শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
শিষ্য: তবে কি করিব?
স্বামীজী: কেন? যদি তোর সংসারই করতে হয়, যদি অর্থ-উপায়ের স্পৃহাই থাকে, তবে যা—আমেরিকায় চলে যা। আমি ব্যবসায়ের বুদ্ধি দেব। দেখবি, পাঁচ বছরে কত টাকা এনে ফেলতে পারবি!
শিষ্য: কি ব্যবসায় করিব? টাকাই বা কোথা হইতে পাইব?
স্বামীজী: পাগলের মতো কি বকছিস? ভেতরে অদম্য শক্তি রয়েছে। শুধু ‘আমি কিছু নই’ ভেবে ভেবে বীর্যহীন হয়ে পড়েছিস। তুই কেন?—সব জাতটা তাই হয়ে পড়েছে। একবার বেড়িয়ে আয়—দেখবি ভারতের দেশে লোকের জীবন-প্রবাহ কেমন তর্ তর্ করে প্রবল বেগে বয়ে যাচ্ছে। আর তোরা কি করছিস? এত বিদ্যা শিখে পরের দোরে ভিখারির মতো ‘চাকরি দাও, চাকরি দাও’ বলে চেঁচাচ্ছিস! জুতো খেয়ে খেয়ে—দাসত্ব করে করে তোরা কি আর মানুষ আছিস! তোদের মূল্য এক কাণাকড়িও নয়। এমন সজলা-সফলা দেশ, যেখানে প্রকৃতি অন্য সকল দেশের চেয়ে কোটিগুণে ধনধান্য প্রসব করছেন, সেখানে দেহধারণ করে তোদের পেটে অন্ন নেই—পিঠে কাপড় নেই! যে দেশের ধন-ধান্য পৃথিবীর সকল দেশে civilisation (সভ্যতা) বিস্তার করেছে, সেই অন্নপূর্ণার দেশে তোদের এমন দুর্দশা? ঘৃণিত কুক্কুর অপেক্ষাও যে তোদের দুর্দশা হয়েছে! তোরা আবার তোদের বেদবেদান্তের বড়াই করিস! যে-জাত সামান্য অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করতে পারে না—পরের মুখাপেক্ষী হয়ে জীবনধারণ করে, সে-জাতের আবার বড়াই! ধর্মকর্ম এখন গঙ্গায় ভাসিয়ে আগে জীবন-সংগ্রামে অগ্রসর হ। ভারতে কত জিনিস জন্মায়। বিদেশী লোক সেই raw material (কাঁচামাল) দিয়ে তার সাহায্যে সোনা ফলাচ্ছে। আর তোরা ভারবাহী গর্দভের মতো তাদের মাল টেনে মরছিস। ভারতে যে-সব পণ্য উৎপন্ন হয়, দেশ-বিদেশের লোক তাই নিয়ে তার ওপর বুদ্ধি খরচ করে, নানা জিনিস তৈয়ের করে বড় হয়ে গেল; আর তোরা তোদের বুদ্ধিটাকে সিন্দুকে পুরে রেখে ঘরের ধন পরকে বিলিয়ে ‘হা অন্ন, হা অন্ন’ করে বেড়াচ্ছিস!
শিষ্য: কি উপায়ে অন্ন সংস্থান হইতে পারে, মহাশয়?
স্বামীজী: উপায় তোদেরই হাতে রয়েছে। চোখে কাপড় বেঁধে বলছিস, ‘আমি অন্ধ, কিছুই দেখতে পাই না।’ চোখের বাঁধন ছিঁড়ে ফেল, দেখবি, মধ্যাহ্ন-সূর্যের কিরণে জগৎ আলো হয়ে রয়েছে। টাকা না জোটে তো জাহাজের খালাসী হয়ে বিদেশে চলে যা। দিশি কাপড়, গামছা, কুলো, ঝাঁটা মাথায় করে আমেরিকা-ইওরোপে পথে পথে ফিরি করগে। দেখবি—ভারত-জাত জিনিসের এখনো কত কদর! আমেরিকায় দেখলুম—হুগলী জেলার কতকগুলি মুসলমান ঐরূপে ফিরি করে ধনবান হয়ে পড়েছে। তাদের চেয়েও কি তোদের বিদ্যাবুদ্ধি কম? এই দেখ না—এদেশে যে বেনারসী শাড়ী হয়, এমন উৎকৃষ্ট কাপড় পৃথিবীতে আর কোথাও জন্মায় না। এই কাপড় নিয়ে আমেরিকায় চলে যা। সে-দেশে ঐ কাপড়ে গাউন তৈরি করে বিক্রি করতে লেগে যা, দেখবি, কত টাকা আসে।