শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
জাহানাবাদের লোকসংস্কৃতির পরিমণ্ডলে কেটেছিল শ্রীরাম-কৃষ্ণের বাল্য ও কৈশোর। পল্লীবাংলার স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশে সদানন্দ বালক তাঁর সহজাত শিল্পবোধকে বিকাশ করতে পেরেছিলেন। ঐ অঞ্চলের রামযাত্রা, কৃষ্ণযাত্রা, রামরসায়ন, চণ্ডীর গান, হরিকথা ইত্যাদি ছাড়াও গ্রামের তিনটি যাত্রার দল, বাউল ও কবি বালকশিল্পীকে স্থানীয় লোকসংস্কৃতির রসাস্বাদন করতে সাহায্য করেছিল। তাঁর খেলাধুলার সাথী অধিকাংশই ছিল যুগী, কামার, জেলে, মালা পরিবারের। তাঁর অকপট ভালবাসায় উচ্চাবচ সকল জাতের ও বয়সের মানুষ তাঁর নিকটজন হয়েছিল। আবাল্য বিভিন্ন-শ্রেণীর মানুষের সাহচর্যে তিনি সহজেই গণজীবনের অন্দরমহলে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। সাহিত্যিক রোমাঁ রোলাঁর ভাবনার সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয় প্রোটিয়াসের মতো শ্রীরামকৃষ্ণের আত্মা যখন যা দেখত বা কল্পনা করত তা মুহূর্তে নিজের মধ্যে রূপায়িত হতো। পরিণামে তিনি আশৈশব বিশ্বের সাজানো বাগিচার বিভিন্ন অংশে বিচরণ করতে ও মানুষের অন্তরে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়েছিলেন, বিশ্বের সকল বস্তুকে আপনার করে নিতে পেরেছিলেন। দশ-এগার বছরের সময় তিনি অনুভব করেছিলেন জগন্মাতার আবির্ভাব। সেদিন থেকে আরেকরকম হয়ে গেলেন। নিজের আর একজনকে দেখতে থাকলেন। এভাবে বালকের অধ্যাত্মজীবনের পুষ্টি হতে থাকে, এবং তার অঙ্গরূপে সঙ্গীত চিত্র নৃত্যনাট্যের মধ্যে দিয়ে তাঁর শিল্পচেতনা বিকশিত হয়ে উঠতে থাকে। আঙ্গিক ভাবসম্পদ, গভীরতা ও কলাসৌন্দর্যের সমাবেশে তাঁর জীবনশিল্পখানি ক্রমে সুষমামণ্ডিত হয়ে ওঠে। তাঁর বাল্যজীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে কিছু স্বকীয়তাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পাঠশালায় পুঁথিপাতার পাঠের চাইতে তাঁর বেশি আদরণীয় ছিল যাত্রা, গান, নাচ ইত্যাদির অনুশীলন। পাঠশালায় গুরুমহাশয়ের আদেশে শিশুশিল্পী গদাধর।
আপনি করেন গান মুখে বাদ্য বাজে।
দুই হাতে দেন তাল পদদ্বয় নাচে।।
গীতবাদ্য-নৃত্য তাঁর অতি পরিপাটি।
মাঝে মাঝে সং দেওয়া কিছু নাহি ত্রুটি।।
পাঠশালা হৈল ঠিক রঙ্গশালা মত।
নিত্য প্রায় গদায়ের যাত্রা তথা হ’ত।।
কিশোর গদাধর লোকালয়ের ভিড় এড়িয়ে সমবয়সীদের সঙ্গে মিলিত হতেন গোঠে, মানিকরাজার আমবাগানে। সেখানে সাথীদের নিয়ে কিশোরশিল্পী মাথুর গান করতেন।
অতি-পুলকিত অঙ্গ গদাই আনন্দে।
কাহারে করেন সাথী কৈলা কারে বৃন্দে।।
আপনি হৈলা নিজে রাই-কমলিনী।
বিদগ্ধ বিরহগান ধরিল তখনি।।
তাঁর গ্রামীণ জীবনের স্মৃতিচয়ন করে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘‘ওদেশে ছেলেবেলায় আমায় পুরুষ মেয়ে সকলে ভালবাসত। আমার গান শুনত। আবার লোকেদের নকল করতে পারতুম, সেইসব দেখত ও শুনত। ... চিত্র বেশ আঁকতে পারতুম; আর ছোট ছোট ঠাকুর বেশ গড়তে পারতুম। ... কোনখানে রামায়ণ কি ভাগবত পাঠ হচ্ছে, তা বসে বসে শুনতুম। ... তাদের কথা, সুর নকল করতুম। ... আমি এসব গান ছেলেবেলায় খুব গাইতাম। এক এক যাত্রায় সমস্ত পালা গেয়ে দিতে পারতাম। কেউ কেউ বলত আমি কালীয়দমন যাত্রার দলে ছিলাম।’’