উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
৪৯তম বছরে পড়ল কলকাতা ইসকনের রথোৎসব। আগামী বছর সুবর্ণজয়ন্তী। ইসকনের রথোৎসব এখন কলকাতার রথ হিসেবেই বেশি জনপ্রিয়। আর ইসকনের রথযাত্রা মানেই অগণিত ভক্ত, সন্ন্যাসী ও দর্শনার্থীর সমাগম। আড়ম্বরপূর্ণ এই রথযাত্রা উপলক্ষে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে সপ্তাহব্যাপী। পুরীর পরই অন্যতম রথোৎসব হল ইসকনের রথযাত্রা। এমনই ঐতিহ্যশালী রথ’কে এবছর কলকাতার রাজপথ পরিক্রমণ করতে দেখা যাবে না। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বাড়তি সতর্কতার জন্য এবছর রথযাত্রা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসকন কর্তৃপক্ষ। তবে বিশেষ থিমে সাজানো রথ না বেরলেও, ইসকন মন্দিরে সমস্ত রীতি মেনে ভগবান জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার পুজো হবে।
পুজো ও সাজসজ্জা
এই প্রথমবার করোনা সংক্রমণের চোখ রাঙানিতে কোনও থিমে সাজবে না রথ। তাই ইসকনের ব্রহ্মচারী ও সন্ন্যাসীরা মিলে ফুল, রঙিন কাগজ, বস্ত্র প্রভৃতি সাজ সরঞ্জাম দিয়ে মন্দির সাজাচ্ছেন। রথের দিন ভগবান জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রা মন্দিরে অবস্থিত মাসির বাড়িতে এসে থাকবেন। সেখানে প্রতিদিন রীতি মেনে ভগবানের পুজোপাঠ হবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান
এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আগে এই ঐতিহ্যশালী রথোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় উপস্থিত থেকেছেন টলিউড-বলিউড তারকা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, শিল্পপতি প্রমুখ বিশিষ্টজন।
অনলাইনে ভগবান দর্শন
কোভিড-১৯ নিয়ে সরকারের নির্দেশিকাকে মেনেই রথযাত্রা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, আপাতত লকডাউন শর্তসাপেক্ষে কিছুটা শিথিল হলেও রথোৎসবে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগমে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন। কিন্তু তাই বলে কি, ভক্ত ও দর্শকরা ভগবানের দর্শন পাবেন না? অবশ্যই পাবেন। তবে অনলাইনের মাধ্যমে। ইসকন কলকাতা ফেসবুক পেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইসকনের ওয়েবসাইট ও ইউটিউবে-এ রথোৎসবের প্রথম থেকে শেষদিন পর্যন্ত সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এতে যেমন সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে, তেমনি ভগবানের দর্শন পাওয়া যাবে।
পরিবারের জন্য পুজো
ভগবান জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার চরণে পুজো দেওয়ার জন্য প্রতি বছরই ইসকন কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা করে থাকে। এবার রথযাত্রা বাতিল হওয়ায়, সেই বন্দোবস্ত আর থাকছে না। কারণ, সামাজিক দূরত্ব মেনে সাধারণ ভক্ত ও দর্শকদের জন্য বিশেষ পুজোর আয়োজন করা মোটেই নিরাপদ নয়।
পথ পরিক্রমা
একমাত্র ভক্ত বা দর্শনার্থীদের অনুরোধেই যাত্রাপথে দাঁড়াত ইসকনের রথ। কলকাতার একাধিক রাস্তা দিয়ে রথ এগিয়ে চলত। সকাল ১০টা নাগাদ ৩সি অ্যালবার্ট রোডের ইসকন মন্দির থেকে রথ বেরিয়ে হ্যাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট হয়ে একাধিক রাস্তা দিয়ে সোজা ব্রিগেট প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছত। প্রতিবার এক একটি রুট দিয়ে রথ যেত। দীর্ঘপথ জুড়ে দেশ বিদেশের সন্ন্যাসী, ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতেন। উলটো রথের দিনও একই রকমভাবে রথ ৩সি, অ্যালবার্ট রোডে ইসকনের মন্দিরে ফিরে রথযাত্রার সমাপ্তি হত। এই প্রথমবার ইসকনের রথের সেই ঐতিহাসিক রাজপথ পরিক্রমণ সাক্ষাৎ করা হবে না আমজনতার।
বিশ্বজুড়ে স্থগিত
বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশের প্রায় ৭০০টি শহরে ভক্তি ভরে ধুমধাম করে ইসকনের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পুরীর রথের তিথি মেনেই এই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এবার শুধু কলকাতা নয়, সারা বিশ্বে ইসকনের সব কেন্দ্রই রথযাত্রা বাতিল করেছে, জানালেন কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমন দাস।
কলকাতায় সূচনাপর্ব
কলকাতায় ইসকনের রথযাত্রার সূচনা করেছিলেন শ্রীল প্রভুপাদ। প্রায় একশো উনিশ বছর আগে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে কলকাতায় তিনি সাধারণ রথযাত্রার শুরু করেছিলেন। এরপর ১৯৭২ সালে শ্রীল প্রভুপাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসকনের রথযাত্রার সূচনা করেন। আজ ইসকনের রথোৎসব দেশের অন্যতম সেরা উৎসব হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
বর্ণময় রথোৎসব
ইসকনের রথযাত্রায় দেশ-বিদেশ থেকে আসা সদস্য, সন্ন্যাসী, ভক্ত, থেকে সেলিব্রিটি, সাধারণ মানুষ ও কচি-কাঁচারা আনন্দ উদ্দীপনায় মেতে ওঠেন। ছোটরা রাধা-কৃষ্ণ-বলরাম-গোপ-গোপী সেজে রথোৎসবের আকর্ষণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। মহিলারা রংবেরঙের শাড়ি পরে সুস্বাগতম জগন্নাথ, সুস্বাগতম বলদেব, সুস্বাগতম সুভদ্রা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠেন। যাত্রাপথের সূচনা থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত দেশ-বিদেশ থেকে আসা অতিথিরা নৃত্য ও সংকীর্তন করতে করতে এগিয়ে চলেন। এবছর এইসব দৃশ্য আমাদের দেখা হবে না।
ব্রিগেডে মেলা ও অনুষ্ঠান
রথযাত্রা স্থগিতের জন্য ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও এবার হচ্ছে না। প্রতিবারই রথযাত্রা উপলক্ষে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের জন্য একটি মেলার আয়োজন করা হতো। ভগবান জগন্নাথদেবের সামনে মঞ্চে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন দেশ-বিদেশের বহু শিল্পী। নৃত্যানুষ্ঠান, নাটক, কীর্তন, আলোচনাচক্র, বিতর্কসভা, বিদেশিদের হরিনাম সংকীর্তন কত কি না হতো।
যাইহোক, সব বাতিলের মধ্যেও কিছুটা মন ভালো করা খবর হল ইসকন কর্তৃপক্ষ রথোৎসব সরাসরি সম্প্রচার করবে একাধিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। দেখতে পাবেন আমজনতা। সরাসরি সম্প্রচার দেখার লিংক :
www.facebook.com/iskconkolkatatemple,
www.iskconkolkata.com, www.youtube.com