সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
প্রশ্ন: আপনার খেলোয়াড় জীবনের শুরু কীভাবে?
মাত্র চার বছর বয়সেই খেলা আমাকে খুব আকর্ষণ করত। আমরা চার ভাইবোন। আমি ছোট। মাস্টারমশাই, যাঁকে আমি দাদু সম্বোধন করতাম, আমাদের বাড়িতে থেকে আমাদের চার ভাইবোনকে পড়াতেন। তাঁকেই আমার খেলার প্রতি আকর্ষণের কথা প্রথম জানাই। মায়ের দিক থেকে কিন্তু প্রথমে বাধা এসেছিল। মা বলতেন, ছেলেদের মতো ফুটবল খেলে হাত, পা ভেঙে গেলে আর আমার বিয়ে দেওয়া যাবে না।
বাবা যেহেতু গ্রামাঞ্চলে খেলাধুলো করতেন তাই আমার খেলায় তিনি বাধা দিতেন না। আমি সাইকেলে চেপে দাদাদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে যেতাম। কলকাতায় গিয়ে ফুটবল খেলব এই ব্যাপারে আমার খুব আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাস ছিল। স্বপ্ন দেখতাম যে আমার খেলা টিভিতে দেখানো হবে। তখন চোদ্দো-পনেরো বছর বয়স, স্কুল থেকে ফিরেই ফুটবল হাতে মাঠে চলে যেতাম। আমি গ্রামে ছেলেদের সঙ্গেই ফুটবল খেলতাম। অন্য কোনও মেয়ে ফুটবল খেলার কথা ভাবতেও পারত না বলে ছেলেদের সঙ্গেই খেলতে হত আমায়। আমাদের চেনাজানা এক দাদা একবার টাকি থেকে সুন্দরবনের সন্দেশখালিতে আমাদের গ্রামে এসেছিলেন। উনি আমার খেলা দেখে ফুটবল খেলোয়াড় দিব্যেন্দু বিশ্বাস ও অলোক দাসের কোচিং সেন্টারে (বসিরহাট) যেতে বলেন। এরপর বাবার সঙ্গে বসিরহাটে যাই। সেখানেই প্রথম ছেলেদের সঙ্গে আরও দু’জন মেয়েকে প্র্যাকটিস করতে দেখি। তখন আমি জুনিয়র। সিনিয়র না হলে ন্যাশনাল খেলা যায় না। এখানে প্র্যাকটিসের প্রায় ছ-সাত মাস পর কলকাতায় আসি। তখন আমি সপ্তাহে তিন-চারদিন রাত তিনটের সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু’ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে তারপর তিনটে নদী পেরিয়ে তবেই ফুটবল প্র্যাকটিস করতে আসতাম। অদম্য জেদ আর আত্মবিশ্বাসই ছিল আমার একমাত্র শক্তি। আমাদের পরিবার এতটাই দারিদ্রে দিনযাপন করে যে সেখানে দাঁড়িয়ে ফুটবল খেলা যেন স্বপ্নের মতো। আমার বাবা, দাদারা চাষ আবাদ করেন, তাতেই আমাদের পরিবার চলে। ২০১৫-তে কেরালায় ন্যাশনাল খেলতে গিয়ে পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়, পরে সেই পায়ে অস্ত্রপ্রচার হয়। তার আগে আমি সাত-আটটা ন্যাশনাল খেলেছি।
প্রশ্ন: খেলাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কবে নিলেন?
ছেলেবেলার থেকেই। খেলাই আমার ধ্যানজ্ঞান, যার জন্য পড়াশুনা ছেড়েছি। আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। পায়ে চোট পেয়েও আজও খেলতে ভালোবাসি। আবার আমি খেলার মাঠে ফিরেছি। খেলাধুলো ছাড়তে পারছি না। পায়ে যেহেতু অস্ত্রপোচার হয়েছে তাই আর বেশিদিন খেলতে পারব না। এখন আমার একটা সরকারি স্থায়ী চাকরির খুব প্রয়োজন। আমি এখন কলকাতা পুলিসের অধীনে গ্রিন পুলিসের চাকরি করি, যেটা পার্মানেন্ট নয়। একটা স্থায়ী চাকরি পেলে বাবা, মা পরিবারকে নিয়ে বাকি জীবন সুস্থভাবে কাটাতে পারব। আমার ভাইবোনেদের বিয়ে হয়ে গেলেও খেলার জন্য আমি বিয়ে করিনি।
প্রশ্ন: খেলোয়াড় না হলে কী করতেন?
উত্তর: যেহেতু গ্রামের মেয়ে তাই পড়াশুনা শিখলে বাবা-মা হয়তো ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দিতেন। কারও সুপারিশে নয়, নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে এবং সাধনায় আমি এতগুলো ন্যাশনাল খেলেছি। আমি ফুটবল খেলাকে গ্রামের মানুষ খুব ভালো নজরে দেখত না। ২০১৫-তে পায়ে চোটের সাত মাস পর সকলের আশীর্বাদে আবার মাঠে ফিরেছি।
কলকাতা পুলিসের কোচ পুর্ণেন্দু সরকারের অধীনে লিগ খেলেছি। এখন আর পায়ের চোটের কারণে ন্যাশনাল খেলতে যাই না। জানি না কাল কী হবে!
