উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
সালটা ১৯৭৭, ছেলেবেলার স্মৃতিটা আজও ভেসে ওঠে... হুগলি নদীর দুই পারে সারি দিয়ে মানুষ অপেক্ষা করছিল। কখন স্যার এডমুন্ড হিলারির দেখা পাওয়া যাবে...। আমিও ছিলাম প্রতীক্ষায়। তারপর দেখা পেলাম তাঁর। ‘ওশেন টু স্কাই’ অভিযানে। দীর্ঘ চেহারা, টকটকে গায়ের রং, আর সোজা মেরুদণ্ড। এভারেস্টের শিখরে প্রথম পা রাখা সেই কিংবদন্তি। ছোটবেলায় সেই প্রথম দেখা থেকেই মনে কল্পনার বীজ বপন হয়ে গিয়েছিল... জন্ম নিয়েছিল আকাঙ্ক্ষা... কবে সাক্ষাৎ হবে এই ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। হিমালয়ান পর্বতারোহণ সংস্থার কিউরেটর পদে বসার পর সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপ পেল। ১৯৯৭ সালের মার্চ মাসে। তেনজিং নোরগের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করতে আমাদের সংস্থায় এলেন স্যার এডমুন্ড হিলারি। প্রথম পরিচয়েই কাছের মানুষ হয়ে গেলেন। অন্তর থেকে চিনতে পারলাম বিনয়ী, নম্র সভাবের ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটাকে। ২০০৩ সালে দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ। ভীষণ খুশি হয়েছিলেন ওঁর ব্যাবহৃত জিনিসগুলো দেখে। আমরা যে দায়িত্ব নিয়ে তাঁর সব জিনিস আমাদের মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করে রেখেছি, সেটা দেখে শিশুর মতো খুশি হয়েছিলেন স্যার হিলারি। যেমন, ক্যামেরা কেস, রুকস্যাক... যেগুলো উনি ব্যবহার করেছিলেন ১৯৫৩’র এভারেস্ট অভিযানে।
এখানে স্যার হিলারির একটু সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানানোর প্রয়োজন আছে। জন্মগ্রহণ করেছিলেন ২০ জুলাই, ১৯১৮ সালে। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে টুয়াকু নামে একটি ছোট্ট গ্রামে। পড়াশোনাও শুরু হয়েছিল এখানকারই একটা প্রাইমারি স্কুলে। মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। ছেলের মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য মা তাঁকে অকল্যান্ড গ্রামার স্কুলে ভর্তি করান। এরপর অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে গণিত আর বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা। মেধাবি ছাত্র, কিন্তু ছোট থেকেই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়। বয়স যত বেড়েছে, পর্বতারোহণের আগ্রহের পারদ চড়েছে পাল্লা দিয়ে। যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনে। মাত্র ২০ বছর বয়সে প্রথম সাফল্য। নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ আল্পসে মাউন্ট অলিভিয়ার শিখরে উঠলেন হিলারি। পাহাড়ে চড়ার যেন নেশা লেগে গেল তাঁর। আর সেই নেশাই পথ দেখাল... বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করলেন তিনি। পাশে তেনজিং নোরগে।
হিলারির পারিবারিক ব্যবসা মৌ-চাষ। ভাই রেক্সকে সঙ্গে নিয়ে বাবার কাজে সাহায্য করতেন হিলারি। কাজ বলতে মৌমাছি রক্ষা করা। আর একটু ফাঁক পেলেই শরীরচর্চা, খেলাধুলো। পরিবার চেয়েছিল, তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রয়্যাল নিউজিল্যান্ড বিমান বাহিনীতে যোগ দেন হিলারি। বিবেক মানেনি, তাও বাড়ির কথা ফেলতে পারেননি তিনি। শুরুটা এরপরও মন্দ হয়নি। কিন্তু নিয়তিই যে চায়নি তাঁকে এই ভূমিকায় দেখতে। বড় দুর্ঘটনায় পড়লেন হিলারি। আগুনে শরীর পুড়ল তাঁর। কিন্তু সেই আঁচ ছুঁতে পারল না মনকে। