সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
প্রত্যেক উৎসবের যেমন ইতিহাস থাকে, নববর্ষ পালনেরও আছে। এই উৎসবের সঙ্গে শুরু থেকে জড়িয়েছিল ভূমিরাজস্ব। সেযুগেই আরম্ভ হয় হালখাতা, বিশেষ করে হিসেব নিকেশ রাখার জন্য। যেখানে বাৎসরিক কর আদায় করা হতো। পুরানো হিসেব বন্ধ করে নতুন করে খাতায় লেখা শুরু হতো। সেই থেকে প্রচলন হালখাতার। সূচনা যাই হোক, বাংলার ব্যবসায়ীদের কাছে পয়লা বৈশাখ শুভদিন। প্রায় ৫০০/৬০০ বছর আগে পয়লা বৈশাখে যা শুরু হয়েছিল, সেই শুভসূচনা বা রীতি আজও বাংলার ব্যবসায়ীরা অনুসরণ করে।
উৎসব উদ্যাপনের বিশেষ অঙ্গ পোশাক পরিচ্ছদ এবং খাওয়া দাওয়া। বাঙালি ভোজনরসিক রূপেও পরিচিত। তাতে রং ফিকে না হলেও ভিন্ন রং লেগেছে একথা সত্য। অনেক পরিবারে এখনও তথাকথিত ধুতি-পাঞ্জাবি এবং লাল পাড় শাড়ি না হলেও বাঙালিয়ানা মাথায় রেখে নতুন পোশাক পরা হয়।
মা-ঠাকুমারা বলতেন বছরের প্রথম দিনে ভালো ভালো খাবার খেতে হয়। পয়লা বৈশাখে বাড়িতে অতিথি এলেই মিষ্টিমুখ করানো হতো। মাছ-মাংস, মিষ্টি দই, নানান রকমের মিষ্টি, রসগোল্লা সহ দিনভর খাওয়া চলত। কর্তা মন ভরে বাজার করতেন আর গিন্নি আনন্দে রান্নায় ব্যস্ত থাকতেন।
নববর্ষের সঙ্গে চড়ক-গাজন উৎসব জড়িয়ে ছিল একসময়। এযুগে আর সেই গাজন নেই আর সংও বেরয় না।
ওপার বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশের বাঙালিদের কাছে নববর্ষ কীভাবে পালিত হয় তার সংক্ষিপ্ত লেখচিত্র— এই উৎসবকে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখও বলা হয়। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় প্রত্যেক বাংলা ভাষাভাষী ওই দিনটি বিশেষ আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করে। বাংলাদেশে এই উৎসব অনেকখানি বিজয় দিবসের মতো। এই দিন বাংলাদেশের রাজপথ থেকে স্কুল কলেজ সর্বত্রই উৎসবের বর্ণময় চিত্র দেখা যায়। প্রভাতফেরি, মেলা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আল্পনা দিয়ে সাজানো হয় উৎসব প্রাঙ্গণ। ওই দিনটিকে স্বাগত জানাতে ভোর থেকে শুরু হয় প্রচুর জনসমাগম। রমনা পার্কে ঐতিহ্যবাহী ‘ছায়ানট’ উৎসবের সূচনা করে। একটি বটগাছের পাদতলে সকলে জমায়েত হয়। সেখানে কবিগুরু, নজরুল সহ বিখ্যাত কবিদের কবিতা ও গানের অনুষ্ঠান হয়। জনপথে, রাজপথে, সব জায়গায় বিশেষভাবে আলপনা দেওয়া হয়। বঙ্গাব্দ ১৩৭৪ সন থেকে ছায়ানট রমনা পার্কে ওই উৎসবের আয়োজন করে চলেছে।
চারুকলা ইনিস্টিটিউট থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এই ঐতিহ্যপূর্ণ মিছিল শুরু হয়েছিল কয়েকদশক আগে। এটাকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বলা হয়। যার সূচনা হয়েছিল শান্তি এবং সুবিচারের আশায়। ওই শোভাযাত্রায় জনগণের হাতে থাকে হাতি, বাঘ, সুন্দর সুন্দর পাখা আরও রং-বেরঙের হস্তশিল্পের নিদর্শন। পার্কে পার্কে বৈশাখী মেলা বসে। বিশেষভাবে শিল্প-সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য চলে প্রদর্শনী। মেলাতে চলতে থাকে ঐতিহ্যবাহী খাবার খাওয়া। ঢাকা শহরে যথেষ্ট আবেগ ও অনুভূতিসহ এই উৎসব পালন ছাড়াও অঞ্চলভিত্তিক কিছু কিছু বিশেষ অনুষ্ঠানও হয়। ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত থাকে হালখাতা নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিশেষভাবে যুব সম্প্রদায়ের নববর্ষ উদ্যাপনরীতি নজরে পড়ার মতো।
বর্ণময় পোশাকে সেজে ওঠে সবাই। মেয়েরা পরে সবুজ শাড়ি লালপাড় আর ছেলেরা লাল অথবা সবুজ পাঞ্জাবি। নিজেদের জাতীয় পতাকার রঙে রাঙিয়ে নেয় নিজেদের। উৎসবের আনন্দ এবং মাত্রা দ্বিগুণ হয় ওপার বাংলায় ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমেও।
মেনুতে বিশেষ বিশেষভাবে অবশ্যই থাকে পান্তাভাত, ইলিশ মাছ ভাজা এবং নানারকম ভর্তা। এছাড়াও বাঙালির প্রিয় খাবারদাবার মেলাপ্রাঙ্গণে বিক্রি হয়। এই দিনে আমজনতার উচ্ছ্বাস অবশ্যই দেখার মতো। নববর্ষের উৎসবে আবেগ এবং আনন্দ প্রমাণ করে বাঙালিয়ানার প্রতি প্রত্যেকেই যত্নবান।