প্রশ্ন: খেলা ছাড়া আপনার অন্য কোনও প্যাশন আছে?
খেলা ছাড়া আমার আর অন্য কোনও প্যাশন নেই।
প্রশ্ন: আপনার ওপর ছবি হচ্ছে শুনে প্রথম কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
গ্রামের অতি দরিদ্র পরিবারের আমি সাধারণ একটি মেয়ে। আমার জীবন নিয়ে ছবি তৈরি হবে শুনে আমি কেঁদে ফেলি, খুব হতবাক হয়ে যাই। জীবনে এত আনন্দ, যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। পরিচালক হৃষিকেশ মণ্ডল এবং মোহন বাগানের গোলকিপার শিল্টনদার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই।
প্রশ্ন: আপনার চরিত্রে অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তী অভিনয় করেছেন। তাঁকে কী আপনি কোনও টিপস দিতে চান যা আপনার চারিত্রকে আরও ভালো করে ফুটিয়ে তুলতে পারবে?
উষসীদি একজন অভিনেত্রী। আমি ওঁর থেকে অনেক ছোট। আমার চরিত্রে উনি অভিনয় করেছেন সেটাই বড় কথা। সে জন্য উষসীদি প্রতিদিন রোদ, ঝড়, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মাঠে প্র্যাকটিস করতে আসতেন। কখনও ভোর পাঁচটা আবার কখনও সকাল ১০ টায় প্র্যাকটিস করতে মাঠে আসতেন। আমাদের খেলোয়াড় দিদিদের সঙ্গে উনি প্র্যাকটিস করতেন। আমিও দিদির সঙ্গে প্র্যাকটিস করেছি। উষসীদিকে শুধু আমার ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা ছাড়া আর কী-ই বা দিতে পারি!
প্রচুর হোমওয়ার্ক করেছি: উষসী চক্রবর্তী
প্রশ্ন: আপনি ফুটবল খেলোয়াড় কুসুমিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একজন খেলোয়াড়ের চরিত্রে অভিনয় করতে আপনাকে কেমন হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে?
উত্তর: আমাকে প্রচুর হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে। শুধু খেলোয়াড় বলে নয়, আমি এবং কুসুমিতা দু’জনেই সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। ফলে অনেকটাই হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে। বেশ খানিকটা ফুটবল আমাকে ছবির প্রয়োজনে শিখতে হয়েছে। আমি ভারতীয় মহিলা ফুটবলের পাইওনিয়র কুন্তলা ঘোষ দস্তিদারের কাছে তিন মাস কোচিং করেছি। এছাড়ও খেলোয়াড়দের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কীরকম হয় এবং ফুটবল খেলোয়াড়রা কীভাবে প্র্যাকটিস করেন ইত্যাদি আমাকে শিখতে হয়েছে। এছাড়াও কুসুমিতা যখন গ্রামে ছিলেন তখন ওঁর কথা বলার ভঙ্গি ও উচ্চারণ আমাকে শিখতে হয়েছে।
প্রশ্ন: একজন মহিলা হিসেবে খেলোয়াড়ের চরিত্রে অভিনয় করতে আপনার কেমন লেগেছে?
উত্তর: খুবই ভালো লেগেছে, কারণ আমি নিজেও খেলাধুলো ভালোবাসি। আমি একজন ফুটবল লাভার। ক্রিকেট আমি অতটা দেখি না। ক্লাব ফুটবল হোক বা ওয়ার্ল্ড কাপ, আমি ফুটবলের ভক্ত। আমি নিজেও জিমন্যাস্টিক, ওয়েট লিফটিং করি। এই ছবি করতে গিয়ে ফুটবল খেলা শিখেছি। এই জার্নিটা আমার কাছে খুবই উপভোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: অন্য কোনও মহিলার চরিত্রে অভিনয় করতে চান?
উত্তর: চাই তো নিশ্চয়ই। কিন্তু এই মুহূর্তে বিশেষ কোনও চরিত্রের নাম মনে পড়ছে না।
প্রশ্ন: একুশ শতকে দাঁড়িয়ে সমাজে মেয়েরা অবস্থানগতভাবে কতটা উন্নত বলে আপনার মনে হয়?
উত্তর: আগের থেকে নিশ্চয়ই মেয়েদের উন্নতি হয়েছে। তবে আরও অনেকটা পথ চলা বাকি। এখনও মেয়েদের গুণের তুলনায় রূপের বিচার করা হয়। আমার মনে হয় মেয়েদের ওপর এখনও অনেক বাধা নিষেধ রয়েছে যেগুলো কাটিয়ে ওঠা দরকার।