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি, দুনিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করবেন। সেই লক্ষ্যেই ছুটে চললেন হিলারি। ১৯৪৮ সাল... জয় করলেন নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এই অভিযানই তাঁকে সুযোগ এনে দিল... ১৯৫১ সালে এভারেস্টে ব্রিটিশ অভিযানে। কিন্তু সেই অভিযান সাফল্যের আলো দেখল না। জন হান্টের নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালে নবম ব্রিটিশ এভারেস্ট অভিযানে আবার অংশ নিলেনন হিলারি। দলটি খুম্বু আইসফল এবং সাউথ কল-এর মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা খোদাই করল। তারপর জন হান্ট বেছে নিলেন দু’জনকে। দলের ওই দুই সদস্য রওনা দিলেন এভারেস্টের দিকে। কিন্তু শেষমেশ হয়ে উঠল না। ক্লান্তি রুখে দিল তাঁদের পথ। ফিরতে হল তাঁদের শিবিরে। এরপর এল সুযোগ। জন হান্ট তৈরি হতে বললেন হিলারিকে। পথ আর পরিবেশ যে কতটা কঠিন হতে চলেছে, তা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন হিলারি। এবং অবশ্যই তাঁর সঙ্গী শেরপা তেনজিং নোরগে। আর কিছু সঙ্গে না থাকুক, অক্সিজেনের বাড়তি সিলিন্ডার নিতেই হবে। এভারেস্টের লক্ষ্যে রওনা দিলেন তেনজিং নোরগে-এডমুন্ড হিলারি। ইতিহাস রচিত হল... তারিখটা ২৯ মে, ১৯৫৩। ঠিক সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ২৯,০২৮ ফুট (৮৮৪৮ মিটার) উচ্চতায় পৌঁছে গেলেন তাঁরা। তেনজিং ও হিলারি... দু’জনে একইসঙ্গে পা রাখলেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পয়েন্টে। বিস্মিত, গর্বিত হল গোটা বিশ্ব। গর্বে বুক ফুলে উঠল ভারতের। কারণ, মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উড়ল তেরঙ্গাও। যে জাতীয় পতাকাটি দার্জিলিং নিবাসী রথীন্দ্রনাথ মিত্র দিয়েছিলেন তেনজিংকে।
স্যার হিলারির সঙ্গে শেরপা তেনজিংয়ের সম্পর্ক ঠিক কতটা গভীর ছিল, তা অনেকেই জানেন না। তেনজিং নোরগের জন্ম ১৯১৪ সালে। বছরটা জানতেন, কিন্তু তারিখটা কবে, তা তিনি নিজেও জানতেন না। দু’জনে একসঙ্গে এভারেস্টে পা রাখা মাত্র আনন্দে, আবেগে ভাসলেন হিলারি। আর সেই মুহূর্তে নোরগেকে বললেন, তোমার জন্মদিন হোক আজ... ২৯ মে। ওই তারিখটাই এরপর থেকে সরকারিভাবে নথিভুক্ত হল তেনজিং নোরগের জন্মদিন হিসেবে। তাঁরা দু’জনই বিশ্বাস করতেন, একা নয়, দলবদ্ধ কাজের মধ্যে দিয়েই আসে সাফল্য। আর তাই কেউ আগে নয়, বিশ্বকে তাঁরা দেখিয়েছেন, জানিয়েছেন... এভারেস্টের প্রথম পদক্ষেপ দু’জনের। একসঙ্গে। এর থেকেই প্রমাণ মেলে স্যার এডমুন্ড হিলারির বিনয়, আন্তরিকতার। তেনজিংয়ের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল আজীবন। একই ধারায় বয়ে গিয়েছে একের প্রতি অপরের ভালোবাসা। জীবনভর এবং মৃত্যুর পরেও। তেনজিং নোরগের মৃত্যুর সুদূর থেকে ছুটে এসেছিলেন দার্জিলিংয়ে। প্রিয় বন্ধুকে শেষ দেখা দেখতে।
