শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
একটার অঙ্গ পড়ে গেলে, সবল থাকলেও ঐ দেহ নিয়ে কোন বড় কাজ আর হবে না— এ নিশ্চয় জানবি।... আমি এত তপস্যা করে এই সার বুঝেছি যে, জীবে জীবে তিনি অধিষ্ঠান হয়ে আছেন; তা ছাড়া ঈশ্বর-ফিশ্বর কিছুই আর নেই।—‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’।
আমাদের এই দেশে—বেদান্তের এই জন্মভূমিতে সাধারণ লোককে বহু শতাব্দী যাবৎ এইরুপ মায়াচক্রে ফেলিয়া ভ্রমণ হীনভাবাপন্ন করিয়া ফেলা হইয়াছে। তাহাদের স্পর্শে অশুচি, তাহাদের সঙ্গে বসিলে অশুচি! তাহাদিগকে বলা হইতেছে, ‘নৈরাশ্যের অন্ধকারে তোদের জন্ম—থাক চিরকাল এই নৈরাশ্যের অন্ধকারে।’ ফল এই হইয়াছে যে, সাধারণ লোক ক্রমশঃ ডুবিতেছে, গভীর হইতে গভীরতর অন্ধকারে ডুবিতেছে, মনুষ্যজাতি যতদূর নিকৃষ্ট অবস্থায় পৌঁছিতে পারে, অবশেষে ততদূর পৌঁছিয়াছে। কারণ এমন দেশ আর কোথায় আছে, যেখানে মানুষকে গো-মহিষাদির সঙ্গে একত্র বাস করিতে হয়? আর ইহার জন্য অপর কাহারও ঘাড়ে দোষ চাপাইও না—অজ্ঞ ব্যক্তিরা যে ভুল করিয়া থাকে, তোমরা সেই ভ্রমে পড়িও না। ফলও হাতে হাতে দেখিতেছ, তাহার কারণও এইখানে বর্তমান। বাস্তবিক দোষ আমাদেরই। সাহস করিয়া দাঁড়াও, নিজেদের ঘাড়েই সব দোষ লও, অন্যের স্কন্ধে দোষারোপ করিতে যাইও না, তোমরা যে-সকল কষ্ট ভোগ করিতেছ, সেগুলির জন্য তোমরাই দায়ী।
‘ছুঁয়ো না, ছুঁয়ো না’ করে ছুঁৎমার্গীর দল দেশটাকে ঝালাপালা করেছে। তাও ভালমন্দ লোকের বিচার নেই; গলায় একগাছা সুতো থাকলেই হলো, তার হাতে অন্ন খেতে ছুঁৎমার্গীদের আর আপত্তি নেই। ...তোদের যত কিছু ধর্ম এখন দাঁড়িয়েছে গিয়ে ভাতের হাঁড়ির মধ্যে! অপর জাতির ছোঁয়া ভাতটা না খেলেই যেন ভগবান-লাভ হয়ে গেল! শাস্ত্রের মহান সত্যসকল ছেড়ে কেবল খোসা নিয়েই মারামারি চলছে। ...আমার কথা হচ্ছে তুই বামুন, অপর জাতের অন্ন নাই খেলি, কিন্তু তুই সব বামুনের অন্ন কেন খাবিনি। তোরা রাঢ়ীশ্রেণী বলে বারেন্দ্র বামুনের অন্ন খেতে আপত্তি হবে কেন? আর বারেন্দ্র বামুনই বা তোদের অন্ন খাবে না কেন? মারাঠী, তেলেঙ্গী বা কনোজী বামুনই বা তোদের অন্ন খাবে না কেন? কলকাতার জাতিবিচারটা আরও কিছু মজার। দেখা যায় অনেক বামুন-কায়েতই হোটেলে ভাত মারছেন; তাঁরাই আবার মুখ পুঁছে এসে সমাজের নেতা হচ্ছেন; তাঁরাই অন্যের জন্য জাত-বিচার ও অন্নবিচারের আইন করছেন! বলি—ঐসব কপটীদের আইনমত কি সমাজকে চলতে হবে? ওদের কথা ফেলে দিয়ে সনাতন ঋষিদের শাসন চালাতে হবে, তবেই দেশের কল্যাণ।
ধর্ম কি আর ভারতে আছে দাদা! জ্ঞানমার্গ, ভক্তিমার্গ, যোগমার্গ সব পলায়ন, এখন আছে কেবল ছুঁৎমার্গ— আমায় ছুঁয়ো না, আমায় ছুঁয়ো না। দুনিয়া অপবিত্র, আমি পবিত্র। সহজ ব্রহ্মজ্ঞান! ভাল মোর বাপ!! হে ভগবান! এখন ব্রহ্ম হৃদয়কন্দরেও নাই, গোলকেও নাই, সর্বভূতেও নাই— এখন ভাতের হাঁড়িতে। পূর্বে মহতের লক্ষণ ছিল ‘ত্রিভুবনমুপকার শ্রেণীভিঃ প্রীয়মানঃ’, এখন হচ্ছে আমি পবিত্র আর দুনিয়া অপবিত্র— লাও রূপেয়া, ধরো হামারা পায়েরকা নিচে।