সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
দোলের দিনে সন্ন্যাসীরা আবির খেলায় মেতে ওঠেন। ঠাকুর নিজে আবির খেলতেন। অন্যকে আবির মাখাতেন এবং উৎসাহ দিতেন রং খেলায়। রং খেলার এক আধ্যাত্মিক দিক রয়েছে। এক বিশেষ সময়ে শ্রীকৃষ্ণের এক বিশেষ লীলাই হল দোল বা হোলি। সেই লীলাই ক্রমান্বয়ে প্রকাশ পেয়েছে শ্রীচৈতন্য এবং ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্য দিয়ে। এদিন শ্রীচৈতন্যের জন্মদিনও। তাই এদিন বিশেষ পুজোও হয় বেলুড় মঠে। আসলে এই ফাগ খেলা হল এক আন্দোলন। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমস্ত ভেদাভেদ মুছে যায়। মুছে যায় মানুষের অন্তরের দ্বন্দ্ব এবং ভেদাভেদটুকুও। এমনকী পুরুষ-নারীর ভেদও দূর হয়ে যায়। সব ভেদ মুছে গেলে তখন এক পূর্ণ সত্তার মানুষের প্রকাশ ঘটে। আত্ম বলে তখন আর কোনও অস্তিত্বই থাকে না। মনে তখন এক নবচৈতন্যের উদয় হয়। সব ভোগবাসনা দূর হয়ে যায়। তাই রং খেলা আপাতভাবে কোনও সহজ ক্রীড়া নয়। এই রং, এই আবির সমস্ত ভেদাভেদ এবং ভোগবাদের বিরুদ্ধে অপ্রকাশ্য যুদ্ধঘোষণা। হোলিখেলার সূচনা ব্রজধামে। শ্রীকৃষ্ণের অনন্ত লীলার এ এক খণ্ডপ্রকাশ মাত্র। কিন্তু সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিচার করলে হোলিখেলার মধ্যে এক গূঢ় তাৎপর্যের প্রকাশ দেখি।
শ্রীকৃষ্ণের এবং শ্রীচৈতন্যের এই লীলার আনন্দকেই উপভোগ করার প্রয়াস ও পরিবেশ তৈরি করেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। তাঁর পরশমণির ছোঁয়ায় সবাই জাগতিক কাম, ক্রোধ ভুলে অনাবিল আনন্দে মেতে উঠতেন।
আমরা ‘রামকৃষ্ণ কথামৃত’-এ এক দোলের দিনের কথা পাই। সেদিনটা ছিল ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের পয়লা মার্চ। দক্ষিণেশ্বরে তাঁর ঘরে ঠাকুর বসে আছেন ভক্তপরিবৃত হয়ে। হরিভক্তির কথা চলছে। ঠাকুর জীবকোটি এবং ঈশ্বরকোটির ব্যাখ্যা করছেন। একটু পরে তিনি রাধামাধবের মন্দিরে গিয়ে ফাগের থালা থেকে ফাগ নিয়ে রাধামাধবকে দিলেন। তারপরে কালীঘরে গিয়ে আবির দিলেন মা কালীকে। আবির দিলেন বিভিন্ন পটচিত্রে। নরেনের মুখোমুখি হতেই ফাগ দিলেন নরেনের গায়ে। মাস্টার এবং অন্যান্য ভক্তদেরও আবির দিলেন। এরপর মহিমাচরণের শ্লোককথন। শুরু হল গান। ঠাকুর ধীরে ধীরে ভাবাবিষ্ট হয়ে গেলেন এবং সংকীর্তনের মধ্যেই নৃত্য শুরু করলেন। এই দিনেই ঠাকুর নরেনকে বলেছিলেন কামিনী কাঞ্চন ত্যাগ করতে। বলেছিলেন, ‘বাবা, কামিনী কাঞ্চন ত্যাগ না করলে কিছু হবে না।’ স্বামীজি সারাজীবন সেই আদেশ মেনে চলেছিলেন। এক রঙিন হয়ে ওঠার দিনে ঠাকুর তাঁকে পার্থিব রঙিন জীবনের অনেক উপরে আরও এক রঙিন ও আনন্দময় জীবনের সন্ধান দিয়ে গেলেন। সেই অন্তরের মুঠো মুঠো আনন্দ এবং সেবার রংকে স্বামীজি ছড়িয়ে দিলেন সারা জগতে। দোলের তাৎপর্যের কথা বলছিলেন স্বামী ভক্তিপ্রিয়ানন্দ। আবার এসেছে বসন্ত। এসেছে রং খেলার আহ্বান। কিন্তু এখন মনে হয়, রং খেলার অর্থ ও তাৎপর্য অনেকটা বদলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে মন ও মানসিকতা। কিন্তু একদিন সবাই এই রং খেলার প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পারবে। নিছক রং খেলার ভিতরের অর্থকে উপলব্ধি করতে পারলে সার্থক হয়ে উঠবে রং খেলা। শুধু শরীরে নয়, রং যেন লাগে চৈতন্যে। চেতনার সেই রং সব কিছু আমূল বদলে দিতে পারে। রংয়েই আছে আধ্যাত্মিক উত্তরণের আহ্বান। অন্তরে জেগে উঠতে পারে অরূপদর্শনের অনুভূতি। রং তাই শুধু রং নয়, এক অসীম শক্তির ধারক।