শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
সাত্ত্বিকী রাজসী চৈব তামসী চেতি তাং শৃণু।।
সত্ত্বানুরূপা সর্বস্য শ্রদ্ধা ভবতি ভারত।
শ্রদ্ধাময়োঽয়ং পুরুষো যো যচ্ছ্রদ্ধঃ স এব সঃ।।’’
শ্রীঠাকুর সত্যানন্দ বলেছেন—‘‘প্রকৃতির তিনটি গুণ—সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ। সৃষ্টি এই তিনগুণের বৈষম্যের ফল। মানুষের মধ্যে এই তিনটি গুণ খেলা করছে। কারও মধ্যে সত্ত্বগুণের, কারো মধ্যে সত্ত্বগুণের, কারো মধ্যে রজোগুণের, কারো বা ভেতরে তমোগুণের প্রাধান্য। এই গুণের প্রাধান্য অনুযায়ী শ্রদ্ধাও তদনুরূপ হয়ে থাকে। শ্রদ্ধা অর্থাৎ আস্তিক্য বুদ্ধি। যে মানুষের ভেতরে যে গুণের প্রকাশ বা প্রভাব বেশী, তার কাম্য, ইষ্টবস্তু, ধ্যেয়বস্তুও তেমনি হয়ে থাকে। তার মানেই হচ্ছে তার আস্তিক্য বুদ্ধি বা শ্রদ্ধা তেমনি হয়ে থাকে।’’
‘‘যে লোকের পূর্ব পূর্ব জন্মের সংস্কার যেরূপ ও যে পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে সে থাকে আর যে বংশে সে জন্মেছে সেই বংশের ধারা, এগুলির সব কয়টির ওপর নির্ভর ক’রে গড়ে ওঠে স্বভাব আর সেই স্বভাব অনুযায়ী তার ভগবানে শ্রদ্ধাও বিভিন্ন রকমের হয়। সত্ত্বগুনের আবার বিশুদ্ধ সত্ত্ব, রজোমিশ্রিত সত্ত্ব আর তমোমিশ্রিত সত্ত্ব হয়। কাজেই সত্ত্বগুণ-জাত শ্রদ্ধাও আবার মিশ্রণ অনুসারে বিভিন্ন রূপ হয়ে থাকে।’’
‘‘মানুষের শ্রদ্ধা তার নিজ স্বভাবকে অনুসরণ ক’রে বৃদ্ধি লাভ করে। আবার সেই শ্রদ্ধাই তার স্বভাবকে আরও দৃঢ়তর ক’রে তোলে। স্বভাব গড়ে তোলে শ্রদ্ধাকে, শ্রদ্ধা গড়ে তোলে স্বভাবকে বা তাকে প্রেরণা দেয়। পরস্পর interaction চলতে থাকে।’’
গীতার ১৭/১৭ শ্লোকে ‘শ্রদ্ধয়া পরয়া, তপ্তং’ ইত্যাদির ব্যাখ্যা মুখে শ্রীঠাকুর বললেন—‘‘শ্রদ্ধা অর্থে আদৌ বিশ্বাস বা belief in existence। গীতায় কায়, মন ও বাক্য এই তিন রকম তপস্যার কথাই বললেন। শুধু মানসিক অথবা শুধু বাচনিক অথবা শুধু কায়িক তপস্যা করলে চলবে না। এটিতে বোঝা যাচ্ছে যে, কথা-বার্তা, স্মরণ-মনন, চলা ফেরা, কাজ কর্ম সবের মধ্যেই নিষ্কাম তপস্যা রাখতে হবে। আদতে চাই শ্রদ্ধা। অনুরূপভাবে আমরা পাশ্চাত্ত্য দর্শনে, মনোবিজ্ঞানে, সবের মধ্যে পাই belief বা বিশ্বাসের কথা। উক্ত ত্রিবিধ তপস্যা যে সাধক পরম শ্রদ্ধা সহকারে করার চেষ্টা করে, সেই সাধকের উদ্দেশ্য যদি হয় ভগবৎপ্রীতি বা আত্মজ্ঞান লাভ ও কোনও রকম জাগতিক আকাঙ্ক্ষা তাতে যদি না থাকে, তাহলে সেটি গীতামতে সাত্ত্বিক তপস্যা বলে বর্ণিত হবে। এই তপস্যা ঠিক ঠিক করা কঠিন হলেও আমাদের চেষ্টা ও প্রার্থনা রেখে যেতে হবে। ‘সফল হইবে হরি করুণা বলে’।’’
অশ্রদ্ধা সহকারে বা শ্রদ্ধাবিরহিত ভাবে যা কিছু করা হয় তাকে গীতায় ‘অসৎ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। শ্রদ্ধাবিহীন হয়ে যা করা হয় তা ইহলোক ও পরলোকে নিষ্ফল হয়।
উপনিষদেও বলা হয়েছে, এই শরীরে ষোড়শকলা যুক্ত পুরুষ রয়েছেন, তাঁর প্রথম কলাই হ’ল শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা দিয়েই জীবনের সুরু। শ্রদ্ধার সঙ্গে সব কাজ করার কথা তাই বেদ উপনিষদের উপদেশ। বলছেন, ‘শ্রদ্ধয়া দেয়ম্ অশ্রদ্ধয়াহদেয়ম্’। জীবনের প্রতি পদক্ষেপে হওয়া চাই শ্রদ্ধার বিনম্র প্রকাশ। কি জাগতিক জীবনে, কি আধ্যাত্মিক জীবনে সব কিছুর মূলে রয়েছে শ্রদ্ধা।