শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
উত্তর—সাধুসঙ্গ করতে করতে ভগবানে মতিগতি হবে। সাধুদের কাছে শুধু আনাগোনা করলেই হয় না। তাঁদের জীবন দেখে, তাঁদের উপদেশ শুনে, তদনুরূপ জীবন গড়তে হয়। ব্রহ্মচর্য ও সাধন-ভজন না থাকলে সাধুদের ভাব, তাঁদের উপদেশ কিছুই ধারণা হয় না; শাস্ত্রাদি পাঠ করে তার ঠিক ঠিক অর্থও বোঝা যায় না। ‘কথামৃতাদি’ বই খুব পড়বে এবং ধারণা করতে চেষ্টা করবে। যত পড়বে তত উহার নূতন নূতন অর্থ পাবে। সাধক ভগবানকে শুনে একরূপ বোঝে, সাধনা করে অন্যরূপ বোঝে, আবার সিদ্ধ হয়ে আর একরূপ বোঝে।
তাঁকে লাভ করতে হলে, তাঁর দর্শন পেতে হলে, খুব সাধন-ভজন চাই। সরল ব্যাকুল প্রাণে তাঁকে ডাকতে হবে, তাঁর জন্য সব ছাড়তে হবে। কামিনী-কাঞ্চন ও মানযশের আকাঙ্ক্ষা এতটুকু থাকলেও হবে না। নাগ মহাশয়, বলতেন, ‘‘নোঙর ফেলে দাঁড় টানলে কি হবে?’’ তাঁর আর একটি কথা—‘‘প্রতিষ্ঠা লাভ করা সোজা কিন্তু ত্যাগ করা কঠিন। যে ত্যাগ করতে পারে সে প্রকৃত সাধু।’’ এমন দুর্লভ মানুষ-জন্ম পেয়ে ভগবানলাভের চেষ্টা না করলে বৃথাই জন্ম। শঙ্করাচার্য বলেছেন—
‘‘মনুষ্যত্বং মুমুক্ষুত্বং মহাপুরুষসংশ্রয়।’’
—মহাপুরুষ-সংশ্রয় অতি ভাগ্যবানেরই ঘটে।
প্রশ্ন—মহারাজ, অনেকের বিশ্বাস সাধুদের কাছে গেলেই যথেষ্ট, আর কিছু শুনবার বা করবার দরকার হয় না।
উত্তর—ও কথা শোন কেন? সাধুদের কাছে শুধু গেলেই হয় না। সরল প্রাণে তাঁদের নিকট প্রশ্ন করে মনের সন্দেহ ভঞ্জন করতে হবে, তাঁদের কার্য পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং তাঁদের উপদেশ শুনে তদনুরূপ জীবন গঠন করতে হবে। নিজে কিছু না করে শুধু সাধুদের কাছে গেলেই হবে, ও সব ফাঁকির কথা। তবে সাধুসঙ্গ বিশেষ দরকার। তাঁদের দেখলে, তাঁদের কথা শুনলে, মনে ধর্মভাব ও সদ্ভাব জেগে ওঠে এবং সংশয় সব দূর হয়ে যায়। তাঁদের পবিত্র জীবন, ভাবময় জীবন দেখে মন যতটা Impressed (প্রভাবিত) হয়, শত বই পড়লেও তা হয় না। অধর সেন প্রায়ই একজন স্কুল সব-ইনস্পেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুরের কাছে আসতেন। সেই সঙ্গীটির প্রায়ই ভাব হতো। একদিন ঠাকুরের নিকট আসার একটু পরেই ঠাকুর সমাধিস্থ হন। তাঁর মুখে এমন হাসি, যেন আনন্দ আর ধরে না। তখন অধরবাবু সেই সঙ্গীটিকে বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের ভাব দেখে, ভাবের উপর আমার একটা ঘৃণা হয়েছিল। কেন না তোমাদের ভাব দেখে বোধ হয় যেন ভিতরে কত যন্ত্রণা। ভগবানের নামে কি যন্ত্রণা থাকে? এর ভিতরে আনন্দ দেখে আমার চোখ ফুটল। এর ভাবও তোমাদেরই মতো দেখলে এখানে আর আসা হতো না।’’ ঠাকুরের কাছে না এলে, তাঁর এই ‘ভাব’ না দেখলে, অধরবাবুর মনের সংশয় কখনো যেত না। এই হলো সাধুসঙ্গের ফল। কিন্তু বস্তুলাভ করতে হলে খুব খাটতে হবে—খুব সাধন-ভজন করতে হবে। বুঝতে পারলে?
প্রশ্ন—মহারাজ, সংসারে কি রকমে থাকতে হবে? নিষ্কামভাবে থাকাই তো উচিত?
উত্তর—কি জান, নিষ্কাম-টিষ্কাম, ও খুব উঁচু কথা। সংসারে থেকে ওসব হয় না। লোকে যতই কেন ভাবুক না যে আমি নিষ্কামভাবে কাজ করছি, কিন্তু বাস্তবিক খতিয়ে দেখা যায় যে কোন না কোন কামনার তাড়নায় কাজ করছি। তা হলেই হলো যে নিষ্কাম কর্ম হয় না। তবে সংসারে কাজ করতে করতে তাঁর নিকট প্রার্থনা করতে হয়—‘‘প্রভু, আমার কাজ কমিয়ে দাও।’’
প্রশ্ন—আপনি সেদিন বলেছিলেন যে হাঁক পাকানিতে কিছু হয় না।—সময় না হলে কিছুতেই কিছু হবে না। তবে কি ভগবানলাভের জন্য ব্যাকুলতা ছেড়ে দিতে হবে?
উত্তর—ও হয়তো অন্য প্রসঙ্গে বলেছিলুম। হাঁকপাকানি, মানে, দুই-একদিন Emotion-এর (ভাবপ্রবণতার) বশে ছটফটানি, কান্নাকাটি ভিতরের ভাবের বহির্বিকাশ।