শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
পরম পিতা বা পরম মাতা দেখছেন যে তাঁর সন্তানেরা খেলায় রত। যখন কোন সন্তান নিজের খেলনায় ও শিশুসুলভ কাজে অবসন্ন হয়ে পড়ে তখন ঈশ্বর সত্যিই তার কাছে আসেন এবং মায়াময় খেলার জগৎ থেকে তাকে উদ্ধার করেন। শিশুরা সন্দেশ-মিষ্টি নিয়ে, পুতুল নিয়ে, খেলার সৈনিক নিয়ে, খেলার বাড়ি, খেলার গাড়ি নিয়ে খেলাধুলা করে। যতক্ষণ তারা এ-সকলে ক্লান্ত না হচ্ছে বা বিরক্তিতে ঐ সকল খেলা থেকে সরে না আসছে, ততক্ষণ ঈশ্বরের কিছু করার থাকে না। ঈশ্বর এটাকে একটি বিরাট কৌতুক বলে মনে করেন। তারপর একদিন শিশুটি একটু বড় হয় এবং বিলাপ করে বলে, ‘‘ এ জীবন নিয়ে আমি কি করলাম?’’ আর ঈশ্বর তখন বলেন, ‘‘ঠিক বাছা, কি করলে? কে তোমাকে এসব করতে বলেছিল? কে তোমাকে মূর্খের মতো অনিশ্চিতকাল পর্যন্ত এ খেলায় রত থাকতে বলেছিল? কে বলেছিল তোমাকে এ খেলায় আঘাত পেতে ও জড়িয়ে পড়তে? কে এসব করল?’’ কিন্তু তার পর প্রায়ই দেখা যায় যে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট বিলম্ব হয়ে গেছে এবং শিশুটি তার বিধ্বস্ত জীবনের ধ্বংসাবশেষের ওপর বসে বিলাপ করছে।
আমাদের সকলের বিবেকের ও শ্রেয়ের পথ ধরে চলার সুযোগ আছে। কিন্তু আমরা আমাদের বিশেষ বিশেষ খেলনা নিয়ে এমন জড়িয়ে থাকি যে ওদের হাতছাড়া করতে চাই না। তাই আমাদের দুঃখ ভোগ করতে হয় এবং এ দুঃখ ভোগ করতে হবে যতদিন না আমাদের জীবন বারবার অসংখ্যভাবে যে মহান শিক্ষা দিয়ে চলেছে তা শিখব আর প্রাজ্ঞের মতো কাজ করব। যেমন অধিকাংশ মানুষ জাগতিক আশা ও আদর্শ পূরণের জন্য চেষ্টা করে থাকে, আমাদেরও তেমনি আধ্যাত্মিক জীবন ও জ্ঞানের জন্য চেষ্টা করা প্রয়োজন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এই চেষ্টা করবে না। এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আমাদের এই পছন্দের উপর, যা নির্ণয় করবে আমরা পার্থিব জীবন বেছে নেব না আধ্যাত্মিক জীবন, অথবা আমরা দাসত্বের ও ভীতির জীবন যাপন করব, না মুক্তির ও ভয়শূন্যতার জীবন।
আমাদের চেষ্টা করতে হবে এমন একটা কিছু পেতে যা শ্রেয়, যার পরিবর্তন ও ক্ষয় হয় না। কিন্তু প্রায়ই আমরা স্বেচ্ছায় বিবেচনা করে অবিদ্যার পথই বেছে নি। কারণ আমরা দেহজ ও আবেগজনিত ভোগের মায়ামূর্তিগুলিকেই জড়িয়ে থাকি। যদিও এগুলিকে আমাদের একদিন না একদিন ত্যাগ করতেই হবে। একদিন আমাদের এসব ছেড়ে দিতেই হবে, তা যদি স্বেচ্ছায় না করি তবে ঐ খেলনাগুলি আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে। সে হবে বড় দুঃখের এবং বহু ক্ষেত্রে হৃদয়বিদারক। অধিকাংশ মানুষ শুধু এভাবেই শিক্ষালাভ করে, যদিও এ বেশ বেদনাদায়ক ও সাধারণভাবে বহু জন্ম-সাপেক্ষ। আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনযাপনের চেষ্টা করতেই হবে। জ্ঞাতসারে, সচেতনভাবে বিচার করে, জীবনোৎসর্গের ভাবে উদ্দেশ্যের প্রতি অনন্যমনা হয়। আমাদের এই ইচ্ছাশক্তি আমাদের পছন্দমতো জীবনকে উচ্চতর স্তরে নিয়ে যেতে পারে আবার হীনতর স্তরেও পাঠাতে পারে। যদি উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য আমরা নিজের মধ্যে গভীর উৎসাহ উদ্দীপনা আনতে পারি, তখনই কেবল লক্ষ্যে পৌঁছানর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করা সম্ভব হবে। আধ্যাত্মিক জগতে প্রায়ই বিক্ষিপ্ত মস্তিষ্ক লোক দেখা যায়। তারা কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণে তৎপর না হয়ে, নিজেদের ভাবাবেগ ও উত্তেজনার অসীম সাগরে ভেসে চলতেই পছন্দ করে। কাজেই, তাদের কার্যতঃ কিছুই অগ্রগতি হয় না, ঘোর বিষয়ীদের মতোই অতি নগণ্য কিছু প্রাপ্তি হয়।