শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
শঙ্করাচার্য বলেছেন—আহার অর্থে ‘ইন্দ্রিয়-বিষয়’, আর শ্রীরামানুজস্বামী আহার অর্থে ‘খাদ্য’ ধরেছেন। আমার মত হচ্ছে— তাঁদের ঐ উভয় মতের সামঞ্জস্য করে নিতে হবে। কেবল দিনরাত খাদ্যাখাদ্যের বাদবিচার করে জীবনটা কাটাতে হবে, না ইন্দ্রিয়সংহম করতে হবে? ইন্দ্রিয়সংযমটাই মুখ্য উদ্দেশ্য বলে ধরতে হবে; আর ঐ ইন্দ্রিয়সংযমের জন্যই ভাল-মন্দ খাদ্যাখাদ্যের অল্পবিস্তর বিচার করতে হবে। শাস্ত্র বলেন, খাদ্য ত্রিবিধ দোষে দুষ্ট ও পরিত্যাজ্য হয়: (১) জাতিদুষ্ট—যেমন পেঁয়াজ, রশুন ইত্যাদি। (২) নিমিত্তদুষ্ট—যেমন ময়রার দোকানের খাবার, দশগণ্ডা মাছি মরে পড়ে আছে, রাস্তার ধুলোই কত উড়ে পড়ছে! (৩) আশ্রয়দুষ্ট—যেমন অসৎ লোকের দ্বারা স্পৃষ্ট অন্নাদি। খাদ্য জাতিদুষ্ট ও নিমিত্তদুষ্ট হয়েছে কিনা, তা সকল সময়েই খুব নজর রাখতে হয়। কিন্তু এদেশে ঐদিকে নজর একেবারেই উঠে গেছে। কেবল শেষোক্ত দোষটি—যা যোগী ভিন্ন অন্য কেউ প্রায় বুঝতেই পারে না, তা নিয়েই যত লাঠালাঠি চলছে।
আমাদের ধর্মটা যে রান্নাঘরে ঢুকিয়া সেখানেই আবদ্ধ থাকিবে—এইরূপ এক আশঙ্কা রহিয়াছে। আমরা এখন বৈদান্তিকও নই, পৌরাণিকও নই, তান্ত্রিকও নই; আমরা এখন কেবল ‘ছুঁৎমার্গী’, আমাদের ধর্ম এখন রান্নাঘরে। ভাতের হাঁড়ি আমাদের ঈশ্বর, আর ধর্মমত— ‘আমায় ছুঁয়ো না, ছুঁয়ো না, আমি মহা পবিত্র!’ যদি আমাদের দেশে আর এক শতাব্দী ধরিয়া এই ভাব চলে, তবে আমাদের প্রত্যেককেই পাগলা-গারদে যাইতে হইবে।
আজকাল এই খাদ্যের বিচার লইয়া ও বর্ণাশ্রম লইয়া খুব রব উঠিয়াছে। আর এই বিষয়টি লইয়া বাঙালীরাই সর্বাপেক্ষা অধিক চিৎকার করিতেছেন। আমি তোমাদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসা করি, তোমরা এই বর্ণাশ্রম সম্বন্ধে কি জান, বল দেখি। এ-দেশে এখন সেই চাতূর্বর্ণ্য কোথায়? আমার কথার উত্তর দাও। আমি চাতুর্বর্ণ্য দেখিতে পাইতেছি না। যেমন কথায় বলে, ‘মাথা নেই, তার মাথা ব্যথা’, এখানে তোমাদের বর্ণাশ্রম ধর্মপ্রচারের চেষ্টাও সেইরূপ। এখানে তো চারি বর্ণ নাই; আমি এখানে কেবল ব্রাহ্মণ ও শূদ্র জাতি দেখিতেছি। যদি ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য জাতি থাকে, তবে তাহারা কোথায়? হিন্দুধর্মের নিয়মানুসারে ব্রাহ্মণগণ কেন তাঁহাদিগকে যজ্ঞোপবীত ধারণ করিয়া বেদপাঠ করিতে আদেশ করেন না? আর যদি এদেশে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য না থাকে, যদি কেবল ব্রাহ্মণ ও শুদ্রই থাকে, তবে শাস্ত্রানুসারে যে-দেশে কেবল শুদ্রের বাদ, এমন দেশে ব্রাহ্মণের বাস করা উচিত নয়। অতএব তল্পিতল্পা বাঁধিয়া এদেশ ছাড়িয়া চলিয়া যাও। যাহারা ম্লেচ্ছখাদ্য আহার করে এবং ম্লেচ্ছরাজ্যে বাস করে, তাহাদের সম্বন্ধে শাস্ত্রে কি বলিয়াছেন, তাহা কি তোমরা জান? তোমরা তো বিগত সহস্র বৎসর যাবৎ ম্লেচ্ছখাদ্য আহার ও ম্লেচ্ছরাজ্যে বাস করিতেছ। ইহার প্রায়শ্চিত্ত তুষানল।