেন পুরোপুরি বাসুদাকে ফলো করবেন? তার তো কোনও মানেই হয় না। যা এত বছর ধরে সাহিত্যের অঙ্গ হয়ে আছে, সেটা নিয়ে আবার কাজ করতে গেলে তার মধ্যে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি আনতেই হবে। মূল টেক্সট খুব পাল্টে দেওয়া যায় না। কিন্তু অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে দেখতে হবেই। তাহলেই সেটা সৃষ্টিশীলতার দিক থেকে আলাদা হবে। এতদিনে ব্যোমকেশ নিয়ে অনেক ধরনের কাজ হয়েছে। একটা অন্যটির থেকে আলাদা। সেটাই তো হওয়া উচিত। এক রকমের হলে আপনি আর সেটা দেখবেন কেন?
এ কালের ব্যোমকেশ দেখেছেন? আপনার কেমন লেগেছে?
আবীরের কাজ দেখেছি। প্রথম ছবিটা বোধহয় সিলভার জুবিলি হয়েছিল। ওঁরা আমায় বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি কলকাতায় এসেছিলাম সেটা দেখতে। বেশ আলাদা কাজ। দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় সুশান্তের (সিং রাজপুত) কাজও দেখেছি। সেটাও অন্যরকম ছিল।
আবীরকে ব্যোমকেশ হিসেবে কেমন লেগেছিল?
ওঁর স্ক্রিন প্রেজেন্স খুবই ভালো। দারুণ কাজ করেছে।
ব্যোমকেশের চরিত্রে যাঁরা কাজ করছেন বা ভবিষ্যতে করবেন, তাঁদের জন্য কোনও পরামর্শ
এ ক্ষেত্রে পরামর্শ বলে কিছু হয় না। আমি অন্তত বিশ্বাস করি না। যিনি করছেন, তিনিই ভাববেন চরিত্রটা নিয়ে। কীভাবে করবেন, সেটা তাঁর এবং পরিচালকের ভাবনায় থাকবে।
ব্যোমকেশ আপনাকে ধুতি পরতে শিখিয়ে ছিল?
(হাসতে হাসতে) হ্যাঁ, এখন আমি চোখ বন্ধ করে ধুতি পরে ফেলতে পারি। ব্যোমকেশ করার সময় ছ’মাস রোজ ধুতি পরেছি। শেখা হয়ে গিয়েছিল তখনই। কস্টিউমের দাদা প্রথমে করে দিতেন। তারপর শিখে গিয়ে নিজেই করতাম। এখন তো নাটকের জন্য দরকার পড়লে আমি লোককে ধুতি পরিয়ে দিই।
কলকাতায় তো নাটকের জন্য এখনও আসেন। কেমন লাগে, কী স্মৃতি শহরটাকে ঘিরে?
এ শহরের গুড়ের সন্দেশ বরাবরের প্রিয়। কলকাতায় যখনই আসি, ওটা আমার চাই। সাহিত্য আর শিল্পে বাঙালিদের জ্ঞান এখনও প্রশংসনীয়। আর স্মৃতি তো অনেক...। চৌরঙ্গি দিয়ে হাঁটা, গ্র্যান্ডে থাকা...। রাস্তায় হাঁটাটা ভালো লাগত। দুপুর তিনটে থেকে শ্যুটিং হতো। কাজ হয়ে গেলে আমি আর কে কে (অজিতের চরিত্রে ছিলেন, কে কে রায়না) চৌরঙ্গি ধরে হাঁটতাম, পুরনো বই ঘাঁটতাম। চায়না টাউনও যেতাম, আপনারা ট্যাংরা বলেন যাকে। সেই ট্যাংরা আর এখন কোথায়? সেই অনুভূতিটাও নেই। ২০ বছর আগে রাতের দিকে ওখানে গিয়ে গাড়ি রাখার জায়গা পেতাম না আমরা। শুনেছি, অনেক পুরনো রেস্তরাঁ মালিক ওখান থেকে চলে গিয়েছেন। এখন বিড়লা সভাঘরে আসি পারফর্ম করতে। সবই খুব চেনা। কাছের বলেই মনে হয় আপনাদের শহরটাকে।