ভাবনাটা ছিল হিলারি এবং তেনজিংয়ের। সেই ভাবনার ভিতের উপর দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে দার্জিলিংয়ে গড়ে উঠেছিল হিমালায়ান পর্বতারোহণ সংস্থা। আর তাই স্যার হিলারি বারবার ছুটে এসেছেন এখানে। তেনজিংয়ের ভালোবাসার টানে। বন্ধুর অনুরোধে এবং হিমালায়ান পর্বতারোহণ সংস্থার কথা ভেবে তাঁর ব্যবহৃত বেশ কিছু সরঞ্জাম উপহারও দিয়েছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় এইচএমআইয়ের বেস ক্যাম্পের জন্য ‘SILVER HUT’... প্রবল ঠান্ডায় একটু গরম অনুভূতির জন্য। আজও যাঁরা প্রশিক্ষণ নিতে ওখানে যান, এই HUT ব্যবহার করেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল... নিউজিল্যান্ডের হাই কমিশনার ও একইসঙ্গে নেপালের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেছেন হিলারি। সেই সময় নিয়মিত তিনি হিমালায়ান পর্বতারোহণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। ১৯৮৫ সালে হিমালায়ান পর্বতারোহণ সংস্থার শিশুদের কথা ভেবে স্যার হিলারি সংস্থার ক্যাম্পাসের ভিতর একটি শিশু উদ্যানও স্থাপন করেছিলেন।
৯ই মে, ১৯৮৬। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন তেনজিং নোরগে। তারপরও বন্ধুর প্রতি টান এতটুকু কমেনি স্যার হিলারির। এমনকী, ১১ বছর পর, ১৯৯৭ সালে হিমালয়ান পর্বতারোহণ সংস্থায় যখন তেনজিংয়ের মূর্তির স্থাপনা হল, এক কথায় সস্ত্রীক চলে এসেছিলেন হিলারি। ওই দিন ভাষণ দেওয়ার সময় চোখের জল বাধা মানেনি তাঁর। সেটাই ছিল তাঁর শেষবার দার্জিলিংয়ে আসা।
এই বন্ধুতা, ভালবাসা ধরে রেখেছে দু’জনের পরিবার... দুই ছেলেও। পিটার হিলারি ও জামলিং নোরগে প্রায়ই চলে আসেন এই হিমালায়ান পর্বতারোহণ সংস্থায়, এখানকার জাদুঘরে। স্মৃতি হতেড়ে নিয়ে আসেন তাঁদের ফেলে আসা দিনগুলো, অসীম আনন্দ, পারিবারিক মেলবন্ধন।
বিনয়ী, নম্র স্বভাবের মানুষটির হৃদয় যে কত বড়, তার প্রমাণ বারবার মিলেছে। ১৯৬০ সালে স্যার হিলারি এক শেরপাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘শেরপাদের জন্য আমি কি কিছু করতে পারি?’ সেই শেরপার জবাব ছিল, ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের চোখ আছে, তবে তারা অন্ধ... দেখতে পারে না। আমরা চাই, আপনি আমাদের গ্রামে একটি স্কুল তৈরি করে দিন। খুলে দিন তাদের চোখ। তারাও দেখুক দুনিয়াটাকে।’ কথাগুলো মন ছুঁয়ে গিয়েছিল হিলারির। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি খুমজংয়ে প্রথম স্কুলটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এভারেস্টের পাদদেশে সলুখুম্বু অঞ্চলজুড়ে স্কুল, হাসপাতাল এবং হেল্থ ক্লিনিক তৈরি হয়েছে... যা আজও নেপালের সাধারণ গরিব মানুষদের পরিষেবা দিয়ে চলেছে। বিকাশ হচ্ছে শিক্ষার, প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে তারা। আপাদমস্তক নিরহঙ্কার একটা মানুষ... গ্রামবাসীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করা, নেমে পড়া চাষবাসেও। এমনই ছিলেন হিলারি।
১১ জানুয়ারি, ২০০৮ সাল... দেহ রাখেন স্যার হিলারি। আজও কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন... নেপালের সেই গরিব মানুষগুলোর মধ্যে, হিমালয়ান ট্রাস্টের মাধ্যমে। যা আজও চলছে কয়েকজন মানুষের অনুদানে। এছাড়াও তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য নিউজিল্যান্ডে চালু রয়েছে এডমুন্ড হিলারি ফেলোশিপ। ২০২০ তাঁর জন্ম শতবর্ষ... কিন্তু সত্যিই যদি স্যার এডমুন্ড হিলারিকে স্মরণ করতে হয়, তার জন্য সবার আগে আমাদের মানবিক হতে হবে। সাধারণ, পিছিয়ে পড়া, বিচ্ছিন্ন মানুষদের জন্য এগিয়ে আসাটাই ছিল তাঁর জীবনের পরম ধর্ম। এভারেস্টের শিখর নয়, তিনি যে মানুষের মনও ছুঁয়েছেন।
লেখক: কিউরেটার, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, দার্জিলিং
গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল
সহযোিগতায় : অভিষেক েগাস্বামী
চিরকালীন বন্ধুত্ব
জামলিং নোরগে
শেরপা তেনজিং নোরগে এবং এড হিলারি, দুই নম্র এবং সত্যিকারের সাদাসিধা মানুষ। ২৯ মে ১৯৫৩ তারিখটা এই দুই এক্সপ্লোরারকে একটা সুযোগ এনে দিয়েছিল... প্রথমবার মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের। একসঙ্গে। দু’জনেই অসম্ভব পরিশ্রমী। কখনও লক্ষ্যচ্যুত হতেন না তাঁরা। যা করবেন বলে স্থির করতেন, সেই টার্গেট ছুঁতেন অবলীলায়। আর এক্ষেত্রে তাঁদের অস্ত্রই ছিল টিম ওয়ার্ক। সেই বন্ধুত্বের ধারাই উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করছে তাঁদের পরিবার, সন্তানরা...। আর বহন করছে দুই কিংবদন্তির লেগাসিও।
অচেনা হতো না নতুন পৃথিবীটাও
পিটার হিলারি
২০ জুলাই ছিল বাবার জন্মদিন। বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হতো ১০১ বছর। ভাবতে অবাক লাগে, আজ উনি থাকলে কী করতেন! কীভাবে দেখতেন এই পৃথিবীটাকে? কেমনই বা হতো তাঁর পৃথিবী? বদলে যাওয়া এই দুনিয়াটাকে তিনি কি চিনতে পারতেন? মোকাবিলা করতে পারতেন এই পরিস্থিতির? তারপরই মনে পড়ে, বাবা তো জন্মেছিলেন বিশ্বব্যাপী আর এক মহামারীর বছরে... ১৯১৮। সেই ফ্লু ছিল গোটা পৃথিবীর কাছে ত্রাস। তারপর মহামন্দা...। সব শেষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ... বিবেক মেনে নেয়নি তাঁর। কিন্তু শেষে অংশ নিয়েছিলেন সেই যুদ্ধেই। সে ছিল এক অদ্ভুত লড়াই। আমার ঠাকুর্দা নিজেই ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় গ্যালিপলির সেই ‘অমানবিক’ ট্রেঞ্চের মধ্যে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন। তাই এই ধরনের সব কিছুর থেকে আমাদের পরিবার অনেক বেশি গুরুত্ব দিত মানুষ, শিক্ষা এবং মূল্যবোধকে। আর তার সঙ্গে ছিল পরিশ্রম। জীবনের উঁচ-নীচ দেখেছিলেন তিনি। তাই আজ করোনা মহামারীর ত্রাস এবং সে নিয়ে বিশ্বের অদ্ভুত রাজনীতি দেখেও হয়তো অবাক হতেন না স্যার এডমুন্ড হিলারি। সবই তাঁর কাছে পরিচিতই মনে হতো...।
১৯৫৩ সালের ২৯ মে তেনজিং নোরগের সঙ্গে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছিলেন বাবা। ওই একটা দিন, ওই একটা ঘটনা অনেক কিছুর জন্ম দিয়েছিল। এমন একটা জায়গায় পৌঁছে যাওয়া... যেখানে কেউ কোনওদিন পৌঁছতে পারেনি। মানুষের কর্মক্ষমতা, দক্ষতার যাবতীয় বাঁধ ভেঙে এগিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। যার ফলে গোটা মানব সমাজ এগিয়ে গিয়েছিল আরও একটা ধাপ। ১৯৫৩ সালের সেই অভিযানের অভিঘাত ছিল এতটাই...। শেরপা এবং মাউন্ট এভারেস্টের তলদেশের মানুষের কথা ভেবেছিলেন। তাঁদের জন্য, তাঁদের উন্নতির স্বার্থে কাজ করে গিয়েছিলেন ৫০ বছর ধরে। আর ছিল তেনজিং পরিবারের সঙ্গে মনের কাছাকাছি একটা সম্পর্ক। যা আজও অটুট রয়ে গিয়েছে... সন্তানদের মধ্যেও। এখনও আমি প্রায় প্রতি সপ্তাহে নোরবু তেনজিং বা জামলিং তেনজিংয়ের সঙ্গে ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করি। শুধু সৌজন্য নয়, আমাদের নিজেদের পরিকল্পনা, ভালো লাগা বা খারাপ লাগা... সবই শেয়ার করি আমরা। এই বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা উপকরণ। এবং বিশ্বের শিখরে প্রথম পা রাখা দুই কিংবদন্তির লেগাসি, ঐতিহ্য...। এক অটুট বন্ধুত্ব, পার্টনারশিপ... যা আজ আরও বেশি করে দরকার এই বিশ্বের জন্য, মানব সভ্যতার জন্য।