শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
মেয়েটি সারাদিন রান্না করে। ছেলেটি শেফ। ঢাকা থেকে কলকাতায় চলে আসে ব্যক্তিগত বিপর্যয় সামলাতে। মেয়েটিরও প্রায় একই হাল। সঙ্গীর অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তব করতে সে লড়ে যাচ্ছে। ছেলেটি অভিজাত হোটেলে কাজ করে। মেয়েটির সামান্য ক্যাটারিং। তবে দুজনেরই হাতিয়ার এক। চব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়। হাতিয়ার এক হলেও সামাজিক অবস্থানে তারা দুই মেরুর বাসিন্দা। ছেলেটি ফারহাজ চৌধুরী, বাংলাদেশের বিত্তবান মুসলিম সন্তান। মেয়েটি বসুন্ধরা। মধ্যবিত্ত হিন্দু। ছেলেটির চেয়ে বয়সে বড় এবং স্বামীহীনা। তবু নিয়তি তাদের কাছাকাছি নিয়ে এল। এক্ষেত্রে নিয়তি আসলে হাতা-খুন্তি-মশলা এবং মালাইকারি-শুক্তো-তেহরি-মোরগ পোলাও। গল্প এ পর্যন্তই থাক। ছবির অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক! বসুন্ধরার চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর তুলনা নেই। প্রায় মেকআপবিহীন ঋতুপর্ণা প্রমাণ করে দিলেন, এই মুহূর্তে টলিউডে তাঁর উচ্চতায় আর কোনও অভিনেত্রী নেই। তাঁর সংলাপ কম। প্রায় নীরব উপস্থিতিতেই তিনি বসুন্ধরাকে তুলে ধরেছেন। তবে চিত্রনাট্য আর একটু টানটান ও গতিশীল হলে কিন্তু তাঁর চরিত্রটি আর একটু ফুটে উঠতে পারত। বিশেষ করে প্রতিদিন ধূপ জ্বালানোর দৃশ্য নিয়ে পরিচালক যদি আর একটু গভীরে চিন্তা-ভাবনা করতেন তবে তা কিন্তু ‘শোলে’ ছবির জয়া বচ্চনের আলো নেভানোর কাছাকাছি উচ্চতা পেয়ে যেত। আরিফিন শুভ স্বচ্ছন্দ্য ফারহাজের ভূমিকায়। ঋতুপর্ণার বিপরীতে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরে কাজ করেছেন। ‘আহা রে’ ছবির মস্ত পিলার পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। বসুন্ধরার শ্বশুর। এই অস্থির সময়ে দাঁড়িয়েও তিনি নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করেন, ধর্ম সৃষ্টিকর্তার নয়, মানুষের তৈরি। বয়স, শোক, অভাব— কিছুই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারে না। তাই তিনি ম্যাজিক শেখেন। আপাত-কঠোর এই স্নেহশীল বৃদ্ধের চরিত্রে পরান ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনাও করা যায় না। কয়েকটি ছোট চরিত্রে দীপঙ্কর দে, শকুন্তলা বড়ুয়া, অমৃতা চট্টোপাধ্যায় যথাযথ। অভিনেতারা যতই চেষ্টা করুন, ‘আহা রে’ কিন্তু স্বাদ মেটাতে পারল না। প্রথমত, চিত্রনাট্য বড্ড ধীরগতির এবং মাঝে মাঝেই কন্টিনিউটি হারিয়েছে। যেমন, শাহিদা প্যারিস চলে যাওয়ার পর কোনও যোগাযোগ না রেখেই জেনে গেল ফারহাজের কলকাতার আস্তানার ঠিকানা। আবার ফারহাজের মতো তরুণের মায়ের দ্বিতীয় স্বামীকে কেবল মায়ের ‘দ্বিতীয় স্বামী’ বলেই তীব্র ঘৃণা করার বিষয়টিও হাস্যকর। সেই সঙ্গে অন্তত বার পাঁচেক কলকাতা স্কাই লাইন হিসেবে কয়েকটি আকাশচুম্বী বিল্ডিংকে দেখানোর মানে কি বোঝা গেল না। আর শেফ বলেই ফারহাজকে প্রায় প্রতিটি ফ্রেমেই কিছু না খেতে দেখানোর কি খুব দরকার ছিল? ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু যেটা বলার, খুবই সম্ভাবনাময় একটি গল্পকে কেবল চিত্রনাট্যের অবহেলায় মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে দেখা কাম্য ছিল না। কাম্য ছিল না, ছবির শেষে হঠাৎ করে আজগুবি ম্যাজিকের কেরামতি আমদানি করে ছবিটিকে হাস্যকর এবং অযথা দীর্ঘ করে তোলা। ‘আহা রে’-র স্বাদ বিস্বাদ হয়ে গেল কেবল পরিচালকের ঝাল-নুন দেওয়ার পারদর্শিতার অভাবে।
অদিতি বসুরায়